সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে: আত্মগোপন করেও রেহাই নেই তাদের। খাবার হিসেবে না হোক মাছ ধরার টোপের জন্য তাদের প্রয়োজন নেহায়েত কম নয়।
আর বের করেই মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বেশিরভাগ কাঁকড়ার হাত-পা। দ্রুত যাতে মরে না যায়, এ জন্য শুধু দু’টি পা রেখে দেওয়া হয়। কাঁকড়াগুলো যখন হাত-পা ভাঙার যন্ত্রণায় কাতর, ঠিক তখনই বড়শি ফুটিয়ে দেওয়া হয় শরীর ভেদ করে।
এমন নির্দয় আচরণ করছে সেন্টমার্টিনের জেলেরা। কাঁকড়াগুলো বড়শিতে গেঁথে প্রবালের ফাঁকে ফাঁকে বসানো হচ্ছে কোরাল মাছ শিকারের জন্য।
এ কারণে সূর্যের আলো ফোটার আগেই বিচে দলবেঁধে নামে কাঁকড়া শিকারিরা। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) ভোরেও সেন্টমার্টিন পশ্চিম বিচে এ রকম বেশ কয়েকটি চক্রকে দেখা গেলো।
বিশাল আকারের কোদাল আর খলই হাতে নিরীহ প্রাণী কাঁকড়ার জীবন বধ করতে নেমেছে ওরা। তিন থেকে চার কোপেই পৌঁছে যাচ্ছে গর্তের শেষ প্রান্তে। শেষে দিকে কিছুটা সাবধানীভাবে কোপ দিচ্ছেন তারা, যাতে কোদালের কোপে মারা না যায়। শরীর কেটে গেলে সেটি আর নেওয়া হচ্ছে না। কারণ তাতে টোপ হিসেবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
এ রকম একজন কাঁকড়া শিকারি রফিকুল ইসলাম। গর্ত নির্বাচন করে প্রথম দিকে দ্রুত কোদাল চালালেন। শেষ প্রান্তে তিন-চার ইঞ্চি গর্ত রেখে কোদাল থামিয়ে হাত দিয়ে গর্তের মুখ প্রশস্ত করে টেনে বের করে আনলেন ছোট আকারের একটি কাঁকড়া। চোখের পলকে মুচড়ে ভেঙে দিলেন পা দু’টি। পরে দুই পাশের দু’টি করে চারটি পা ছিঁড়ে ফেলে দিলেন। যখন হাত-পা ভাঙছিলেন, তখন রফিকুল ইসলামের চোখে মুখে পৌরুষত্বের ছাপ যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছিলো। শিকার ধরে ফেলায় নাকি ভিডিও করা দেখেই খানিকটা পৌরুষত্ব জাহির করছিলেন, তা অনুমান করা গেলো না।
চোখের পলকে মুমুর্ষূ কাঁকড়াটি খলই’র মধ্যে রেখে ছুটলেন অন্য গর্তের দিকে। এক ইঞ্চি প্রশস্ত আরেকটি গর্ত দেখে ধপাধপ কোদাল চালিয়ে কাঁকড়া ধরে একই কায়দায় হাত-পা ভেঙে খলইয়ে রাখলেন।
তিনি নাকি গর্ত দেখলেই বুঝতে পারেন তাতে কাঁকড়া আছে কিনা। তার কথার প্রমাণ মিললো সঙ্গে সঙ্গেই। বেছে বেছে কোদাল বসাচ্ছিলেন। আর খপ করে ধরে হাত-পা ভেঙে ভরছিলেন খলইয়ে। এগুলো খাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, না এই কাঁকড়াগুলো খায় না। এগুলো দিয়ে কোরাল মাছ শিকার খুবই সহজ। বড়শিতে গেঁথে প্রবালের ফাঁকে রেখে দিলেই ধরা পড়ে কোরাল মাছ।
তাহলে হাত-পা নির্দয়ভাবে ভাঙার কি দরকার। আর বাঁচিয়ে রাখার জন্য মাত্র দু’টি পা-ই বা রাখার প্রয়োজন কি। জবাবে বলেন, মারা গেলেতো কোরাল শিকার করা যাবে না!
রফিকুল ইসলামের মতো আরও বেশ কয়েকটি চক্রকে দেখা গেলো সাদা, সবুজ ও বাদামি রঙের বিরল প্রজাতির এই কাঁকড়াগুলো শিকার করে। যারা গোটা সৈকতজুড়ে আল্পনা আঁকতে ব্যস্ত।
বুধবার বাংলানিউজে প্রকাশিত (**সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা) সংবাদে পাঠকরা নিশ্চয়ই জেনেছেন, এই দক্ষ শিল্পীরা খানিকটা আত্মপ্রচার বিমুখ। না হলে মানুষের পায়ের শব্দ পেলেই দ্রুত আত্মগোপন করবে কেন? বড় প্রশ্ন ছিলো তাদের এই আল্পনা বৈশাখ উপলক্ষে নাকি প্রতিবাদের!
তাদের এই নীরব প্রতিবাদের ভাষা কি কেউ বুঝতে পারবে! কেউ কি আসবে এগিয়ে! নাকি এভাবে নির্মম মৃত্যুবরণ করতে করতে একদিন তাদের বংশে আর বাতি জ্বালানোর জন্য কেউ অবশিষ্ট থাকবে না!
বৃহস্পতিবার ভোরের এই দৃশ্য দেখে আনন্দিত হওয়ার কোনো অবকাশ থাকলো না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
এসআই/এটি
** রানওয়েতে কুকুর, বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন