লালপুর, নাটোর থেকে: ছোটবেলায় অনেকেই ‘গরুর চামড়া’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বাড়ির দস্যি ছেলে, পড়ালেখায় একদম মন নেই, সারাদিন টো-টো করে ঘোরে।
প্রবাদ-প্রবচন আর লোক-উপমাগুলো তো আর এমনি এমনি হয়নি, তার পেছনে কার্যকারণও ছিলো। এই যেমন গরুর চামড়া, পুরু পশম আর মোটা চামড়া এমনভাবে তৈরি যেনো গ্রীষ্ম-বরষা-শীত সামাল দিতে পারে। প্রাকৃতিকভাবেই একটু বেশি মোটা। সেই গরুর চামড়ায় যখন শীত ধরে তখন কী দাঁড়ায়? তার মানে কী রকম শীত পড়ছে যে গরুও কাবু!
গরু তো অবলা প্রাণী, মুখফুটে বলতে পারে না, আমার শীত লাগছে। তখনই ‘জীবন জীবনের জন্য’ লাইনটি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। এসময় পরম বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়ায় মানুষ। শীত ঠেকাতে মনুষ্য সমাজে আলাদা করে গরম কাপড় পরার রেওয়াজ। কনকনে ঠাণ্ডায় বাড়ির শীতার্ত গরু-ছাগলের গায়েও চাপিয়ে দেন শীতের পোশাক। যে যার সাধ্যমতো বাড়ির পুরনো বড় কাপড় বা পাটের বস্তা কেটে জামার মতো বানিয়ে ওদের গায়ে চাপিয়ে দেন।
চলতি সপ্তাহজুড়ে নাটোর ঘুরছে বাংলানিউজ টিম। জেলার বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রামের আনাচে-কানাচে দেখা মিললো পারস্পরিক বন্ধুত্বের এ প্রতিদান। কেউ পড়িয়েছেন টকটকে লাল জামা কেউ বা নীলচে শার্ট। পাখিদের আবার এসবের বালাই নেই, তাই সবাই একজোট হয়ে উষ্ণতা ভাগাভাগি করে নিয়েছে।
বাড়ির বড়রা নিজের সন্তানের মতো ওদের গায়েও ছড়িয়ে দিয়েছেন উষ্ণতার পরশ। আর শীতে উষ্ণতার পরশের যে কী মূল্য সেটি উত্তরবঙ্গবাসীরা হাড়ে হাড়ে জানেন। তার উপর গত মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) থেকে দু’দিনব্যাপী ভারী-মাঝারি-মৃদু বর্ষণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে আরও কয়েকগুণ।
এ দু-তিন দিনে তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করেছে। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকালে ‘অ্যাকু ওয়েদার’র দেওয়া তাপমাত্রা ছিলো ১৩ ডিগ্রি। তাও আবার নাটোর শহরের। গ্রামাঞ্চলে দু-তিন ডিগ্রি কম হওয়ারই কথা।
নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা আবার দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান হিসেবে খ্যাত। গ্রীষ্মে লালপুরের তাপমাত্রা ৪৩-৪৪ ডিগ্রিতে ওঠার রেকর্ড আছে। এবারের উত্তুরে হাওয়া তাকেও ছাড় দেয়নি।
চাচাবয়সী ভ্যানচালক আসাদুল মিয়ার ভাষ্যে বললে, শীত এটিও ভালোই পড়িচ্চে। কুনো জাগাত কম নাই গো চাচা। লালপুর-ললডাঙ্গা সব সুমান।
চাচার কথাই ঠিক। দেশের উষ্ণতম স্থানের গরু-ছাগলের গায়েই শীতবস্ত্র উঠে গেছে, তাহলে মানুষের শীতটা ভালোই আন্দাজ করা যায়।
নাম ভুলে যাওয়া অটোরিকশা চালক যেমন বললেন, লালপুর হইচ্চে মরুভূমির মুতন। গরমকালে প্রুচণ্ড গরম, শীতকালে প্রুচণ্ড শীত।
একে তো শীতকাল তার উপর আষাঢ় মাসের মতো বৃষ্টি-এ দুই মিলে শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও কয়েকগুণ। সঙ্গে ঘন কুয়াশা তো রয়েছেই। ভরদুপুর, কিন্তু দেখে লাগে কাকভোর। শুক্রবারই যেমন দিনভর সূয্যিমামার দেখা মেলেনি। কেমন থমথমে আকাশ। মেঘলা না কুয়াশা ঠিক বোঝা গেলো না। মাঝে মধ্যে দু-চার ফোঁটা পানি গায়ে পড়তেই মনে হলো, এই বুঝি বৃষ্টি নামলো।
এদিন অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। যারা হয়েছেন তারাও ওই চিলতে উঠোন অব্দি। এক কোণে জটলা করে সবার শীত তাড়ানোর প্রয়াস।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ