পর্তুগাল তার প্রতিবেশি স্পেনের চেয়ে শান্ত ও শান্তিপূর্ণ দেশ। পর্তুগালে থাকার জন্য পশ্চিম ইউরোপের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় খরচ কম।
১. লিসবন: পৃথিবীর প্রাচীন শহরগুলোর যদি তালিকা করা হয় তবে অবশ্যই লিসবন (Lisbon) শহরটি প্রথম দিকেই থাকবে। মনে করা হয় যে, এথেন্সের পর লিসবন ইউরোপের দ্বিতীয় প্রাচীন রাজধানী। আটলান্টিক মহাসাগর এবং টাগুস নদীর তীরে অবস্থিত লিসবন পর্তুগালের রাজধানী এবং অন্যতম বড় নগরী। প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ শহরটিতে ভ্রমণ করার উদ্দেশ্যে যায়। প্রায় ৫০০ বছরের অধিক সময় মুসলিম শাসকেরা শাসন করায় এখানে মুসলিম স্থাপত্যের দেখাও মিলবে।
পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ লিসবন শহরটি। ৭টি বিশাল পাহাড়, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া লিসবন শহরকে সেরা ১০টি টুরিস্ট ডেসটিনেশনের একটির তকমা দিয়েছে। অনেকে শহরটিকে সেভেন হিল সিটি নামেই ডাকতে পছন্দ করে। সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টি গ্রাসায় অবস্থিত । এখান থেকে ৩৬০ ডিগ্রিতে পুরো লিসবন শহরটি দেখা যায় ।
২. বেলেম টাওয়ার: পর্তুগালের এই গ্রামটির আবহাওয়া, পর্তুগালের অন্যান্য জায়গার তুলনায় একটু ঠাণ্ডা বলে, প্রাচীন সময়ে মুরিশ থেকে শুরু করে, পর্তুগালের রাজপরিবার এবং অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই জায়গায় প্রাসাদ থেকে শুরু করে বিশাল বাড়ি তৈরি করেছিলেন তাই, ছবির মতো সাজানো এই রূপকথার গ্রামটি পর্তুগালের এক অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ লিসবন থেকে ট্রেনে মাত্র ত্রিশ মিনিটেই এই সুন্দর গ্রামে পৌঁছে যাওয়া যায়। সিন্ত্রা গ্রামটি যদিও সবুজের এক চাদর দিয়ে মোড়ানো শান্ত এক গ্রাম, কিন্তু সিন্ত্রা গ্রামের কেন্দ্রে মধ্যযুগীয় ন্যাশনাল প্যালেস ঘিরে টুরিস্টের ভিড় এই গ্রামের জীবন যাপনের এক অঙ্গ বলা যায়।
তাছাড়া, ছোট্ট এই গ্রামেই পর্তুগালের প্রাচীন মুরিশ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে শুরু করে, পর্তুগীজ রাজার অলংকৃত প্রাসাদ, সিন্ত্রা গ্রাম ও একে ঘিরে সবুজ পাহাড় অঞ্চল, সবই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্গত।
বেলেম টাওয়ার তাগুস নদীর তীরে অবস্থিত। টাওয়ারের সম্মুখভাগ তাগুস নদীর দিক মুখ করে তৈরি করা হয়েছে। এটি পর্তুগালের লিসবনে অবস্থিত। অসাধারন নির্মান শৈলির ডিজাইন করেছেন ডিজাইনার ফ্রান্সিসকো ডি আরুদা। টাওয়ার তৈরিতে বেশির ভাগ উপদান চুনা পাথরের। এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৫১৪ সালে এবং সমাপ্তি হয় ১৫১৯ সালে। এই টাওয়ার তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। এই টাওয়ারটি ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল এবং ২০০৭ সালে পর্তুগালের সাতটি ওয়ান্ডার্সের রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিভাবে যাবেন: লিসবনের রসিও থেকে ৭১৪ নাম্বার বাসে করে বেলেম যাওয়া যাবে। ইচ্ছে করলে ট্রামে করে যেতে পারেন।
খরচ: যাতায়ত খরচ বেশি নয়। আসা যাওয়া ৩/৪ ইউরোর মধ্যে হয়ে যাবে। খাবার নিজের চাহিদা মত যা ইচ্ছে খেতে পারেন।
৩. মারিনহার সমুদ্র সৈকত (প্রিয়া দা মারিনহা): সবচেয়ে সুন্দর সমুদ্র সৈকত হিসেবে বিবেচনা করা হয় মারিনহা সমুদ্র সৈকতকে এবং এই সৈকতটি অ্যালগারভ অঞ্চলে আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত, সমুদ্র সৈকতটি একদিকে আটলান্টিকের দুর্দান্ত নীল জলরাশি এবং অন্যদিকে উঁচু পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। ইউরোপীয় গাইড অনুযায়ী মারিনহা সমুদ্র সৈকতটি সেরা ১০ এর মধ্যে অবস্থান করছে।
৪. পোর্তো: পোর্টো পর্তুগালের দ্বিতীয় বড় শহর। এই শহরে অনেক রঙিন ভবন রয়েছে যা পর্যটককে বিমোহিত করবে। এখানে বিখ্যাত একটি রেলস্টেশন সাও বেন্টো রেলওয়ে। দর্শনার্থীরা এই শহরকে অনেক পছন্দ করে থাকে। এই শহরে রয়েছে দৌরো উপত্যকা। এই উপত্যকায় অসংখ্য পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন।
ওবিডোস ক্যাসেল এই এলাকার প্রধান আকর্ষণ, একটি চিত্তাকর্ষক কাঠামো, দুর্গটি একটি ছোট শহর ওবিডোসের একটি পাহাড়ে অবস্থিত, যার ইতিহাস রোমান সময় থেকে শুরু হয়েছে এবং এটি পর্তুগালের আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত। "ওবিডোস" নামটি সম্ভবত ল্যাটিন শব্দ ওপিডাম থেকে এসেছে, যার অর্থ "দুর্গ" বা "শহর-দুর্গ"। ওবিডোস শহরে রয়েছে অসংখ্য সুরক্ষিত দুর্গ। সুদৃশ্যমান ভবনে পরিপূর্ণ এই শহরে রয়েছে অনেক অভিজাত ভবন। পর্তুগালের এই শহরে রয়েছে লিটারেরি ম্যান হোটেল নামে একটি লাইব্রেরি রয়েছে। এই শহর অনেক মানুষের কাছে পছন্দের।
৫. সাও জর্জ দুর্গ: পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল সেন্ট জর্জের দুর্গ। এটি পাহাড়ের একেবারে শীর্ষে আলফামার পুরানো স্হানে অবস্থিত, যেখান থেকে আপনি পর্তুগালের রাজধানীর অবিশ্বাস্য দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। এটি লিসবনের অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য।
৬. মাদাইরা: কাবো গিরাও পর্তুগালের মাদেইরার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ। প্রতিদিন প্রায় ১৮০০ পর্যটক এই স্থানটিতে যান। শিলাটি মাদেইরার দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত এবং এটি ৫৭০ মিটারের বেশি উঁচু এবং এটিকে ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিলা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। মাদেরিয়া একটি দ্বীপ। এখানে রয়েছে পোর্ট সান্তো নামে একটি বন্দর। এছাড়া মাদেরিয়ার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো মিউজিয়াম ফুটবলপ্রেমী পর্যটকদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা। আরও একটি মিউজিয়াম রয়েছে যার নাম মাদেরিয়া ওয়াইন মিউজিয়াম। এসব মিউজিয়ামে মানুষ সকাল-সন্ধ্যা আসেন।
৭. আলগার্ভ: নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু আবহাওয়ার অঞ্চল আলগার্ভ। এই অঞ্চলে একাধিক মনোরম সমুদ্রসৈকত এবং অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসব সমুদ্রসৈকত ও দর্শনীয় স্থানে সবসময় পর্যটকদের ভীড় দেখা যায়।
আলেন্টেজো অঞ্চলটি রয়েছে পর্তুগালের প্রাচীন ইতিহাসসমৃদ্ধ। চ্যাপেলা ডস ওসোস বা চ্যাপেল অব বোনস নামে একটি গীর্জা রয়েছে। ষোড়শ শতাব্দিতে নির্মিত গীর্জাটির দেয়ালে আনুমানিক ৫ হাজার মানুষের স্কেলিটন রয়েছে। এটি রোমান মন্দিরের মতো পবিত্র ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত হয় স্থানীয়দের কাছে।
পাহাড়ঘেঁষা অঞ্চল সেরা ডা এস্ট্রেলা। প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য এই অঞ্চল উপযুক্ত স্থান। শীতকালে এখানে স্কিইং করার সুযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে পর্তুগালের এই অঞ্চল সেরা ৭ বিস্ময়কর স্থানের অন্যতম ছিল। প্রকৃতিই এখানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রকৃতির টানে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
কেএআর