ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পর্যটকদের পকেট কাটছেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
পর্যটকদের পকেট কাটছেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা! বাড়তি টাকা দিতে কিনতে হচ্ছে এসব মাছ। ছবি: বাংলানিউজ

কুয়াকাটা থেকে ফিরে: ছুটির দিনে পর্যটকদের ভিড়কে পুঁজি করে হোটেলগুলোতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। খালি রুম থাকার পরও পর্যটকদের কাছে নেই বলা হচ্ছে।

বাড়তি টাকা প্রস্তাব করলে রুমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

হোটেল-মোটেলগুলোর রুম ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ নেওয়া হচ্ছে। আর প্রতি হোটেলে প্রকাশ্যে এসব ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ঢাকা থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে আসা পোশাক কারখানা ব্যবসায়ী ইমন।

ওই ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) কুয়াকাটায় আসেন। বিভিন্ন হোটেলে রুমের জন্য খোঁজখবর নেন।  প্রায় সবাই বলে রুম নেই। তবে কেউ কেউ বলে রুম আছে, কিন্তু বাড়তি টাকা দিতে হবে। একপর্যায়ে সি-বিচ এলাকা বাদ দিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কলেজ রোডের একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করি। কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা খুলনার কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তের মেসার্স মদিনা ফিস ট্রেডার্সের পরিচালক মো. আবু মুছা গাজী বাংলানিউজকে বলেন, কুয়াকাটার ফ্রাই মাছ ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের দেদারছে পকেট কাটছেন। তারা ইচ্ছামতো মাছের দাম নিচ্ছেন। কুয়াটাকায় লইট্টা মাছ ৮০ টাকা পিস, যা খুলনায় বিক্রি হয় কেজি ৭০-৮০ টাকা। টোনা মাছের কেজি ৪শ টাকা, যা খুলনায় সর্বোচ্চ বিক্রি হয় কেজি ১৫০ টাকা। গাঘরা টেংরা পিস ১২০ টাকা, যা খুলনায় বিক্রি হয় কেজি ১০০-১২০ টাকা। এসব মাছ আবার খুলনায় আসে কুয়াকাটা থেকে। মামুন নামে এক পর্যটক অভিযোগ করেন, সাগর নামে এক ফটোগ্রাফারে সঙ্গে চুক্তি হয় মামুনের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সাগর সেই চুক্তি ভঙ্গ করে বাড়তি টাকা দাবি করে ছবি ডিলেট করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। এ বিষয়ে রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে সোহেল স্টুডিওয়ের ক্যামেরাম্যান সাগর বাংলানিউজকে বলেন, আমি কারও সঙ্গে ওয়াদা ভঙ্গ করিনি। আমি এক হাজার টাকা চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা ৮শ টাকা দিতে চেয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বর্ষায় প্রতিনিয়ত সমুদ্র উত্তাল থাকছে। যে কারণে বর্ষায় কুয়াকাটায় সমুদ্রসৈকতে ছুটছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দুই দিনে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে হাজার হাজার পর্যটকদের আগমনে উৎসবমুখর থাকে। উত্তাল সমুদ্রে গোসল, হই হুল্লোড়, ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আনন্দ উল্লাস ও উম্মাদনায় মেতে ওঠেন দূর-দুরান্ত থেকে আসা নানা বয়সের পর্যটকরা। উত্তাল সমুদ্র, বিশাল আকারের ঢেউয়ের ভয়কে জয় করে সমুদ্রে সাঁতার কাটা, ওয়াটার বাইকে ঘুরে বেড়ানো, ঢেউয়ের সাথে গাঁ ভাসিয়ে দিয়ে সৈকতে গড়াগড়ি করেন সমুদ্র প্রিয় পর্যটকরা। এমন ছন্দময় সময়কে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই সৈকতের ফটোগ্রাফার দিয়ে ছবি তুলেন, কেউ কেউ ছাতার নিচে বসে সমুদ্রের ঢেউ উপভোগ করেন, আবার কেউ ঘোড়ার পিঠে ও মোটরসাইকেলে চড়ে সৈকতের প্রকৃতি উপভোগ করেন। এমন মোহনীয় পরিবেশে এক শ্রেণীর ফটোগ্রাফার পর্যটকদের ছবি তুলে দেন। পরে ইচ্ছামতো টাকা দাবি করেন। সৈকতে এসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পর্যটকরা মুগ্ধ হলেও ফটোগ্রাফারদের আচারণে চরম অতিষ্ঠ হন আগত পর্যটকরা। সৈকতের তীরে পাতা বেঞ্চের ভাড়া রাখা হয় দ্বিগুণ থেকে চারগুণও।

আগত পর্যটকদের সন্ধ্যার পর খাবারের প্রধান আকর্ষণ হলো কাঁকড়া ও বিভিন্ন প্রজাতির ফ্রাই মাছ। সম্প্রতিক সময়ে এসব কাঁকড়া ও মাছের দাম বাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। একটি মাঝারি সাইজের কাঁকড়া কয়েক মাস আগে যেখানে ৮০ টাকা ছিল। তা এখন ১২০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইলিশ, কোড়াল, টুনা, লইট্টা ও অক্টোপাসের দামও ইচ্ছামতো নিচ্ছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

আগত পর্যটকদের অভিযোগ, কাঁকড়া ও মাছ ব্যবসায়ীরা জুলুম করছেন। দর কষাকষি করে কোনো লাভ হয় না। বাধ্য হয়ে শখের বসত এসব কাঁকড়া ও মাছ কিনতে হয় বেশি দামে। এছাড়া খাবার হোটেলগুলোতেও ইচ্ছামতো দাম রাখা হয়। এ বিষয়ে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক (এসআই) খালেকুজ্জামার বাংলানিউজকে বলেন, আগত পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ যে কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করে ট্যুরিস্ট পুলিশ। চুক্তিভঙ্গকারী ফটোগ্রাফারের পরিচয় ওমোবাইল নাম্বার দিয়ে অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সৈকতে পর্যটকদের কাছ থেকে মাছের দাম যেন বেশি নিতে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২২
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।