ঢাকা: ২৩২ কোটি টাকার পরিকল্পনা নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। পরিকল্পনা কমিশন সেটি মানেনি।
কমিশন অর্থ ছাড় এখনও না দিলেও ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আসছে বাজেটে পর্যটন খাতে বেশি বরাদ্দ দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনা কমিশনে সঠিকভাবে প্রস্তাব উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও পর্যাপ্ত অর্থ ছাড় না হওয়ায় পর্যটন বর্ষের যাবতীয় ঢাক-ঢোল পরিকল্পনা এখন অনেকটাই নিস্তব্ধ।
পরিকল্পনা কমিশনের অর্থ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকা পর্যটনমন্ত্রীকে সম্প্রতি মৌখিকভবে আশ্বস্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী।
পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী এবার পর্যটন খাতে বেশি বরাদ্দের কথা ইতোমধ্যে তাকে জানিয়ে দিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরে বাজেটে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিলো ৩৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। তবে এটি এবার দ্বিগুণ হতে পারে বলে-মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পর্যটনমন্ত্রী বলছেন, আমরা বিদেশি পর্যটকদের বিভিন্নভাবে আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছি। বিগত অর্থবছরে বিদেশি পর্যটকদের মাধ্যমে ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছি।
তিনি জানান, ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৪৪ হাজার ৪৬৬ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন টাকা, বা ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৫ লাখ ৭ হাজার টাকা আয় করেছে পর্যটন। এরমধ্যে ২০১০-১১ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৯৩৮ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৭ হাজার ৪৩৫ দশমিক ৪৫ মিলিয়ন টাকা, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৮ হাজার ৪৭৫ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ১০ হাজার ৯৯৫ দশমিক ২৭ মিলিয়ন টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে আয় হয় ১১ হাজার ৬২১ দশমিক ৫৪ মিলিয়ন টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ঘোষিত পর্যটন বর্ষ এর কার্যক্রম বর্ধিত থাকবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এই তিন বছরে মোট ১০ লক্ষ বিদেশি পর্যটকের বাংলাদেশে ভ্রমণকে লক্ষ্য ধরে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ৩০০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, সাথে তিন লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান এর সুযোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৮ সালে প্রায় ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক দেশে আনার লক্ষ্য নেয়া হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে কি পরিমাণ পর্যটক আসছে তার কোনো পরিসংখ্যান তুলে ধরেনি পর্যটন মন্ত্রণালয় ও খোদ বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।
এ অবস্থায় ১০ লাখ বিদেশি পর্যটক তারা কিভাবে নিয়ে আসবে- বছর শুরুতেই এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
তবে বিভিন্ন দেশের পর্যটন বর্ষ পালনের রেওয়াজ দেখে জানা গেছে, বছর তিনেক আগে থেকে বর্ষ পালনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে তারা।
বেসরকারিভাবে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে দেশে বিদেশি পর্যটক নিয়ে আসার কাজ করেন মাহমুদ হাসান খান। তার ‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩ বছরে ৫ হাজারের বেশি পর্যটক বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন।
তিনি বলছেন, পর্যটন বিকাশের জন্য পর্যটন বোর্ড নামের যে প্রতিষ্ঠান রয়েছে ওখানে জিএম-এ ভরা। এদের দিয়ে কাজের কাজ কিছু হয় না।
কয়েকটি দিবস ছাড়া পর্যটন বর্ষ নিয়ে এ পর্যন্ত তাদের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এমনকি দেশের পর্যটন নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত নেই সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের কাছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের জানিয়েছেন, পর্যটন বিকাশে ব্যাপকভাবে প্রচারণারকাজে বাজেটে সুস্পষ্ট বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। ১০ লাখ পর্যটকের আগমন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ১০০ কোটি ডলারের ব্যবসা সম্ভব হবে। এই হিসাবে আয়ের তুলনায় বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। আমাদের প্রতিবেশী অনেক দেশ এর চেয়ে বহু গুণ বেশি প্রচারণা খাতে খরচ করছে।
তিনি বলেন, পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সরকারি, বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে যথেষ্ট গড়ে উঠেছে। এই খাতে মোটামুটি সেবা দেওয়ার মতো জনশক্তি কাজ করে যাচ্ছে। এখন যদি বিশ্বের পর্যটকদের কাছে আমাদের দূতাবাসের সহযোগিতায় পর্যটনসংক্রান্ত পুস্তিকা, বিভিন্ন প্রচারসামগ্রী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার মাধ্যমে আমাদের ভাবমূর্তি তুলে ধরা যায়; ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার এবং বিদেশি বুদ্ধিজীবী ও ট্যুর অপারেটরদের উদ্দেশ্যে দেশে ফেমিলিয়ারাইজেশন ট্যুর যদি কার্যকর করা যায়, তাহলে প্রচুর পর্যটক বাংলাদেশে আসতে শুরু করবে। নতুন চাহিদা সৃষ্টি হলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন এবং নতুন নতুন সুবিধা সৃষ্টি করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৬
এসএ/জেডএম