সেন্টামার্টিন (কক্সবাজার) থেকে: অকূল সাগরে, কোনো কূল কিনারা নেই। এরপরও মানুষ উত্তাল সমুদ্রের জলরাশি ভেদ করে পাড়ি জমায় গন্তব্যে।
বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এখানকার স্বচ্ছ পানি আর জীব-বৈচিত্র্য মানুষকে কাছে টানে খুব। কিন্তু দেশের মূল ভূখণ্ড পৃথক এই দ্বীপে যাওয়ার জন্য সাগরে নেই কোনো নির্দিষ্ট চ্যানেল, জাহাজে নেই বয়াও (বয়া হচ্ছে- সাগরে জাহাজ চলাচলের জন্য ভাসমান সিগন্যাল পয়েন্ট)।
তাই ঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত জাহাজের নাবিককে আন্দাজের ওপর নির্ভর করে অকূল সমুদ্রের উদ্দেশে রওনা দিতে হয়।
সাগরের ঢেউয়ে হেলে দুলেই টেকনাফের দমদমিয়াঘাট থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টামার্টিন যান দেশি-বিদেশি পর্যটকরা।
বুধবার (০৬ এপ্রিল) সেন্টমার্টিন-দমদমিয়াঘাটে চলাচলকারী কেয়ারি ক্রুজে চড়ে আমাদেরও এমন অভিজ্ঞতা হলো।
কেয়ারী ক্রুজের সহকারী ব্যবস্থাপক (ইনচার্জ) মোহাম্মদ শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের কাছে সরকারি কোনো ম্যাপ নেই। চোখের আন্দাজেই ঝুঁকি নিয়েই সাগর পারি দিতে হয়।
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টামার্টিন যেতে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিতে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় দমদমিয়া ঘাট থেকে সেন্টামার্টিনের উদ্দেশে জাহাজ ছেড়ে যায় কেয়ারী ক্রুজ। যা পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর ১২টা বেজে যায়।
এরপর বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩ টার মধ্যে সেন্টামার্টিন থেকে জাহাজ ছেড়ে আসে দমদমিয়াঘাটের দিকে। সমুদ্রে সর্বোচ্চ প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল গতিতে জাহাজ চালানো হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
কেয়ারী ক্রুজের মাস্টার মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, জাহাজ চলাচলে প্রধান সমস্যা আমাদের কাছে সরকারি কোনো ম্যাপ নেই। নেই কোনো বয়াও।
‘এরমধ্যে সাগরে মাঝে মাঝে জাল ফেলেও জাহাজ চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। ’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা জাহাজ ছাড়ার আগেই ঢাকায় আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করে নিই, কোনো সংকেত আছে কি না? সংকেত জারি থাকলে জাহাজ ছাড়ি না।
‘তারপরও ঝুঁকিতে থাকি শেষ ভাটার সময়। সাগরে ভাটার সময় জাহাজ আটকে যায়, আর এতেই যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাই আমাদের একটি সঠিক চ্যানেল নির্ধারণ করে একটা ম্যাপ দরকার। দরকার বয়াও ফেলে রুট ঠিক করে দেওয়া,’ যোগ করেন দেলোয়ার হোসেন।
একই সমস্যার কথা জানালেন কেয়ারী ক্রুজের ক্যাটেন মো. মনির হোসেনও।
বললেন, সাগরে চলাচলের চ্যানেলে বয়া নেই। তাই জাহাজ আটকে গেলে মাঝে মাঝে পত্রিকায় নিউজ আসে নাবিকদের অদক্ষতায় এমনটি হচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়।
তিনি বলেন, সাগরে জাহাজ চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট বয়া থাকতে হবে, সেটা নেই। এরজন্য সরকারিভাবে জরিপ জাহাজের মাধ্যমে চ্যানেল নির্ধারণ করে বয়া বসানো অতিব জরুরি।
‘বয়া বসানো হলে দিনে দুইবার নয়, ২৪ ঘণ্টাই জাহাজ চালানো সম্ভব, যোগ করেন ক্যাপ্টেন মনির।
তিনি জানান, এক সময় দমদমিয়াঘাট-সেন্টমার্টিন রুটে ৫টি বয়া ছিল। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এখন সেই বয়াগুলো সমুদ্রের ঢেউয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
কেয়ারী ক্রুজ জাহাজের চলাচলে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রাখা হয়েছে। রয়েছে দিক নির্ণয় পদ্ধতি (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম-জিপিএস), ইকো সাউন্ডার (নদীর গভীরতা মাপার যন্ত্র), রয়েছে অন্ধকারে চলার জন্য পথপ্রদর্শক রাডারও।
এছাড়া একটি ওয়্যারলেস রয়েছে জাহাজে, যা দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার এলাকায় যোগাযোগ করতে পারেন জাহাজের মাস্টার ও ক্যাপ্টেন। প্রয়োজনে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
এসএম/এমএ
** খেলায়-হেলায় সমুদ্র সৈকতকে আঘাত