রিয়াদ: মরভূমির বুকে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বাংলাদেশের নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বদরপুরের মো. শহীদুল্লা।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের শহর আল খারিজ।
তিন মাস পোনা উৎপাদন আর বাকি নয় মাস মাছ বড় করে বিক্রি করেন 'আল সাহাব ফিসারিজ' এর পরিচালক শহীদুল্লাহ। শুধু রিয়াদ নয়, সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে বাজারজাত করা হচ্ছে বাংলাদেশিদের উৎপাদিত এই মাছ।
শহীদুল্লাহর পরিচালনাধীন আল সাহাব ফিসারিজে কর্মরত আছেন ৭০ জন কর্মচারী। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি।
১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে মালিকের অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ফিসারিজটি পরিচালনা করে আসছেন তিনি। শহীদুল্লাহর যোগ্যতা আর সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে দিনকে দিন। আল সাবাবে কর্মরত বাংলাদেশিদের কার্যক্রমে খুবই খুশি সৌদি মালিক। আর এই খুশির পুরষ্কার হিসেবে মাসিক বেতনের পাশাপাশি শহীদুল্লাহকে দেন লাভের একটি অংশ।
মরুভূমিতে মাছ চাষ সম্পর্কে শহীদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, লোকের অভাবে অনেক পুকুরে পোনা দেওয়া যাচ্ছে না। এখানে বাংলাদেশিদের অনেক চাহিদা, ভিসা বন্ধ থাকায় ফিসারিজের মালিক বাংলাদেশি শ্রমিক আনতে পারছেন না। বর্তমানে খামারটিতে শুধু তেলাপিয়া চাষ হচ্ছে। অধিক শ্রমিক পেলে তেলাপিয়ার পাশাপাশি অন্য প্রজাতির মাছ চাষেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২৪০ হেক্টর (প্রায় ৪১২ বিঘা) জমিতে ইট,বালি আর সিমেন্ট দিয়ে বানানো হয়েছে কৃত্রিম পুকুর। এই পুকুরে অক্সিজেন তৈরির জন্য বসানো হয়েছে ফ্যান। আর এই ফ্যানের ঘূর্ণিতে পানিতে তৈরি হচ্ছে ঢেউ। আর দূষিত পানি বদলের জন্য রাখা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
দূষিত পানি কি করা হয় জানতে চাইলে শহীদুল্লাহ বলেন, এই ফিসারিজের এক ফোটা পানিও ফেলা হয় না। দূষিত পানি ড্রেনের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে মাঠে যেখানে চাষ করা হয়েছে ঘাস। আর ঘাস ক্ষেতে দূষিত পানি দেওয়ার কারণে সার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
মাছ চাষের ওপর কোনো প্রশিক্ষণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে দুই বছরের একটি কোর্স করেছি।
মার্চ মাসের শেষের দিকে পুকুর থেকে ডিমওয়ালা মাছ সংগ্রহ করা হয়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় ডিম থেকে রেনু উৎপাদনের কাজ। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই চলে ডিম থেকে রেনু উৎপাদনের কাজ। এই কাজটি সম্পূর্ণ করতে লেগে যায় প্রায় ৩ মাস। তিনমাস পর সেই রেনু ছেড়ে দেওয়া হয় নির্ধারিত কিছু পুকুরে।
কয়েকটা পুকুরে কিছুদিন থাকার পর মাছে ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য বাড়ানো হয় পুকুরের সংখ্যা। আর এরপর শুরু হয় গ্রোথ বাড়ানোর জন্য মেল-ফিমেল মাছ চিহ্নিতকরণের কাজ। মাছের ওজন ৬০ গ্রাম হওয়ার পর শুরু হয় বিক্রি। পর্যায়ক্রমে ২৬০ গ্রাম ওজন হওয়া পর্যন্ত চলে মাছ বাজারজাতকরণ।
মাছ চাষের ঝুঁকি এবং লাভ সম্পর্কে জানতে চাইলে শহীদুল্লাহ বলেন, লাভ অনেক তেমনি ঝুঁকিও কম নয়। প্রধানত ৩টি ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয় মরুভূমিতে মাছ চাষে। মাছে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ, পানি সরবরাহ এবং খাবার।
পুকুরের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে তিনি বলেন, ওই যে ফ্যানের মাধ্যমে পানিতে ঢেউ হচ্ছে, সেটা ২৪ ঘণ্টা চলে। বন্ধ হয়ে গেলে অক্সিজেনের অভাবে মুহুর্তের মধ্যে সব মাছ মারা যাবে। সেই সঙ্গে কৃত্রিম পুকুরের পানি দ্রুত নষ্ট হয় আর নিয়মিত সেটা পরিবর্তন না করলেও মাছ মারা যাবে। বিদ্যুতের পাশাপাশি সেখানে রাখা হয়েছে জেনারেটর।
বাংলাদেশ সময়: ১১০২ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৬
পিসি