চলনবিল (নাটোর) থেকে ফিরে: চলনবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল ও সমৃদ্ধতম জলাভূমিগুলোর একটি। দেশের সর্ববৃহৎ এ বিল বিভিন্ন খাল ও জলখাত দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত অনেক ছোট ছোট বিলের সমষ্টি।
নাটোরকে আলাদা করে বলার কারণ, সম্প্রতি এই অংশের চলনবিল ঘুরে এসেছে বাংলানিউজের বিশেষ দল। মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে বালুয়া বাসুয়া চৌরাস্তা থেকে যাত্রা শুরু হয়। এখান থেকেই চলনবিল নাটোরের সিংড়া অংশের বুক ফেঁড়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ চলে গেছে ২৮ কিলোমিটারের সড়ক। বেলা বারোর সূর্য মাথার উপর থাকলেও কুয়াশা তখনও কাটেনি। বাহন হিসেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
সেই ভ্রমণ থেকেই বিলের পথ ও প্রান্তর নিয়ে এবারের ধারাবাহিক আয়োজন। চোখ-মন ছুঁয়ে গেছে সবুজের সমারোহ, বকের ওড়াউড়ি, দূরের গ্রাম, জল-মাটি-মানুষসহ আরও কত কী! বিপুলা এ বিলের যতোটুকু চোখে ধরেছি, তার একশো ভাগের এক ভাগ ধরা গেছে ক্যামেরার ফ্রেমে। চলতি পর্বের মুহূর্তগুলো দেখে নেওয়া যাক।
সিংড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তর দিকে নাটোর-বগুড়া সড়ক ধরে আধা কিমি এগোলেই চৌরাস্তা। এখানেই বালুয়া বাসুয়া গ্রাম। উত্তর-পশ্চিম কোণ দিয়ে ঢুকে যাওয়া পিচঢালা সড়কটির শুরুতে চলনবিল গেট। এখান থেকেই শুরু চলনবিলের বুকচেরা সড়ক
চলনবিল গেটের ঠিক উল্টোদিকের রাস্তা চলে গেছে সিংড়া মাদ্রাসা মোড় এলাকায়। রাস্তার দু’ধারে অল্পকিছু দোকানপাট, সংলগ্ন বাড়ি- এরপর ধীরে ধীরে ঢুকে গেছে গ্রামে।
এদিকের অংশের মূল বিলে ঢোকার আগেই বালুয়া বাসুয়া গ্রাম। এসব আগে বিলের অংশই ছিলো। ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে এখন গড়ে উঠেছে জনবসতি। গ্রাম হয়ে বিলে ঢুকতেই চিটে ধানের বস্তার সারি। চিটে ধান হলো, চাল ছাড়া ধানের মোড়ক। এটি সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এছাড়া ব্যবহার করা যায় মণ্ডা হিসেবেও।
যতো বিল সামনে ডাকছে, ততো শেষ হচ্ছে গ্রামের সীমানা। পথ এগুচ্ছে, দু’ধারে খড়গাদার সারি। ভ্যানচালক হানিফ ভাই এ এলাকারই মানুষ। জানালেন, এসব আমন ধানের খড়।
খড়ের অনেক ব্যবহার। পশুর খাবার, ঘরের ছাউনি, বীজতলা তৈরি, জ্বালানিসহ আরও কতো কাজে লাগে। শুকনো মৌসুম তাই পানিতে নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। এজন্য বিলের খোলা জায়গা ব্যবহার হচ্ছে খড় সংরক্ষণের কাজে।
চলতি পথে পবিত্র মসজিদ। শীতের দুপুর, সূয্যি মামার চোখ রাঙানির ভয় নেই। মিষ্টি রোদে তাই মসজিদের সামনেই ধর্মগ্রন্থ নিয়ে বসে পড়লেন এক পূণ্যার্থী।
আমন উঠে গেছে আগেই। এবার ইরি চাষের পালা। বিলাঞ্চলের প্রধান ফসল ধান। মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী এখানে ইরি ও আমনের ফলনই বেশি হয়। বীজতলা তৈরি থেকে চারা লাগানো- জোরকদমেই চলছে সব।
চারপাশের সব ক্ষেতে এসে গেছে নবীন সবুজের দল। ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলে দুলে তারা উঁকি দিচ্ছে পাশের ক্ষেতে। আহ্বান আরও নবীনের, আরও সবুজের। তারাও যেনো হাওয়ায় দুলতে উন্মুখ। জোরসে হাত লাগাও চাষিভাই!
বেলা বাড়ছে। চারপাশে তাকানোর সময় নেই। একফোটা জিরোতেও যেনো মানা। আলো ফুরোবার আগেই রোপণ করতে হবে সব চারা!
দূরে সাজানো-গোছানো গ্রাম, নাম শহরবাড়ি। রাস্তা থেকে বহুদূরের পথ। ক্যামেরার কারসাজিতে কাছে আনা। গাছ-গাছালির ফাঁক দিয়ে টিনের চালগুলো দেখা যায়। সামনে ইরির চাষ। পানিবন্দি মৌসুমে এই ইরিই তাদের মুখে তুলে দেবে ভাত।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি
** আমহাটীর চামড়ায় সারাদেশে বাজে ঢাক-ঢোল
** ডুবো সড়কে ডুবছে চলনবিল
** ঝাড়ফুঁক-সাপ ছেড়ে ইমারতের পেটে!
** বিলের মাছ নেই চলনবিলের বাজারে (ভিডিওসহ)
** চলনবিলে হাঁস পুষে লাখপতি (ভিডিওসহ)
** হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট, ধুমছে খেলা (ভিডিওসহ)
** ভাসমান স্কুলে হাতেখড়ি, দ্বীপস্কুলে পড়াশোনা
** দত্তপাড়ার মিষ্টি পান ঠোঁট রাঙাচ্ছে সৌদিতে
** একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড়
** লাল ইটের দ্বীপগ্রাম (ভিডিওসহ)
** চলনবিলের শুটকিতে নারীর হাতের জাদু
** ‘পাকিস্তানিরাও সালাম দিতে বাধ্য হতো’
** মহিষের পিঠে নাটোর!
** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর
** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম