কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে: কোনো উড়োজাহাজ উঠছে, আবার কোনোটি নামছে। উড়োজাহাজের এমন অবতরণের সময় রাস্তা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছে দু’টি বেওয়ারিশ কুকুর।
কুকুরটি রানওয়েতে দৌঁড়ানোর কারণে দু’জন নিরাপত্তাকর্মীকেও ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। টানা দশ মিনিট নিরলস চেষ্টার পর কুকুরটিকে রানওয়ে থেকে সরানো হয়।
বৃহস্পতিবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার এমন ঝুঁকিতেই চলছে অভ্যন্তরীণ এ বিমানবন্দরটি।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বৈমানিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করছেন, রানওয়েতে কুকুরের এমন বিচরণে যেকোনো সময় প্রাণহানিসহ বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।
২০১৩ সালে ৩০ অক্টোবর এ বিমানবন্দরে বড় দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলো ৪৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে আসা একটি উড়োজাহাজ।
দেশি-বিদেশি ৪৫ জন যাত্রী সেদিন রিজেন্ট এয়ারে বিকেলে ঢাকা থেকে রওনা দেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেটি কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামে।
কিছুক্ষণ পর বিমানটি জোরে একটা ধাক্কা খায়। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা হইচই শুরু করেন। তাড়াহুড়ো করে যাত্রীরা রানওয়েতে নেমে দেখেন, একটি কুকুর বিমানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মরে পড়ে রয়েছে এবং বিমানের জ্বালানি ট্যাংক ফেটে তেল রানওয়েতে পড়ছে।
২০১৩ সালের ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিমানবন্দরে দায়িত্বরত একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, রানওয়েতে কুকুর প্রবেশ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। একটা কুকুর প্রবেশ করলে আমরাও আতঙ্কিত থাকি।
বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দরের চারদিকে সীমানাপ্রাচীর থাকলেও ভাঙা অংশ এবং ফটক দিয়ে প্রায়ই রানওয়েতে বেওয়ারিশ কুকুর ঢুকে পড়ে। জনবল কম থাকায় সব সময় এসব তদারকি করা যায় না।
বিমানবন্দরে যাত্রীদের বসার রুমে দেখা গেছে, এয়ারকন্ডিশন যন্ত্র কাজ করছে না। অনেকক্ষণ গরমে বসে থাকার পর যাত্রীদের বিরক্তির মুখে একপর্যায়ে টেকনিশিয়ান সেটি ঠিক করে দিয়ে যান।
বিমানবন্দর ঘুরে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার বেহালচিত্রই দেখা গেছে। বিমানবন্দরে একাধিক নষ্ট উড়োজাহাজ পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে বন্দরের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে বলে যাত্রীদের মত।
ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মাণ করা হয় কক্সবাজার বিমানবন্দর। সময়ের পরিক্রমায় পর্যটন এলাকা হিসেবে দেশ-বিদেশে কক্সবাজার হয়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ণ। সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি বিমান যোগাযোগের গুরুত্বও বেড়েছে।
ফলে এখানকার বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার দাবি ছিল দীর্ঘদিন ধরে।
২০০৯ সালের অক্টোবরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ যাত্রা শুরু হয়। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ ২০১৩ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও তখন আর হয়ে ওঠেনি।
সরকারের মহাপরিকল্পনার আওতায় দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যা শুরুর কথা ছিল ২০১৩ সালে। ‘ডেভেলপমেন্ট অব কক্সবাজার এয়ারপোর্ট প্রকল্প’ নামে ৩০২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রথম ধাপের কাজ ২০১৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নানা কারণে তাও হয়নি।
তবে দেরিতে হলেও সরকার এ বিমানবন্দর আধুনিকায়নে উদ্যোগ নেয়। অবশেষে গত বছরের ০২ জুলাই গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (প্রথম দফায়) সম্প্রসারণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের আওতায় প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করার পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৩০ মাস। বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৬৭৭৫ বর্গফুট থেকে ৯০০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। প্রস্থ বাড়িয়ে ১৫০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হবে।
এখানে স্থাপিত হবে নতুন ডিভিওআর, ডিএমই, আইএলএস, এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম। রানওয়ের লাইটিং ফ্যাসিলিটিজও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি নেভিগেশন এইড বাজানো হবে। উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে বড় আকারের ফ্লাইট ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি দেওয়া যাবে। তবে বিমানবন্দরের এসব কাজ ঠিক সময়ে শেষ হবে কি-না এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এডিএ/এএসআর
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ