কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত মানেই অনেকের কাছে এক অন্য রকম অনুভূতি। সমুদ্রের লোনা জলে গা ভাসানো,বালিয়াড়িতে দৌড়ঝাঁপ তো আছেই, আরও নানা অনুষঙ্গে ভ্রমণের আনন্দকে রাঙিয়ে তুলতে চান পর্যটকেরা।
বাংলানিউজ- জুন মাস থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা লক্ষ্য করছি, পাশাপাশি সমুদ্র সৈকতের শৃঙ্খলাও কিছুটা ফিরেছে মনে হচ্ছে। প্রথমে এ বিষয়ে জানতে চাই।
মো. রেজাউল করিম- ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন ২০১৫ সাল থেকেই পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিচের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছে। পর্য়টক হয়রানি বন্ধ করাসহ বিচকে পর্যটকদের জন্য শতভাগ নিরাপদ করে তুলতে নানা পরিকল্পনা ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশের। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আগে আমাদের পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি।
আমি ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে প্রায় ৬ বছর কাজ করেছি। এ বছরের এপ্রিলের ২৮ তারিখ আমি কক্সবাজারে যোগদান করি। এর আগে আমি কক্সবাজার জেলা পুলিশেও কাজ করেছি। সুতরাং আমার কিছু পূর্ব অভিজ্ঞতা ও ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহযোগিতায়, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের সকল অফিসার মিলে একটা বড় প্ল্যান করি। প্রথমেই আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করি, তা বিশ্লেষণ করে একটা কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করি। কোন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করব, কীভাবে করব এসব নিয়ে একটা ছক করি। তারপর আমরা একটি একটি সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করি। এখানে বলে রাখা ভালো আমার বস, কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার স্যার সবসময়ই আমাকে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ ও সমর্থন জুগিয়েছেন।
বাংলানিউজ- প্রথমে কোন কাজটি শুরু করলেন?
মো. রেজাউল করিম- প্রথমেই প্রায় সময় ট্যুরিস্টদের কাছ থেকে অভিযোগ আসে, ফটোগ্রাফারদের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা প্রথমেই এই হয়রানি বন্ধের উদ্যোগ নিলাম। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ দ্বারা ট্যুরিস্ট হয়রানি বন্ধ করা। এরপর শুরু করলাম কিটকটের আশপাশ হকার, ভিক্ষুক , ম্যাসেজ বয় মুক্ত করা। তারপর আমরা দেখলাম কিটকটের ঘনত্বের কারণে বিচের সৌন্দর্য দেখা যায় না, পর্যটকদের প্রাইভেসি থাকে না, সেটাতেও হাত দিলাম। আমরা উদ্যোগ নিলাম প্রতি পাঁচ ফুট দূরত্বে কিটকট বসানোর। এরপর ফুটবল খেলা বন্ধ করা, ঘোড়া কিটকটের সামনে না নামা, ইত্যাদি সমস্যাগুলোর সঠিক সমাধান করার সঙ্গে সঙ্গে বিচ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখায় এখন অনেকটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে।
বাংলানিউজ-সৈকতে ফটোগ্রাফারদের পর্যটক হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এটি কি আসলেই বন্ধ হয়েছে?
মো. রেজাউল করিম-আপনারা নিজেরাও এসে দেখে যেতে পারেন। আমার বিশ্বাস ৮০ ভাগ বন্ধ হয়েছে। বাকিটাও হবে। কাজটির শুরু কীভাবে এটি খুব ইন্টারেস্টিং বিষয়, সম্প্রতি আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা অভিযোগ পাই, একটি দম্পতিকে একজন ফটোগ্রাফার ব্ল্যাকমেইল করে তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একজন ফটোগ্রাফারকে আটক করলাম, তাকে বিচারের জন্য কোর্টে পাঠালাম এবং কোর্ট তাকে ৪ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিলেন। এটা সকল মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করল। ফলে ফটোগ্রাফারদের মাঝে একটা ভয় ঢুকে গেল যে এতদিন অপরাধ করে পার পেয়ে গেলেও এখন আর পার পাওয়া যাবে না। সুতরাং তারা অনেকটা শুধরে গেল। এরপর আমরা ফটোগ্রাফারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলাম, সেই প্রশিক্ষণে আমরা তাদের আচরণবিধি ঠিক করে দিলাম এবং ট্যুরিস্ট হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দিলাম। তাতে অনেকটা কাজ হয়েছে। এখন আমরা মাঝেমধ্যে ট্যুরিস্টদের জিজ্ঞেস করি ছবি তুলতে গিয়ে কোনো সমস্যায় পড়েন কিনা। তাদের ফিডব্যাক অনেক ভালো পাচ্ছি। এছাড়া আমরা কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স ছাড়া কাউকে ফটোগ্রাফারের কাজ করতে দিচ্ছি না। মূলত এসব অবৈধ ফটোগ্রাফারদের দ্বারাই পর্যটকরা বেশি হয়রানির শিকার হতেন। এখন আর আমরা এমন অভিযোগ পাই না।
বাংলানিউজ-শুরু তো করেছেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কী ভাবছেন?
মো. রেজাউল করিম-আসলে আমরা প্রত্যেকটা সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবছি। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ফটোগ্রাফারদের একটা ডাটাবেইজ করছি। যারা প্রকৃতপক্ষে ভালো ফটোগ্রাফার তাদের ছবিসহ পর্যটক বান্ধব ফটোগ্রাফার আইডি কার্ড দেব এবং তাদের ডাটাবেইজ একটি ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত থাকবে, যেকেউ যেকোনো জায়গা থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কোনো পর্যটক চাইলে আগে থেকেই ফটোগ্রাফারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অগ্রীম বুকিং দিয়ে রাখতে পারবেন। এতে সেবা পেতে আরো সহজ হবে। পাশাপাশি হয়রানিও বন্ধ হবে।
বাংলানিউজ- আশা করছি,আপনাদের এ উদ্যোগ চলমান থাকবে।
মো. রেজাউল করিম-সৈকতের ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আপনাদের সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। আশা করি পাশে থাকবেন। আপনাকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২২
এসবি/এসআইএস