ঢাকা: প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে। দেশের প্রধান বিমানবন্দর এটি।
অপার সম্ভাবনা থাকলেও এক হাজার ৯শ’ ৮১ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ হিসেবে বিমানবন্দরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা না থাকা, দুর্বল ইমিগ্রেশন, অপরিচ্ছন্নতা, দিকনির্দেশনা না থাকা, দেশের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ছবি না থাকা, বিমানবন্দরের বাইরে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের জটিলতা ইত্যাদিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করার পরও এ বিমানবন্দরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশিদুল হাসান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, একজন পর্যটক যখন প্রথম কোনো দেশে যান তখন বিমানবন্দরের অবকাঠোমো দেখে দেশ সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করেন।
থাইল্যান্ড, নেপালসহ বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে প্রবেশের পর দেশটির আকর্ষণীয় স্থানগুলোর ছবি নজরে আসবে, যা দেখে পর্যটকদের সেই দেশের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে। কিন্তু শাহজালালে এমন কোনো সুবিধা নেই।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে সব যান্ত্রিক সুবিধা থাকলেও দক্ষ জনশক্তির অভাবে ইমিগ্রেশনে অনেক সময় লাগে ছাড়পত্র পেতে।
এতেও বিরক্ত হন পর্যটকরা। ফলে কোনোভাবেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারছে না।
ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি রকিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, পর্যটকদের আকর্ষণে বিশ্বের অন্য দেশের বিমানবন্দরগুলোতে নিজেদের পণ্যের শো-রুম থাকে। এছাড়া আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানে যাওয়ার দিকনির্দেশনা সম্বলিত লিফলেট বা বুথ থাকে যা শাহজালালে নেই।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর বিমানবন্দরগুলোতে সংশ্লিস্ট দেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যসামগ্রীর শো-রুম থাকে। কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ইমিগ্রেশন জটিলতাতো রয়েছেই। এতোদিন বিমানবন্দরটিতে স্ক্যানিং মেশিন ছিলো মাত্র একটি। যার মাধ্যমে যাত্রীদের ব্যাগ পরীক্ষা নিরীক্ষায় অনেক বেশি সময় লাগতো। তাছাড়া পর্যটক আকর্ষণে বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে, যা অত্যন্ত জরুরি।
বিমানবন্দরে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা না থাকার সত্যতা স্বীকার করেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়িত্বরত কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিদেশি যাত্রীদের জন্য বিশেষ কোনো সুবিধা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেই। আমরা সব যাত্রীর জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছি। আগে আমাদের স্ক্যানিং মেশিন একটি ছিলো। কিন্তু এখন আছে তিনটি। ইমিগ্রেশনে সব কাজ মেশিনে হচ্ছে। সামনে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের উন্নয়ন করেছি। সবচেয়ে বড় কথা, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী করা হয়েছে।
বেবিচক সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে ৮ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে সক্ষম। ২০১৪ সালে ৬০ লাখ ৮৪ হাজার ২১৫ জন যাত্রী বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেন। যাত্রী ছাড়া ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮ টন মালামাল বিভিন্ন দেশে আকাশপথে পাঠানো হয়েছে এখান থেকে। প্রতিদিন ১৯০টি পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আরও জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও দেশে আরও দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি চট্টগ্রামে। সিলেটে রয়েছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রয়েছে আরও ছয়টি বিমানবন্দর। তবে এর মধ্যে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬
ইউএম/এএ/জেডএম
বছরজুড়ে দেশ ঘুরে
পর্যটন বর্ষেও পর্যটক আকর্ষণে ব্যর্থ শাহজালাল বিমানবন্দর
ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।