সুবর্ণ এক্সপ্রেস থেকে: রেলে চড়ে বাংলাদেশ দেখার খুব ইচ্ছে থাকে বিদেশি পর্যটকদের। কিন্তু সেরকম কোন উদ্যোগ এখনও নেয়নি পর্যটন মন্ত্রণালয়।
রোববার সুবর্ণ এক্সপ্রেস যখন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচেছ তখন তার এলসিডি স্ক্রিনে চলছে মোশাররফ করিমের নাটক। তবে যেসব জেলা অতিক্রম করে যাচ্ছে ট্রেন সেসব জেলার সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হচ্ছে বটে, তবে তা একেবারেই সাদামাটা। এর বাইরে দীর্ঘ সময় খালি থাকছে মনিটর।
তবে রেলের ভ্রমণ থেকেই দেশের পর্যটন স্থান সম্পর্কে তথ্য ও বিভিন্ন স্পটের আকর্ষণ তুলে ধরা খুব সহজ বলে মনে করেন খোদ রেল বিভাগের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, পর্যটন বর্ষ সফলের জন্য ট্যুরিস্টদের যতো সুযোগ-সুবিধা দরকার হয় সেটা করতে রাজি আছে রেলপথ বিভাগ।
পর্যটন মন্ত্রণালয় কোন ফুটেজ বা ভিডিও দিলে সেটা খুব সহজেই চালানো যায় বলেও মত প্রকাশ করেন আমজাদ হোসেন।
দিন কয়েক আগে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের পনেরো জনের একটি ফটোগ্রাফি দল খুলনা থেকে রাজশাহী যাওয়ার জন্য একমাস চেষ্টা করেও টিকিট পায়নি। অবশেষে ভাঙ্গাচোরা বাসে করেই তাদের যেতে হয়েছে।
বিদেশিদের ট্রিপ তৈরি করে বাংলাদেশ ঘুরে দেখান এমন একটি প্রতিষ্ঠান ‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’র প্রধান মাহমুদ হাসান খান জানান, বিদেশিদের জন্য তিনি নিজেও চেষ্টা করে টিকিট কেটে দিতে পারেননি।
বিদেশিদের বাংলাদেশের ট্রেন চড়ার খুব ইচ্ছে থাকার পরও তারা ট্রেনের টিকিট পায় না। তাই কোন বিদেশিকে ট্রেনে চড়তে দেখা যায় না।
আর এ চিত্র একেবারেই ভিন্ন পাশের দেশ ভারত, এমনটি অন্যান্য দেশেও। ভারতে পর্যটকদের জন্য আলাদা ট্রেন সাজানো আছে বলে জানান মাহমুদ হাসান খান।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মহাপরিচালক বাংলানিউজকে জানান, বিদেশ থেকে ট্রেনের টিকিট কাটার সুবিধা দেয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এটা এখন অনেক কষ্টসাধ্য। তবে ভবিষ্যতে এটা করা যাবে।
বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট-এর নির্বাহী পরিচালক ও সাউথ এশিয়ান ট্যুরিজম ফেডারেশন সভাপতি রেজাউল একরাম বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেন থেকেই নতুন পর্যটন স্পট সম্পর্কে চমৎকার তথ্য পরিবেশন করা যায়।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে পার্কি বিচ সম্পর্কে আমরা যারা এ খাতে জড়িত তারাই জানি। কিন্তু নতুন পর্যটক বা যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগামে যান তারা সেটা জানেন না। তারা বরাবর পতেঙ্গা বিচে গিয়ে বিরক্ত। কিন্তু সহজেই ট্রেনে একটি ট্রেইলার চালিয়ে নতুন স্পটের তথ্য দিলেই যে কেউ তার পাশের সিটের বন্ধুকে বলবে ‘চল ঘুরে আসি’ নতুন এই জায়গায়’।
তিনি আরও বলেন, টিভি কমার্শিয়াল বা ফেসবুকে পেজ খুলে প্রচারণার চেয়ে ট্রেনে প্রচারণা চালালে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছুবে।
এছাড়া ট্রেনের ভেতরে পোস্টারিং করে ট্রেন সাজানো যায়- যা পর্যটক কাড়বে বলে মত দেন রেজাউল একরাম।
তবে ট্রেনে বিদেশি ট্রাভেলারদের জন্য সুযোগ সুবিধা তৈরির বিষয়টি যোগ করা হচ্ছে এমন বক্তব্য প্রায় দু’ মাস আগে বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন পর্যটন বোর্ড এর প্রধান নির্বাহী আখতারুজ জামান।
তবে এর পরে আর এ নিয়ে কোন উদ্যোগ নেই বোর্ডের।
আখতারুজ জামান বলেছিলেন, পর্যটকরা যে কোনো সময় টিকিট চাইলে যেনো পান, এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েছে। এ নিয়ে কাজ চলছে। যদি পর্যটকদের ট্রেনে ভ্রমণ বেশি হয় তাহলে প্রয়োজনে তাদের জন্য বিশেষ কম্পার্টমেন্ট করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে পর্যটকদের ক্ষেত্রে চাওয়া মাত্রই টিকেট দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে বিষয়টি আলাপ পর্যন্তই ছিলো-এর বাইরে আর কোন প্রস্তাব বা সুবিধা চায়নি বোর্ড- এমননি জানিয়েছেন রেল মহাপরিচালক।
এ বিষয়ে সর্বশেষ অবস্থান জানতে পর্যটন বোর্ড এর প্রধান নির্বাহী আখতারুজ জামানের মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৬
এসএ/জেডএম