চলনবিল (নাটোর) থেকে ফিরে: চলনবিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল ও সমৃদ্ধতম জলাভূমিগুলোর একটি। দেশের সর্ববৃহৎ এ বিল বিভিন্ন খাল ও জলখাত দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত অনেক ছোট ছোট বিলের সমষ্টি।
নাটোরকে আলাদা করে বলার কারণ, সম্প্রতি এই অংশের চলনবিল ঘুরে এসেছে বাংলানিউজের বিশেষ দল। মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে বালুয়া বাসুয়া চৌরাস্তা থেকে যাত্রা শুরু হয়। এখান থেকেই চলনবিল নাটোরের সিংড়া অংশের বুক ফেঁড়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ চলে গেছে ২৮ কিলোমিটারের সড়ক। বেলা বারোর সূর্য মাথার উপর থাকলেও কুয়াশা তখনও কাটেনি। বাহন হিসেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
সেই ভ্রমণ থেকেই বিলের পথ ও প্রান্তর নিয়ে এবারের ধারাবাহিক আয়োজন। চোখ-মন ছুঁয়ে গেছে সবুজের সমারোহ, বকের ওড়াউড়ি, দূরের গ্রাম, জল-মাটি-মানুষসহ আরও কত কী! বিপুলা এ বিলের যতোটুকু চোখে ধরেছি, তার একশো ভাগের এক ভাগ ধরা গেছে ক্যামেরার ফ্রেমে। চলতি পর্বের মুহূর্তগুলো দেখে নেওয়া যাক।
হঠাৎ দেখা কুচবকের সঙ্গে। সহজে কী সে ধরা দেয়। আশেপাশে কারও আনাগোনা দেখলেই লুকিয়ে পড়ে কচুরিপানার ভেতর। এরপর অপেক্ষা কখন বেরোবে, কখন বেরোবে...
এরা চলনবিলের বাহন। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন উঠবে, এরা কীভাবে বিলের বাহন হবে, বিলের বাহন হবে নৌকা। শতভাগ ঠিক। তবে শুকনো মৌসুমে গণপরিবহন হিসেবে এদের ছাড়া গতি নেই। ব্যাটারি চালিত ভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলই সেখানে মূল ভরসা।
বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে বিলের গ্রামেও। আগে যেসব ভাবাই যেতো তাও এখন সম্ভব হয়ে উঠছে। তবে কথায় আছে, কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। বিলের বুক চিরে রাস্তা ও পোঁতা ইলেক্ট্রিক পোল বিলের জন্য কতোটা ক্ষতিকারক তা পরিবেশবাদীরাই বলবেন।
বিলের আল ধরে স্কুলফেরত দুই বিদ্যার্থী। পড়াশোনা শেষে আপন মনে দুই সহপাঠী বাড়ির দিকে ফিরছে। একদিকে কৃষকের মাঠে নবীন ধানের চারা, অন্যদিকে ঘরে নবীন শিক্ষার্থী- এ দুইয়ে মিলে তাকে এগিয়ে নিক।
গোবরের নানা ব্যবহার। সার হিসেবে তো বটেই, জ্বালানি হিসেবেও এর জুড়ি নেই। গোবর দিয়ে বানানো ঘুটে ও লাঠি বিক্রিও আয়ের অন্যতম উৎস।
সিংড়া-বারুহাস-তাড়াশ সড়ক হিসেবেই পরিচিত এটি। সিংড়া অংশে পড়েছে ১৪.৮৬০ কিমি। এর মধ্যে ৩৬০ মিটার ব্রিজ। চওড়া ২৪ ফুট। ১২ ফুট পাকা আর দু’পাশে শোল্ডার ১২ ফুট। তবে প্রথম তিন কিলোমিটার পিচের রাস্তা। এ অংশটুকু বেশি উঁচু। ডুববে না। পরের ১১ কিলোমিটার কংক্রিটের ডুবো সড়ক।
রাস্তার ধারকে কাজে লাগিয়ে চারপাশে মাটি তুলে মাছ ছাষ। পুকুরের পাড়ও বাদ যায়নি, সারিবদ্ধভাবে কলাগাছ লাগিয়ে সেখান থেকেও বেরিয়েছে আয়ের উৎস।
দূরে কুয়াশায় মোড়ানো কান্তনগর গ্রাম। দূরগাঁয়ের স্বভাব হলো হাতছানি দিয়ে ডাকা। তাতে প্রলুব্দ হওয়ার মনও হাজির ছিলো, কিন্তু শিয়রে মেঘ দেখে সামনে এগুতে হলো।
পথ চলতে চলতে ক্লান্তি, কোনো চিন্তা নেই। জিরিয়ে নেওয়া যাবে সিমেন্টের টুলে। যতোক্ষণ, যতোখুশি...
বিল আর পানির কথা হচ্ছে আর পানকৌড়ির কথা আসবে না তা কী করে হয়! ঠিক, যথাসময়ে নিজেকে জানানও দিলো। ঠিকঠাক যেনো ছবিতে আসে এজন্য পানি থেকে পোঁতা বাঁশের উপর উঠেও দাঁড়ালো!
বাংলাদেশ সময়: ০৭১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৬
এসএস/এএ
** চলনবিলের পথে-প্রান্তরে (পর্ব ১)
** আমহাটীর চামড়ায় সারাদেশে বাজে ঢাক-ঢোল
** ডুবো সড়কে ডুবছে চলনবিল
** ঝাড়ফুঁক-সাপ ছেড়ে ইমারতের পেটে!
** বিলের মাছ নেই চলনবিলের বাজারে (ভিডিওসহ)
** চলনবিলে হাঁস পুষে লাখপতি (ভিডিওসহ)
** হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট, ধুমছে খেলা (ভিডিওসহ)
** ভাসমান স্কুলে হাতেখড়ি, দ্বীপস্কুলে পড়াশোনা
** দত্তপাড়ার মিষ্টি পান ঠোঁট রাঙাচ্ছে সৌদিতে
** একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড়
** লাল ইটের দ্বীপগ্রাম (ভিডিওসহ)
** চলনবিলের শুটকিতে নারীর হাতের জাদু
** ‘পাকিস্তানিরাও সালাম দিতে বাধ্য হতো’
** মহিষের পিঠে নাটোর!
** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর
** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম