সি বিচের শহর থেকে ফিরে: চট্টগাম এসে বিচে গেলাম না, তা তো হয় না! কিন্তু পতেঙ্গায় তো অনেক যাওয়া হলো। এবার মন চাইছে নতুন কিছু।
বাধা পেরুতে খোঁজ শুরু হলো আরও বড় পর্যায়ে। ট্রাভেলারদের জনপ্রিয় সাইটগুলো থেকে একের পর উত্তর এলো- ওদিকে যাবেন না। পার্কি বিচের পরিবেশ আর লোকজন সুবিধার নয়।
মনিরা ইয়াসমিন সেতু নামে একজন ট্রাভেলার বললেন, বিচে প্রচুর ছেলে বাইক চালানো শিখে। গায়ের উপর তুলে দিতে চায় এমন ভাব। পানিতে পা ভিজাতেও বাজে লাগে। এর চেয়ে নেভাল বিচ ভাল।
কিন্তু যখন ঢাকা থেকে চট্টগামের পথে যাচ্ছিলাম তখন সাউথ এশিয়ান ট্যুরিজম ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট রেজাউল একরাম মোবাইল ফোনে জানিয়েছিলেন, পতেঙ্গায় তো সবাই যায়, নতুন কোথাও যেতো পারো।
তেমটা পরিচিত নয়- এমন বিচ পার্কির কথাও বললেন তিনি। অনেকেই নাকি জানে না এই বিচ সম্পর্কে। তাই চট্টগ্রাম নামার পর থেকেই আগ্রহ ছিলো এই বিচ নিয়ে।
তবু অপেক্ষা আরও তথ্যের। কিন্তু বেশিরভাগ তথ্যই নেতিবাচক! ট্রাভেলার সাইট থেকে আরেকটি উত্তর ‘বিচটা নিরাপদ মনে হয়নি’।
নিরাপত্তাহীনতার কী দেখেছেন? পরবর্তী এমন প্রশ্নে যারা সম্প্রতি ঘুরে এসেছেন তাদের একজন বললেন, আমরা ওখানে ধোঁকাবাজদের কবলে পড়েছিলাম।
এরপর কিছু আশার বাণী এলো- শাওন রহমান নামে একজন ট্রাভেলার বললেন, সবাই যেভাবে খারাপ বলছে, ততটা খারাপ কিন্তু নয়। তবে ওখানে কক্সবাজারের মত আধুনিক সুযোগ সুবিধা কিছুই নাই। তবে আপনি যাচ্ছেন ঘুরতে। সমুদ্রের জলরাশি দেখতে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বেশ ভালো। ঘুরে আসেন, ভালো লাগবে আশা করি। ’
আমিও তাই-ই চাই। সুযোগ সুবিধার দরকার নেই। দরকার প্রকৃতি। চাই শরীর এলিয়ে মাটির বুকে একটু ভাবুক হতে, অথবা সমুদ্র তীর ঘেঁষে বালু কণার উপর খালি পায়ে হাঁটতে। দেখতে চাই ঢেউয়ের স্পর্শে চপল পায়ের ছাপ মিশে যাওয়ার দৃশ্য।
কিন্তু সে ইচ্ছেটা শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে নাকি না-এই নিয়ে বিবাদ আর থামছে না।
আরেকজন বললেন, রাস্তা খারাপ, এটা ঠিক, তবে বিচটা খারাপ না। সুযোগ সুবিধা কম আর লোকজন ধান্ধাবাজ।
আমার সঙ্গে ট্যুরে আরও কয়েকজন। কারও এবার প্রথম ট্যুরে বের হওয়া। সবাই কিন্তু অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন না। তাই ঝুঁকি নেয়াটা ঠিক হবে না। আরও ভাবনায় পড়লাম। এদিকে বেলা গড়িয়ে দুপুরের দিকে ঘড়ির কাঁটা…
ওখানে যেতে চট্টগাম শহর থেকে দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি লাগবে-এই ভয় দিয়েও কেউ বারণ করলেন।
ঢাকা থেকে ট্রিপ টু বাংলাদেশের মাহমুদ হাসান খান সাহস দিয়ে বললেন, আমি একা দু’বার গিয়েছি। কোন নিরাপত্তা সমস্যা দেখিনি।
তিনি জিপিএস থেকে সচিত্র সহজ পথটাও বলে দিলেন। বলে দিলেন, কর্ণফুলি নদী পার হয়ে সিএনজি দিয়ে সহজেই যাওয়া হবে আনোয়ারার পার্কি বিচ। নদী পার হলেই সিএনজি পাওয়া যাবে।
কিন্তু এদিকে বেলা গড়িয়ে বিকেল। দু:খিত! পার্কি বিচ।
আবার সেই পতেঙ্গা! সকালে তো গেলামই একবার। হাঁটলাম, যতটা প্রকৃতি চেয়েছিলাম ততটা না পেলেও সন্তুষ্ট ছিলাম।
তবে বিদেশি পর্যটকদের জন্য শুধু স্পিড বোট, কয়েকটি ঘোড়া আর কয়েকটি হোন্ডা দিয়ে আকষর্ণ করা যাবে না।
নানা দেশের বিচ ঘুরে আসার অভিজ্ঞতার পর ওরা যখন পতেঙ্গায় আসবে তখন নিশ্চিত হতাশ হবে। ওরা খুঁজবে অ্যাডভেঞ্চার! ওরা দিনের কয়েক ঘণ্টা বিচে কাটিয়ে রাতে খুঁজবে ‘নাইট লাইফ’। কিন্তু তাতো নেই।
আবার পতেঙ্গার পথে যানজট সমুদ্র তীরে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ নিমিষেই হাতছাড়া করে দিতে পারে। তার উদাহরণ থেকে অল্পের জন্য এবার রক্ষা পেয়েছি। কারণ বিকেলে যখন চট্টগ্রাম শহর থেকে পতেঙ্গার পথে, তখন সামনে চট্টগ্রাম ইপিজেডের যানজট। তার সামনে আবার কর্ণফুলি ইপিজেডের যানজট। হালিশহর পেরুতেই সন্ধ্যা নামা শুরু।
বিচে গিয়ে দেখি সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। জোয়ারে ভাসছে সমুদ্র। যেখানে সকালে হেঁটে গল্প করেছিলাম সেই জায়গা অনেক দূরে ঢেউয়ের তোড়ে ভাসছে যেনো। আর তখন পতেঙ্গা কোন বিচ নয়, মনে হচ্ছে নদী তীর!
বিকেলে শহর থেকে গিয়ে পতেঙ্গা বিচ দেখে ফিরে আসাটা তেমন লাভের নয়। আর কাট্টলি বীচে যাওয়া হলো না। পার্কি বিচতো অনেক দূর....।
বিচ বিবাদের এই সমাধান করতে হলে আবার আসতে হবে বিচের শহরে। এক এক করে নামতে সব বিচের স্বচ্ছ অস্বচ্ছ জলে।
দেশে পর্যটন বিকাশ এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে নিয়োজিত সংস্থা পর্যটন করপোরেশন এ কি ভাবছে? পর্যটন বর্ষে এ নিয়ে কি আছে পরিকল্পনায়- এই উত্তরটাও জানা দরকার ছিলো।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ পারভেজ আহমেদ চৌধুরী জানান, সরকার মংলা, পায়রা বন্দর এবং পার্কি পতেঙ্গা নিয়ে বড় পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকার পর্যটন খাত এগিয়ে নিতে এবং বহুমুখী পরিকল্পনা এবং নতুন নতুন বিষয় সংযোজনের চেষ্টা করছে।
পর্যটন করপোরেশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা রায়হান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘পতেঙ্গা সী বিচের পাশে পাঁচতারকা মানের একটি হোটেল এবং পার্কি বীচের পাশে রেস্টুরেন্ট ও গাড়ি পার্কিং এরিয়া উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বেশ এগিয়ে নেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, পার্কি ও পতেঙ্গায় দুটো পুলিশ ফাঁড়ি দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পতেঙ্গায় তারা কাজ শুরু করেছে, আর পার্কিতে খুব শিগগিরই ফাঁড়ি স্থাপন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ১, ২০১৬
এসএ/জেডএম
** বিদেশিদের চোখে বাংলাদেশ
** ট্রেনে বিদেশি নেই, সুবিধাও নেই