ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ফিরে: বোট থেকে ছোট নৌকায় বড় বড় ঢেউ মোকাবেলা করে গা ভিজিয়ে আতঙ্ক নিয়ে দ্বীপে পা রাখা। সেই আতঙ্কের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন শঙ্কা ভর করলো মনে।
পর্যটন মৌসুমে দৈনিক গড়ে ৩ হাজারেরও বেশি পর্যটক যান। একরাত সেন্টমার্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে পর্যটক মাত্রই দ্বীপটিতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে। গেলে নিয়ে যান নানা ধরনের পরিবেশ ধ্বংসকারী সরঞ্জমাদি, যেগুলো অধিকাংশই খাদ্য সংশ্লিষ্ট।
দ্বীপে পা রেখে প্রথমেই মন খারাপ করে দেবে আবর্জনা। পর্যটন মৌসুমে সেখানে বসে অস্থায়ী দোকান। আর দোকান ভেঙে নিলেও পরিষ্কার করা হয় না স্থানটি। বিষয়টি দেখার কেউ নেই। কোনো কোনো বেসরকারি সংস্থা প্রচারণা চালালেও সেটা অপ্রতুল।
হেঁটে পশ্চিম দিকে এগোলে সামনে দৃষ্টি বাধা পড়ে কেয়াবনে। সেই বনের সৌন্দর্য দেখা ভণ্ডুল হয় মরা তিমি বাচ্চার গন্ধে। সাগরের পানি বিষাক্ত করলে তিমি, প্রবাল, অন্য মাছ তো মরবেই।
পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখা যায়, পরিত্যক্ত পানির বোতল, কোমল পানীয়ের বোতল, এনার্জি ড্রিংকের বোতল, লাচ্ছির বোতল, কোমল পানীয়ের ক্যান, পরিত্যক্ত জুতা, চিপসের প্যাকেট, বিস্কুটের পাকেট, আচারের প্যাকেট, টিন লোহার কৌটা, ডাবের খোসাসহ ২০ ধরনের আবর্জনা বেশি বর্জ্য সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে দ্বীপটির।
আর এ আবর্জনা বেশি দেখা যায় দ্বীপটিতে বসবাসকারী একমাত্র পরিবার হোসেন আলীর বাড়ির পাশে। সেখানে একটি দোকান খুলে বসেছে হোসেন আলীর পরিবার। সে দোকানে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে পানির বোতল, কোমল পানীয়ের বোতল, ক্যান, এনার্জি ড্রিংক, ডাব, চিপসসহ সবকিছুই। পর্যটন মৌসুমে এখানে আরও কয়েকটি অস্থায়ী দোকান বসে। তারাও হোসেন আলীর পরিবারের দোকানের মতো ছড়িয়ে দেন আবর্জনা।
আয়তনের তুলনায় অতিরিক্ত পর্যটক আর বিপুল সংখ্যক পর্যটকের ফেলে দেওয়া বর্জ্যই দ্বীপটিকে পরিণত করছে আবর্জনার ভাগাড়ে। আর কাজটি করছেন মূলত পর্যটকরাই। দোকানিরা তাদের সহায়ক বলা যায়।
দ্বীপটির বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, গত পর্যটন মৌসুমে ঢাকা থেকে একটি দল এখানে এসে অনুষ্ঠান করে। তারাই মূলত বেশি নোংরা করে গেছেন দ্বীপটিকে।
এভাবে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে নোংরা, ময়লা, আবর্জনায় ভরছে হচ্ছে ছেঁড়া দ্বীপ। এছাড়া দ্বীপদস্যুদের নির্বিচারে গাছ চুরির কারণে সৌন্দর্য হারিয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ।
পরিবেশ রক্ষায় যা করণীয় তার কোনোটিই করছেন না পর্যটক, দ্বীপবাসী, সরকার- কেউই। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি।
পর্যটকরা আনন্দ উপভোগে দ্বীপে গেলেও সচেতনতা কম। আগে সচেতন হতে হবে তাদের। কারণ তা না হলে সত্যি দ্বীপটি আরও বড় আকারের ময়লা, আবর্জনা, বর্জ্যের ভাগাড়ে পরিণত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আর এখনই পরিকল্পনা হাতে না নিলে ধীরে ধীরে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নেবে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে। পর্যটক হারাবে সেন্টমার্টিনও।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৬
এমআই/এএ
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারের দ্বীপগুলোতে ‘হায়েনার’ থাবা
** ছেঁড়া দ্বীপের আইফেল টাওয়ার
** পরিত্যক্ত অবস্থায় ছেঁড়া দ্বীপের একমাত্র মসজিদ
** কেয়া আর নারকেল গাছ সেন্টমার্টিনকে করেছে অপরূপা
** কেয়ারি সিন্দবাদে দোল খেতে খেতে সেন্টমার্টিন
** অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত