সেন্টমার্টিন থেকে: দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন যারা ঘুরেছেন তাদের হয়তো ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার ইতিহাস কম-বেশি জানা। কিন্তু যারা এখনো যাননি, যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন ছেঁড়া দ্বীপে যেতে, তাদের জন্য অবশ্য কিছু করণীয় রয়েছে।
নিজের ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি সেসব করণীয়গুলো। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ করতে আসা।
এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় সেন্টমার্টিনের জাহাজ ঘাট থেকে দলবদ্ধ হয়ে ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশে রওয়ানা হই ৯ জন। সঙ্গে ছিলেন ঢাকা থেকে আসা পদ্মা ট্যাংকের কিছু প্রতিনিধি ও এক দম্পতি।
জাহাজ ঘাট থেকে ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র বাহন ছোট স্পিডবোট আকৃতির ইঞ্জিনচালিত ছোট বোট ও নৌকা। ছোট এ বোটেই চাপাচাপি করে ২৪ জন বসতে হয়। বোটে রয়েছে লাইফ জ্যাকেট। তবে চালকের বয়স দেখলে প্রথমেই আঁতকে উঠবেন যে কেউ। মাত্র ১২ থেকে ১৩ বছরের একটি বালক দুই সহযোদ্ধাকে নিয়ে বঙ্গোপসাগরের ভেতর দিয়ে ঢেউয়ের তাল ভেঙে চালাচ্ছে বোট।
তার আগে বোটে ওঠার বর্ণনা দিতে হয়। সকালে যখন জোয়ার থাকে তখন জেটির ঘাট থেকে একে একে খুব সাবধানে বোটে উঠতে হয়। এখানে একটু পা পিছলে গেলে পড়তে হবে সাগরে। তাই নারী ও শিশুদের ওঠার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই।
তবে এখানে শেষ হলেই কথা ছিল না। ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে।
যে বোটে চড়ে দ্বীপে যেতে হয়, সেই বোট কিছুদূরে যাওয়ার পরই পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে সঙ্গী করা হয় একেবারে ছোট একটি ডিঙি নৌকা। কারণ মূল বোটটি দিয়ে সরাসরি ছেঁড়া দ্বীপে নামা সম্ভব নয় ভাটা ও নিচে বড় বড় ধারালো প্রবালের কারণে। সাগরে যখন জোয়ার থাকে তখন দ্বীপের একেবারে গা ঘেঁষেই নীল জলরাশি থৈ থৈ করে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ভাটার সময়। তখন সেখানে বালুচর বা প্রবাল পাথরের সমারোহ।
তাই বোট আটকে যাওয়ার ভয়ে একেবারে তীরে না ভিড়ে কিছুটা দূরেই রেখে সেই ছোট ডিঙি নৌকা বৈঠা দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে যেতে হয় তীরের কাছাকাছি।
বৈঠা ঠেলার জন্য দু’জন লোক থাকে। একটি ছোট ডিঙি নৌকা সাড়ে ৩ ফুট বাই ১০ ফুট আকারের হয়। ওতেই মোট ১২ জন যাত্রী নিয়ে আরো কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ছেঁড়া দ্বীপ।
তবে এই সামান্য পথ যেতে যদি বড় আকৃতির ঢেউ আসে তখনই দেখা দেয় আসল বিপদ। এমন একটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হই আমরাও।
বড় একটি ঢেউ এসে আঘাত করতেই আমাদের ডিঙি নৌকাটি প্রায় ডুবু-ডুবু অবস্থা। তবে মাঝি অভয় দিয়ে নড়াচড়া করতে নিষেধ করেন। ঢেউয়ের ঝাপটায় অনেকেই ভিজে যান, এক সহকর্মীর ক্যামেরাও ভিজে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়।
ফলে ছেঁড়া দ্বীপে যেতে অবশ্যই মোবাইল ফোন, ক্যামেরা এ জাতীয় কিছু পলিথিনের ব্যাগে মুড়িয়ে নেওয়া ভালো। সঙ্গে কিছু শুকনা খাবারও রাখা যেতে পারে। তবে ময়লা ফেলবেন না দ্বীপে।
ছেঁড়া দ্বীপে কোনো জনবসতি নেই। তবে পর্যটকদের আনাগোনার কারণে কিছুদিন আগে একটি পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করেছে, তাদের একটি হোটেলও রয়েছে ‘মৌসুমী’ নামে।
প্রয়োজন হলে মৌসুমী থেকেই পানি ও শুকনা খাবার সংগ্রহ করে নিতে পারেন। তবে দাম একটু চড়া। কোমল পানীয় ৫০০ মিলিলিটারের দাম এখানে ৫০ টাকা। এখানে প্রতিটি জিনিসের দামই ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেশি রাখা হয়।
পর্যটকদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা চিন্তা করা উচিত। তবে ছোট শিশুদের না নেওয়াই উত্তম, কারণ যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
এমনকি, সাগর উত্তল থাকলে শুধু ছোটদেরই নয় বড়দের জন্যও ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়াটা বিপজ্জনক। তাই ছেঁড়া দ্বীপে যেতে আগ্রহীদের এসব বিষয় মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৬
এসএম/এসআর
** কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন-সুন্দরবন ঘিরে নানা পরিকল্পনা
** প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ‘জেট স্কি’
** লাবনী-সুগন্ধা নয়, পুরো সৈকতে উপযোগী পরিবেশ দরকার
** বয়া ছাড়াই জাহাজ চলছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে
** প্রবাল পাথরের ভাঁজে ভাঁজে মাছের খেলা
** পঁচা মাছে নষ্ট হচ্ছে সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য
** দূর থেকে ভাসমান, কাছে গেলেই দৃশ্যমান ছেঁড়া দ্বীপ
** পর্যটন নগরীতে বাংলা ভাষার বেহাল দশা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ