রিয়াদ: আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পৌঁছে দিতে আউটসোর্সিং কোম্পানি আইরিশ কর্পোরেশন বারহাডকে (আইআরআইএস) নিয়োগ দিয়েছিলো বাংলাদেশ সরকার।
নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই সেবা নয় ব্যবসায়িক চিন্তা নিয়ে রিয়াদ ও জেদ্দায় কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
কাজ শুরুর প্রথম দিনই নানাভাবে প্রবাসিদের হয়রানি শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি হয়রানি আর অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়ে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে একাধিক নিউজ প্রকাশিত হয়।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ করার কথা ছিলো এ প্রতিষ্ঠানে। আইরিশের অফিসগুলোর নোটিশ দেখা যায় যে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
কিন্তু বিধিবাম। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করেই সৌদি আরবের সব অফিস বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হয়েছেন অফিসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এঅবস্থায় আইরিশ অফিসে করা পাসপোর্টের আবেদনকারী প্রবাসি বাংলাদেশিরা এমআরপি নিয়ে শংকায় পড়েন।
জানা গেছে, সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপিত পাসপোর্ট সেন্টারগুলো সহস্রাধিক প্রবাসির পাসপোর্ট না দিয়েই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অফলাইনে যেখানে এনরোলমেন্ট করে, সেখানে দেওয়া হয়েছে ভুল সিরিয়াল নাম্বার যার কারণে পাসপোর্ট অধিদফতরের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে কার পাসপোর্ট কোনো স্ট্যাটাসে আছে সেটাও জানতে পারছেনা আবেদনকারীরা।
এ ব্যাপারে গত সপ্তাহে রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর ও কার্যালয় প্রধান মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চুক্তি অনুযায়ী আইরিশের সময় শেষ। আর আইরিশের করা পাসপোর্টগুলো বিতরণের জন্য রিয়াদ এবং জেদ্দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। দূতাবাসে আইরিশের একটি কাউন্টার বসিয়ে পাসপোর্ট বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যোগ করেন মনিরুল ইসলাম।
এদিকে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা থেকে লোক আসার কথা বলে সময় ক্ষেপনের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়ে সৌদি আরবে চলে আসা এমআরপি বিতরণের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আত্মগোপনে থাকা আইরিশ কর্মকর্তারা।
আরও জানা যায়, আইরিশের কর্মকর্তারা তাদের মোবাইল নাম্বার বন্ধ রেখে অন্য নাম্বার দিয়ে পাসপোর্টের আবেদনপত্রে দেওয়া প্রবাসীদের নাম্বারে কল করে অজ্ঞাত স্থান থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারী নেওয়ার কথা জানাচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রবাসিদের কাছে চাওয়া হচ্ছে তিনশত সৌদি রিয়াল। যা পাসপোর্টের ফি’র দ্বিগুণ।
রোববার (১৩ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ০৫৩৭০০৫০৬৪ এই নম্বর থেকে একজন প্রবাসিকে জানানো হয় ‘আপনার পাসপোর্ট আসছে রিয়াদ। যেখানে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন সেখান থেকে এসে পাসপোর্ট নিয়ে যান’। জমা দেওয়া অফিস বন্ধ জানানো হলে ফোনের ব্যক্তিটি বলেন ‘যার মাধ্যমে জমা দিয়েছেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন’। ফোনে কথা বলা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে ফোন কেটে দেন এবং পরে বার বার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
মোবাইল নম্বরটি আসলেই ওই প্রতিষ্ঠানের কারো কিনা জানতে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, গত ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ নম্বর থেকে আবেদনকারীদের যোগাযোগ করতে বলা হয়। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় মোবাইল নম্বরটি ওই প্রতিষ্ঠানের কারো।
মদীনা থেকে আরিফ নামের একজন বাংলাদেশি বাংলানিউজকে বলেন, চার মাস আগে এমআরপির আবেদন করেছেন। গত মাসে হঠাৎ করে অফিস বন্ধ করে চলে যায় কোম্পানিটি। অনেক কষ্টে একজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাকে বলেন আপনাদের পাসপোর্ট ক্যুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেওয়া হবে। বাসায় বসে ১৬০ রিয়াল দিয়ে পাসপোর্ট রিসিভ করতে পারবেন। তবে কবে থেকে ক্যুরিয়ারে এমআরপি বিতরণ শুরু হবে সে ব্যাপারে কিছুই জানাননি তিনি।
বাংলানিউজ থেকে আইরিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অনেকের নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। আবার অনেকেই কল রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৬
ওএইচ/জেডএম