ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

নোনা দ্বীপে মিষ্টি পানি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০১৬
নোনা দ্বীপে মিষ্টি পানি ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেন্টমার্টিন থেকে: বঙ্গোপসাগরের কোলে অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত দ্বীপ সেন্টমার্টিন। নোনা জলের এ সাগরদ্বীপ গঠনের মূল উপাদান বালি, প্রবাল ও মাটি।

মাটিতেও বালির আধিক্য। তবে অবাক বিষয়, মাটি খুঁড়লে যে পানি পাওয়া যায় তাতে নেই কোনো লবণের ছোঁয়া। বরং একটু বেশিই মিষ্টি।

আট বর্গকিলোমিটারের (সূত্র: জেলা তথ্য বাতায়ন) নীল পানিবেষ্টিত এ দ্বীপে সুপেয় পানি সংগ্রহের প্রধান উৎস টিউবওয়েল। এছাড়া ব্যক্তিগত কুয়া খুঁড়েও পানি সংগ্রহ করা হয়। আরও অবাক বিষয়, এখানে তিনটি মিঠাপানির পুকুরও রয়েছে। তাতে মেলে মিষ্টি পানির কয়েক প্রজাতির মাছ। পুকুরের পানি মূলত বর্ষা মৌসুমে গোসলের কাজেই ব্যবহার করা হয়। ১২ হাজারের বেশি নারিকেল গাছের এ দ্বীপে প্রতিবছর আসেন কয়েক লাখ পর্যটক। আর নোনা পানিবেষ্টিত দ্বীপে মিষ্টি পানির পুকুর দেখে বিস্মিত হন তারা। পানি পানের ক্ষেত্রেও তাদের অভিজ্ঞতা একই। তিনটি পুকুরে একটি উত্তরপাড়া, একটি মধ্য উত্তরপাড়া ও আরেকটি বড় বিলে।

মধ্য উত্তরপাড়ার পুকুরটির অবস্থান জেটি থেকে নেমে প্রধান ডুবো সড়ক ধরে উত্তর-পশ্চিম দিকে। রাস্তার পাশে মসজিদের সামনে খোঁড়া অনেকটা চৌবাচ্চা আকৃতির ২০-২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের পুকুরটি। এ পুকুরের পানি পান করা হয় না। মূল ওজু করা হয়। ভাঙন ঠেকাতে চারপাশ বাঁধানো পোড়া ঝামা ইটের রঙের বড় বড় প্রবাল খণ্ড দিয়ে। কালচে কিন্তু স্বচ্ছ পানিতে দেখা মিললো মিষ্টি পানির তেলাপিয়া মাছ। এছাড়া ছোট প্রজাতির আরও কিছু মাছ রয়েছে বলে জানালেন স্থানীয় মসজিদের হাফেজ আবুবক্কর। তিনি বলেন, আমরা ছোটকাল থেকেই এটা দেখছি। আনুমানিক ৬০-৭০ বছর হবে পুকুরটির বয়স। মসজিদে যারা নামাজ পড়তে আসেন তারা এখানে ওজু করেন। পড়তে আসা বাচ্চারাও। দু-চার প্রজাতির মিঠাপানির ছোট মাছ হয় এতে। গভীরতা খুব নয়, ১০ ফুটের মতো।

পুকুরটির ঘাট আবার বাঁধানো হয়েছে ঢালাই করে। আর পাড় প্রবালের। সবমিলিয়ে দেখতেও বেশ নান্দনিক বর্গাকৃতির এ পুকুরটি। তবে এর আগে উত্তর পাড়ায় রাস্তার বাঁপাশে পড়বে আরও একটি পুকুর। এটির দৈর্ঘ্য ১১০-১৪০ ফুটের মধ্যেই হবে বলে জানালেন বিএন ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহবুব। তার দাবি, এ দ্বীপে বসতি ২শ’ বছরের। আর পুকুরটি রয়েছে ১শ’ বছরের উপরে। মাটি খুঁড়লেই প্রবাল, তাই গভীরতা ১০-১২ ফুটের বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। চারপাশে নারিকেল গাছ ঘেরা পুকুরটির পানির অবস্থা খুব ভালো নেই। বলা যায় ব্যবহারের অনুপযোগী। পুকুর খোঁড়ার সময় যে প্রবাল পাওয়া যায় সেগুলোর কিছু রাখা হয়েছে পাড়ে। গোসল ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার হয় না পুকুরটি। আছে তেলাপিয়া, মলাসহ কয়েক প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ।

পুকুর থাকলেও মূলত টিউবওয়েলের উপরেই নির্ভরতা দ্বীপবাসীর। খাওয়া-গোসল সবই। মাটির স্তর খুব বেশি নয় ৮ থেকে ১২-১৩ ফুটের মধ্যেই। এর বেশি পাইপ বসানো যায় না। তাতেই মেলে সুপেয় পানি। কেউ কেউ ছোট কুয়া খুঁড়ে রাখেন। তাতে জমা হওয়া পানি দিয়েই চলে যায় জীবন। আর আবাদের জন্য ব্যবহার করা হয় গর্ত পদ্ধতি। মাঠের মাঝে করে রাখা গর্তে জমা হওয়া মিষ্টি পানি দিয়েই চলে যায় চাষাবাদের কাজ।

এভাবেই জীবন চলে নোনা দ্বীপের বাসিন্দাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এএ/জেডএস

** ছেঁড়া দ্বীপের মৌসুমী!
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ