সেন্টমার্টিন থেকে: সেন্টমার্টিনের সর্ব দক্ষিণে সরু লেজের মতো অংশ ছেঁড়া দ্বীপ নামেই পরিচিত। দিনের বেশিভাগ সময় এটি সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে।
এখানকার মূল আকর্ষণ প্রবাল পাথর। জোয়ার-ভাটার খেলায় এসব প্রবাল সকালে ডুবে, বিকেলে ভাসে। জোয়ার-ভাটার খেলায় শেষ যে পাথরটি দেখা যায় স্থানীয়রা সেটিকে জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমীর নামেই ডাকে। মজার বিষয় হলো এ ছেঁড়া দ্বীপে যে একটি পরিবার থাকে তাদের মেয়ের নামও মৌসুমী! হয়তো ওই পাথরের নামেই তার নাম রাখা হয়েছে!
ওই পাথরের নাম মৌসুমী রাখার কাহিনী ভিন্ন! স্থানীয়রা জানালেন, নায়িকা মৌসুমীর নামে পাথরের নামকরণের হেতু। ‘অন্তরে অন্তরে’ ছবিতে ‘এখানে দু’জনে নির্জনে, সাজাবো প্রেমেরও পৃথিবী...’ এ গানের সঙ্গে মৌসুমী ওই পাথরে উঠে নাচ-গান করেছিলেন (নায়ক ছিলেন প্রয়াত সালমান শাহ)। সেই থেকে এ পাথরটিকে ‘মৌসুমী পাথর’ বলে জানে সবাই!
এ দ্বীপটি মূল সেন্টমার্টিন থেকে জোয়ারে ছিড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলেই ডাকা হয় ছেঁড়াদ্বীপ। দ্বীপে ওই একটি পরিবার ছাড়া আর কেউ বসতি গড়েননি।
ছেঁড়া দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা মৌসুমীদের পরিবারই যেন সব অতিথিদের বরণ করে নেয়। সেই সকাল থেকে ঘর লাগোয়া একটি কোনো রকমের দোকান থেকে নারিকেল, পানীয়সহ খাওয়ার মত সামান্য কিছু বিস্কুট পাওয়া যায়।
প্রবাল ঘেরা ছেঁড়াদ্বীপের আকর্ষণ প্রবাল পাথর ছাড়াও উত্তাল তরঙ্গমালা সাজিয়ে তুলেছে এ ভূ-খণ্ড।
টেকনাফ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সেন্টমার্টিনের শেষাংশ ছেঁড়া দ্বীপ। পূর্ণ জোয়ার হলে দ্বীপটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেন্টমার্টিন থেকে। তখন সেন্টমার্টিন অংশ খোলা চোখে ঠিকমতো দেখা যায় না। প্রবালঘেরা ছেঁড়া দ্বীপ দেখে এটা মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক যে, ছেঁড়া দ্বীপের সীমান্তরক্ষীর কাজ করছে প্রবাল।
যত্রতত্র পর্যটকদের চলাচল নিয়ন্ত্রণও করছে প্রবাল। প্রবালের ফাঁদে পা কেটে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই ছেঁড়াদ্বীপের পানিতে নামতে সাহস পান না।
কেওড়া গাছের ঘন জঙ্গলে ভরা ছেঁড়া দ্বীপের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর নির্জনতা। কেওড়া ছাড়াও নিশিন্দি সাগরতলা, প্রবালের ফাঁকে ফাঁকে আটকে পড়া রঙ্গিন মাছ, শামুক ঝিনুক, কাকড়া জীবিত আর মৃত প্রবালই এ দ্বীপের স্বাধীন বাসিন্দা!
তবে মাঝে-মধ্যে তাদের এ স্বাধীনতায় আঘাত হানে বড় বড় ট্যুর টিম। বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে যখন ছেঁড়াদ্বীপে হাঁটছি তখন ঢাকা থেকে প্রায় দেড়শো পদ্মা ট্যাংকের সেলসম্যান, ডিলারদের গমনে নির্জনতা ভেঙে গেছে। এ যেন ছেঁড়া দ্বীপের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে আঘাত।
ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া দু’ চারজনের পর্যটক দল এসব বড় বড় ট্যুরিস্টদের যন্ত্রণায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন।
তাদের অভিযোগ, পদ্মা ট্যাংকির শতাধিক লোক ছেঁড়া দ্বীপে মোটেও নিরাপদ নয়। এদের দ্বারা ছেঁড়া দ্বীপের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাদের ফেলা যাওয়া বর্জ্য দুষিত করছে ছেঁড়া দ্বীপের নির্মল প্রকৃতি। আবার তাদের কারণে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া অনেক পর্যটক নির্ধারিত সময়েও ফিরতে পারছেন না। কেউ কেউ বিরক্ত হয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের নম্বর খুঁজছেন অভিযোগ দিতে।
সেন্টমার্টিন থেকে এখানে পায়ে হেঁটেও আসতে পারেন। সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা। ছেঁড়া দ্বীপে সেন্টমার্টিন জাহাজ ঘাট থেকে স্পিড বোটে সময় লাগে আধঘণ্টা, আর ট্রলারে গেলে পুরো একঘণ্টা সময় লাগে। তবে ট্রলার বা স্পিড বোটে করে দ্বীপ ঘেঁষে এলে প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য খুব ভালভাবে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এসএ/এসএইচ
** পরিত্যক্ত পড়ে ছেঁড়া দ্বীপের একমাত্র মসজিদ
** সেন্টমার্টিনে বাজার সদাইয়ের সংগ্রাম