ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

সৌদি আরব

রিয়াদে বিমানের টাকা স্টাফদের পকেটে

মোহাম্মদ আল আমীন, সৌদি আরব করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
রিয়াদে বিমানের টাকা স্টাফদের পকেটে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রিয়াদ এয়ারপোর্ট ঘুরে : মামুনুর রশিদ নামে এক যাত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ০৪০ ফ্লাইটে রিয়াদ থেকে ঢাকায় যাবেন শুক্রবার (৭ আগস্ট) সকালে। বিমানের ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী, প্রতি যাত্রী ৪৫ কেজি (দুই কার্টুন)  মালামাল বিনামূল্যে নিতে পারেন।



বিমানের কাউন্টারের স্কেলে মামুন সাহেবের দুই কার্টনে মাল হয় ৪৮.৩ কেজি। বিমানের কাউন্টার ম্যানেজার মামুন সাহেবকে মাল কমানোর সুযোগ না দিয়েই অতিরিক্ত মালের বিপরীতে ২৪০ রিয়াল চার্জ বসিয়ে সেটা পরিশোধ করার নির্দেশ দেন।

মামুন বাংলানিউজকে বলেন, দেশি বিমান মনে করে ইচ্ছা করেই মাল একটু বেশি নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে আসার পর সেটা কিভাবে ৩.৩ কেজি হলো বুঝছি না। আর ৩.৩ কেজির জন্য ৪ কেজির চার্জ নেয়া অযৌক্তিক। অতিরিক্ত মাল কমানোর সুযোগ চেয়েছিলাম, সেটাও দেয়া হয়নি।

৩.৩ কেজির জন্য ৪ কেজির চার্জ কেনো নেয়া হলো এবং তাকে মাল কমানোর সুযোগ কেনো দেয়া হলো না তাৎক্ষণিক জানতে চাইলে ওই ফ্লাইটে কর্মরত বিমানের রিয়াদ স্টেশন ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছুটি থেকে এসে আজই যোগদান করলাম। এখন অনেক কড়াকড়ি।

অভিযোগ রয়েছে, যাত্রীদের অতিরিক্ত মাল কমানোর সুযোগ না দিয়ে চার্জের রশিদ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য এয়ারলাইন্স মাল বেশি হলে যাত্রীকে তার মাল কমানো অথবা চার্জের প্রস্তাব করে, সেক্ষেত্রে যাত্রী সম্মতি দিলেই কেবল চার্জের রশিদ দিয়ে থাকে। বিমানের স্টাফদের এমন আচরণে দিনদিন বিমানের যাত্রী কমছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

কিন্তু স্টেশন ম্যানেজার মাহফুজুর রহমানের কড়াকড়ির কথা মিথ্যা প্রমাণ করলেন বিমানের কাউন্টার ম্যানেজার নাসির। এই কর্মকর্তা অবৈধভাবে সামান্য কিছু টাকা নিয়ে চার্জ ছাড়াই পার করে দিলেন দুই যাত্রীর অতিরিক্ত ৫৫ কেজি মাল।

এয়ারপোর্ট ঘুরে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বিমানের রাজস্ব ফাঁকির অভিনব কিছু পথ।

শুক্রবার সকালে এয়ারপোর্ট ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টার ম্যানেজাররা এয়ারপোর্টের ক্লিনার এবং নিজেদের সোর্সের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন চার্জ ছাড়া বিমানে তুলে দিচ্ছেন শত শত কেজি মাল। এর বিপরীতে অবৈধভাবে তারা হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

শুক্রবার সকালের ফ্লাইটের বিমানের কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এয়ারপোর্টে কর্মরত ক্লিনার এবং বিমান কর্মকর্তাদের সোর্সদের মাধ্যমে শত শত কেজি মালে নামমাত্র চার্জ আদায় করে সরকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে।

মালামাল বুকিং এর জন্য লাইনে অপেক্ষমান যাত্রীদের কাছে গিয়ে এয়ারপোর্টের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা জানতে চাইছেন, কত কেজি মাল বেশি আছে। যারা বেশি মালামাল নিয়ে আসছেন তারা লাইনে থাকা অবস্থাতেই প্রতিকেজি ২৫ রিয়াল করে (রশিদ ছাড়া) দফারফা করে লাইন থেকে সরিয়ে লাগেজ পার করে দিচ্ছেন।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, আমার অতিরিক্ত মাল ছিলো ৩২ কেজি। বৈধভাবে চার্জ দিতে গেলে ১৭০০/১৮০০ রিয়াল দিতে হবে। তাই মাত্র ৬৫০ রিয়াল দিয়ে দালালের মাধ্যমে বুকিং করিয়েছি।

অপর এক যাত্রী বলেন, আমাদের দুই ভাই এর মোট ৮০ কেজি অতিরিক্ত মাল ছিলো। এক কর্মকর্তাকে ধরে তাকে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে ১২২০ রিয়াল চার্জ করিয়েছি। বৈধভাবে ৮০ কেজি অতিরিক্ত মাল দিতে গেলে চার্জ লাগতো ৪ হাজার রিয়ালের বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এভাবে প্রতিটি ফ্লাইটে স্টাফদের যোগসাজসে শত শত কেজি মাল যাচ্ছে বিনা পয়সায়। যার ফলে প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব।

এছাড়াও রিয়াদ এয়ারপোর্টে বিমানের যাত্রীদের সাথে স্টাফদের অশোভন আচরণ এবং সিরিয়াল ভঙ্গ নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিমানের রিয়াদের রিজিওনাল ম্যানেজার হেলাল উদ্দিন ছুটিতে দেশে অবস্থান করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পরে শুক্রবার বিকাল চারটার দিকে বিমানের রিয়াদ স্টেশন ম্যানেজার মাহফুজুর রহমানের (+৯৬৬৫০৪২৪৬৩৫৩) মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৫
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সৌদি আরব এর সর্বশেষ