ঢাকা থেকে বাসেই সেখানে যাওয়া যায়। ট্রেনে আখাউড়া হয়েও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ত্রিপুরায় প্রবেশ করা যায়।
ত্রিপুরা শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে রাজ্যের আদিবাসীদের অন্যতম ভাষা ককবরক থেকে। ককবরক ভাষায় 'তৈ' হল জল। 'প্রা' হল নিকটে। ‘জলের নিকটবর্তী স্থান’ তৈ-প্রা থেকে ধীরে ধীরে তেপ্রা, তিপ্রা এবং শেষে ত্রিপুরা হয়েছে। মতান্তরে, ত্রিপুরা নামটির উদ্ভব ত্রিপুরার পৌরাণিক রাজা ত্রিপুরের নামানুসারে। ‘ত্রিপুর’ ছিলেন যযাতির বংশধর দ্রুহ্যের ৩৯ তম উত্তরপুরুষ। অপর এক ব্যাখ্যায় ত্রিপুরা নামটির উৎস হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত দশমহাবিদ্যার একতম ত্রিপুরাসুন্দরী।
ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন মহাকাব্য মহাভারতে এবং পুরাণে ত্রিপুরা নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। ১৪শ শতকে রচিত ইতিহাসগ্রন্থ ‘রাজমালা’তেও ত্রিপুরার উল্লেখ রয়েছে। ‘রাজমালা’ মূলত ত্রিপুরার মাণিক্য রাজবংশের কাহিনী, যে গ্রন্থকে ‘রাজমাল্য’ বলেও ডাকা হয়। মাণিক্য রাজবংশ দেশভাগের পর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পূর্বাবধি ত্রিপুরা অঞ্চলটি ধারাবাহিকভাবে ২৫০০ বছর ধরে ১৮৬জন রাজার মাধ্যমে শাসন করে।
‘রাজমালা’ বা ‘রাজমাল্য’ থেকে জানা যায়, ত্রিপুরার রাজাদের প্রথম অধিষ্ঠান ‘ফিরাত’ দেশে, যা বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ফিরাত দেশের নাম উল্লেখ আছে গ্রীক বণিকদের রচনাতেও, যারা খ্রিস্টিয় প্রথম শতাব্দীতে এই অঞ্চল ভ্রমণ করেছিলেন। শ্রীহট্ট ও চট্টলা ভূমি ছিল এই ফিরাত রাজ্যের অন্তর্গত। চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গ ঘুরে ফিরাত দেশের নামোল্লেখ করেছেন।
অন্যান্য দেশীয় রাজ্যের মতোই ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীন করদ রাজ্য। দক্ষিণ ত্রিপুরায় অবস্থিত উদয়পুর ছিল ভূতপূর্ব স্বাধীন রাজতান্ত্রিক ত্রিপুরার রাজধানী। অষ্টাদশ শতকে মহারাজ কৃষ্ণ মাণিক্য পুরাতন আগরতলায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেন এবং পরবর্তীকালে ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাজধানী বর্তমান আগরতলায় স্থানান্তরিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীকে ত্রিপুরার আধুনিক যুগের সূচনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই সময় মহারাজ বীরচন্দ্র মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মা ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার অনুকরণে তাঁর প্রশাসনকে পুনর্গঠিত করেন এবং বিভিন্ন সংস্কার সাধন করেন।
বর্তমানে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য। এই রাজ্যের আয়তন ১০,৪৯১.৬৯ বর্গকিলোমিটার, এবং এটি ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য । ত্রিপুরা উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাহ্মণবাড়িয়া, উত্তর কুমিল্লার আখাউড়া, কসবা, বাহ্মণপাড়া, বুড়িচং, দক্ষিণ কুমিল্লার সদর ও চৌদ্দগ্রাম এবং ফেনী জেলা দ্বারা পরিবেষ্টিত; রাজ্যের পূর্বভাগে ভারতের অপর দুই রাজ্য আসাম ও মিজোরাম অবস্থিত।
ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ থেকে ৯৪০ মিটার উচ্চতার ভূ-বেষ্টিত পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরায় অধিকাংশ মানুষ সমতলে বসবাস করলেও এটি মানু, গোমতী ইত্যাদি বিভিন্ন নদীর উৎসভূমি। রাজ্যের সরকারি ভাষা বাংলা ও ককবরক। পূর্বে ত্রিপুরা ছিল একটি স্বাধীন করদ রাজ্য। ১৯৪৯ সালের ১৫ অক্টোবর ত্রিপুরা অন্তর্ভুক্তি চুক্তি অনুসারে এই রাজ্য সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনকালে এই রাজ্য পার্বত্য ত্রিপুরা নামে পরিচিতি ছিল।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ১৯৪৯ সালে গণমুক্তি আন্দোলনের ফলে আসাম রাজ্যের অংশ হিসেবে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় ত্রিপুরা। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের ফলে ত্রিপুরার জনপরিসংখ্যান ভীষণভাবে পরিবর্তিত হয় এবং বাঙালি শরণার্থীরাই ত্রিপুরার জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ হয়ে ওঠে। ১ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে ত্রিপুরা একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হয় এবং ২১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বর্তমানে প্রশাসনিক স্বার্থে ত্রিপুরাকে ৮টি জেলা, ২৩টি মহকুমা (উপবিভাগ) এবং ৫৮টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো: ধলাই জেলা, প্রধান শহর আম্বাসা। উত্তর ত্রিপুরা জেলা, প্রধান শহর কৈলাসহর। দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা, প্রধান শহর উদয়পুর। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা, প্রধান শহর আগরতলা। এছাড়াও রয়েছে ঊনকোটি জেলা, খোয়াই জেলা, গোমতী জেলা এবং সিপাহীজলা জেলা। রাজ্যের প্রধান শহরগুলো হল: আগরতলা, বিশালগড়, যোগেন্দ্রনগর, ধর্মনগর, সোনামুড়া, অমরপুর, প্রতাপগড়, উদয়পুর, কৈলাসহর, তেলিয়ামুড়া, ইন্দ্রনগর, খোয়াই ও বেলোনিয়া। উল্লেখ্য, বাঁধারঘাট, যোগেন্দ্রনগর এবং ইন্দ্রনগর বর্তমানে আগরতলা পুরসভার অন্তর্গত। ত্রিপুরার উত্তরাংশে অরণ্যাবৃত পাহাড় ও উপত্যকা। দক্ষিণে গহন জঙ্গল। প্রতি বছর এখানে ৪,০০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
ত্রিপুরার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী এবং ত্রিপুরার জনসংখ্যার ৬৪ শতাংশই কৃষির সাথে যুক্ত। পণ্যফসলের তুলনায় ত্রিপুরায় খাদ্যফসল উৎপাদনের পরিমাণই অধিক। ত্রিপুরায় উৎপন্ন প্রধান খাদ্যফসলগুলি হল ধান, তৈলবীজ, ডাল, আলু এবং আখ। চা ও রাবার হল রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পণ্যফসল। ত্রিপুরা হল "ভারতীয় রাবার বোর্ড" কর্তৃক ঘোষিত দেশের দ্বিতীয় রাবার রাজধানী, এর স্থান কেরালা রাজ্যের পরেই। ত্রিপুরার হস্তশিল্পও অত্যন্ত বিখ্যাত। শাল, গর্জন এবং টিকসহ কিছু উৎকৃষ্ট মানের কাঠ ত্রিপুরার পার্বত্য-বনাঞ্চলে পাওয়া যায়। খনিজ সম্পদে বিশেষ সমৃদ্ধ না হলেও ত্রিপুরায় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন হয়। তবে শিল্পক্ষেত্রে ত্রিপুরা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনগ্রসর।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে ত্রিপুরা সংযুক্ত হয়েছে আসামের মধ্যে দিয়ে লুমডিং এবং শিলচর পর্যন্ত বিস্তৃত ব্রডগেজ রেলওয়ে লাইন দ্বারা। ত্রিপুরার প্রধান রেল স্টেশনগুলি হল আগরতলা, ধর্মনগর এবং কুমারঘাট। ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়কও ত্রিপুরাকে আসামের ভেতর দিয়ে ভারতের বাকী অংশের সাথে যুক্ত করেছে। রাজধানী আগরতলায় ত্রিপুরার প্রধান বিমানবন্দর অবস্থিত, যা সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ থেকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে।
ত্রিপুরা হল আসামের পরেই উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্যের মধ্যে দ্বিতীয় জনবহুল রাজ্য। আসাম ও ত্রিপুরা ছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ‘সাতকন্যা’ বা ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিতি অন্য পার্বত্য রাজ্যগুলো (মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল) জনবহুল নয়। ত্রিপুরার জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩০৫ জন। ভারতের জনসংখ্যার বিচারে ত্রিপুরার স্থান ২২ তম। ভারতের মানব উন্নয়ন সূচকে ত্রিপুরার স্থান ২২তম এবং দারিদ্র সূচকে ২৪তম। ত্রিপুরায় স্বাক্ষরতার হার ৭৩.২%, যা ভারতের স্বাক্ষরতার জাতীয় হার ৬৫.২০%-এর অধিক। উল্লেখ্য, আগরতলায় ১৯৮৭ সালে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
প্রসঙ্গত, সমগ্র ভারতের জনসংখ্যার ০.৩১% এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনসংখ্যার ৮.১৮% ত্রিপুরায় বসবাস করে। ত্রিপুরার জনসংখ্যার ৭০% বাঙালি এবং বাকি ৩০% বিভিন্ন উপজাতি ও জনজাতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত। এদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হল ককবরকভাষী ত্রিপুরি সম্প্রদায়। আরো আছে জামাতিয়া, রিয়াং, নোয়াতিয়া সম্প্রদায়।
ত্রিপুরার সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় সম্প্রদায় হল হিন্দু, মোট জনসংখ্যার ৮৫.৬% ভাগ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মুসলিম (৮.০%), খ্রিস্টান (৩.২%) এবং বৌদ্ধ (৩.১%)।
বাঙালি এবং উপজাতি মিলিয়ে ত্রিপুরার অধিকাংশ হিন্দুধর্মাবলম্বীই শাক্ত সম্প্রদায়ভুক্ত। রাজতান্ত্রিক আমলে হিন্দুধর্মই ছিল ত্রিপুরার রাজধর্ম। সমাজে পূজারী ব্রাহ্মণদের স্থান ছিল অত্যন্ত উঁচুতে। ত্রিপুরার হিন্দুধর্মাবলম্বীদের উপাস্য প্রধান দেবদেবীরা হলেন শিব এবং দেবী শক্তির অপর রূপ দেবী ত্রিপুরেশ্বরী। হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলো হল দুর্গাপূজা, নবরাত্রি, কালীপূজা ইত্যাদি। বিশেষভাবে ত্রিপুরায় পালিত হয় গঙ্গা উৎসব, যাতে ত্রিপুরার উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ দেবী গঙ্গার উপাসনা করে।
ভারতের অন্যান্য অংশের মতই ত্রিপুরাতেও দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সম্প্রদায় মুসলিম, যাদের অধিকাংশ মানুষই বাংলাভাষী এবং ইসলামের সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত। ত্রিপুরায় খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য, যারা মূলত ত্রিপুরি এবং অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। ‘ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান ইউনিয়ন’ নামক সংগঠনের অধীনস্থ ব্যাপ্টিস্ট সম্প্রদায়ের অধীন রাজ্যে পাঁচ শতাধিক গির্জা রয়েছে। ত্রিপুরায় দ্বিতীয় বৃহত্তম খ্রিস্টীয় সম্প্রদায় ‘রোমান ক্যাথলিক’।
ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার পর এবার ত্রিপুরার দর্শনীয় স্থানগুলো সংক্ষেপে জেনে নিন। বাংলানিউজের ত্রিপুরা পাতায়ও আপনি এ সম্পর্কে আরো অনেক লেখা পাবেন। এখানে অল্প বিবরণই দেওয়া হলো।
ত্রিপুরার পর্যটন মানচিত্রের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান নীরমহল। ‘নীর’ বা জলের মাঝে মহলটি স্থাপিত বলে এর নামকরণ করা হয়েছে নীরমহল। মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের আমলে নীরমহল তৈরি করা হয়। উল্লেখ্য, ভারতেরই আরেক প্রদেশ রাজস্থানের উদয়পুরে ঠিক একই রকম একটি প্রাসাদ রয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রসিদ্ধ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘মার্টিন অ্যান্ড বার্ন কোম্পানি’ ১৯৩০ সালে মহলের কাজ শুরু করে এবং আট বছর কর্মযজ্ঞের পর ১৯৩৮ সালে ভবনটির উদ্বোধন করা হয়।
নীরমহলকে ঘিরে থাকা বিশাল জলাশয়টির নাম রুদ্রসাগর। যার আয়তন আনুমানিক পাঁচ দশমিক তিন বর্গকিলোমিটার। রুদ্রসাগরের ঠিক মাঝখানে ত্রিপুরার রাজার গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন অবকাশ যাপনের জন্য মহল নির্মাণ করা হয়। ভবনটি একাধারে সৌন্দর্যপ্রিয়তা এবং মুঘল-ভারতীয় সংস্কৃতির নিদর্শন। এই প্রাসাদের দুটি অংশ। মূল অংশ রয়েছে পশ্চিম পাশে এবং পূর্ব পাশে নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য দুর্গ। মূল অংশকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: বাইরের কক্ষ এবং অন্দরমহল। বাইরের কক্ষগুলোর মধ্যে বিশ্রামঘর, খাজাঞ্চিখানা ও নাচঘর উল্লেখযোগ্য। এ ধরনের পাঁচটি কক্ষ সেখানে রয়েছে। এছাড়া দাবা খেলার জন্যও একটি আলাদা কক্ষ রয়েছে। রাণী ও অন্যদের জন্য অন্দরমহলে রয়েছে বিশাল ছয়টি কক্ষ। এছাড়াও রান্না ঘর, রাজার সভাঘর, আড্ডাঘর ইত্যাদি নামের অনেকগুলো কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে মহলের ভেতর একটি জাদুঘরও চালু করা হয়েছে। মহলের অন্দরমহলটি এমনভাবে সাজানো ছিলো যাতে রাজা-রাণী নৌকাভ্রমণ সেরে অন্দরমহলের সিঁড়িতে সরাসরি প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া প্রাসাদের ভেতরের অংশে একটি বিরাট বাগানও রয়েছে। রাজা-রাণীর বেড়ানোর জন্য ঘাটে সবসময় নৌকা থাকত। এতে বাইরের দিকে দুটি ঘাট রয়েছে। সেখানে কর্মচারীরা গোসল করতো এবং ঘাটগুলো তাদের যাতায়াতের জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মহারাজা অনেক অর্থ খরচ করে এই প্রাসাদ নির্মাণ করলেও খুব বেশি দিন তিনি তা উপভোগ করতে পারেননি। মাত্র সাত বছর তিনি এই প্রাসাদ ব্যবহার করে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান।
মহারাজা মারা যাওয়ার পর বহুদিন এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। এ সময় আস্তে আস্তে এটি ঔজ্জ্বল্য হারাতে থাকে। অবশেষে ১৯৭৮ সালে ত্রিপুরার তথ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এর দায়িত্ব নেয় এবং ভবনটি রক্ষায় সচেষ্ট হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ভবনটিতে বড় ধরনের সংস্কার করা হয়। বর্তমানে এটিকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। প্রতি শীতের সময়ে লাইট অ্যান্ড লেজার শোর মাধ্যমে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এই প্রাসাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে রুদ্রসাগর লেকে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে বাসে সরাসরি যাওয়া যায় ৫৩ কিলোমিটার দূরের মেলাঘরে। এছাড়া জিপ ও অন্যান্য গাড়ি ভাড়া করেও সেখানে যাওয়া সম্ভব। বাস ভাড়া আয়ত্ত্বের মধ্যে এবং যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা। ফলে ভ্রমণে আপনার ইচ্ছা আর সম্মতি থাকলে বেরিয়ে যাওয়ায় বাধা কোথায়!
ড. মাহফুজ পারভেজ: কবি, গল্পকার ও গবেষক। প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
জেডএম/