কক্সবাজার থেকে: কোথাও ধরেছে মরিচা, কোথাও দেখা দিয়েছে ছোট ছোট ছিদ্র। আবার কোথাও হয়েছে শান দেওয়া রাম দা’র চেয়েও ধারালো।
বলছিলাম একটি রেলিংয়ের কথা। না, কেবল একটি রেলিংই নয় এটি। দুঃসাহসিক যাত্রার একমাত্র অবলম্বনও বলা যেতে পারে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হিমছড়ি পাহাড়ের দুঃসাহসিক ভ্রমণে আপনার সঙ্গী হবে এ রেলিং।
সাগর আর পাহাড়ের মিতালী উপভোগ করতে ভ্রমণপিপাসুদের প্রথম পছন্দ এ হিমছড়ি পাহাড়। যেখানে গেলে দেখা মিলবে সাগরের স্বচ্ছ নীল জলরাশি আর সবুজ পাহাড়ের মিতালী। হিমছড়ির এ রূপসুধা পান করতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমান এখানে।
কিন্তু সমতল থেকে প্রায় ৩০০ ফুট ওপরের এ পাহাড়ে ওঠার সময় বিপত্তি বাধে রেলিংটি। ১৪৪টি সিঁড়ি পাড়ি দিতে গিয়ে সহায়ক হওয়ার পরিবর্তে বাধাই হয়ে দাঁড়ায় ভাঙাচোরা এ রেলিং।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, মরিচা ধরে রেলিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ছোটবড় ছিদ্র দেখা দিয়েছে। কোনো জায়গায় ভেঙে পড়েছে অংশবিশেষ। আবার কোথাও ভেঙে অদৃশ্যও হয়ে গেছে। আর পাহাড়ের ওপরের দিকের সিঁড়ির দু’পাশ থেকে একেবারে উধাও হয়ে গেছে রেলিং। সবকিছু মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ওপরে ওঠার সহায়ক সিঁড়িটি। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত বা বড় কোনো দুর্ঘটনা।
হিমছড়ি বড় ঝরনার ট্যুরিস্ট স্পটের টিকেট কাউন্টারের ম্যানেজার জাফর আলম বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ে ওঠার সিঁড়িতে থাকা রেলিংটির অবস্থা খুবই খারাপ। মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় রেলিং ভেঙে পড়ে গেছে। ফলে রেলিংটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, অনেক সময় রেলিংয়ের ধারালো জায়গায় লেগে অনেকের হাতও কেটে যায়। এজন্য আমরা ফাস্ট এইড জিনিসপত্র রেখেছি। এছাড়া পাহাড়ে ওঠার সময় পর্যটকদের রেলিংটি সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এসব কারণে অনেকেই পাহাড়ে ওঠার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
তবে এত ঝুঁকি নিয়ে ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে হিমছড়ির রূপ অবগাহনে অনেক পর্যটকই উঠছেন পাহাড়ের চূড়ায়। আর চূড়ায় ওঠা মাত্রই পাল্টে যায় অভিব্যক্তি। পথের ক্লান্তি ও বিরক্তি ছাপিয়ে চেহারায় ফুটে ওঠে রাজ্যের মুগ্ধতা।
অভিভূত কণ্ঠে কোনো কোনো পর্যটক বলেই ফেলেন, ‘রেলিং ভাঙা, তবুও ফিলিং ফাইন!’
চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি থেকে পরিবার নিয়ে হিমছড়িতে ঘুরতে এসেছেন অনিতা বড়ুয়া নামে এক গৃহিণী। হিমছড়ির সৌন্দর্য্য মুগ্ধ অনিতা বাংলানিউজকে বলেন, এ সৌন্দর্য দেখতেই তো এতো কষ্ট করে পাহাড়ে ওঠা। কিন্তু রেলিংটি দেখে খুবই ভয় পেয়েছি। বাচ্চাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এখান থেকে পড়লে আর রক্ষা নেই।
রেলিং সংস্কারের বিষয়ে হিমছড়ি ট্যুরিস্ট স্পট কাউন্টারে টিকিট বিক্রেতা মো. সুমন হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এ পাহাড়টি উখিয়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন বিভাগ থেকে এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছে। রেলিংয়ের সমস্যার ব্যাপারে আমরা বন বিভাগকে জানিয়েছি। তারা এর মধ্যে এসে মাপজোখ করে গেছে। সিঁড়িটি সপূর্ণ ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হবে। এছাড়া পাহাড়ের ওপরে হাঁটার রাস্তার দু’পাশে রেলিং দিয়ে দেওয়া হবে, যেন পর্যটকরা দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এ বছরের জুন মাস থেকে রেলিং সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে আমাদের জানিয়েছে বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
আইএসএ
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন