কক্সবাজার থেকে: পুরুষরা যান মসজিদে। নারীদের যাওয়ার জায়গা নেই।
কক্সবাজারের স্পোর্টস জোন খ্যাত কলাতলী সমুদ্র সৈকতের দূরাবস্থা নিয়ে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সুমাইয়া জাহান। বেড়াতে আসা সুমাইয়ার সঙ্গে সৈকতের পাশেই কথা হচ্ছিল। ‘দেখেন, আমি উঠেছি পর্যটন মোটেলে। এখান থেকে যেতে হলে প্রায় চল্লিশ মিনিট দেরি হয়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট থাকে, তখন দ্বিগুণ-তিনগুণ সময় লাগে। তখন ট্যুরিস্টদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। সরকার বড় বড় কথা বলে পর্যটন নিয়ে। কিন্তু সামান্য অথচ খুবই জরুরি বিষয়টি বুঝতে পারে না কেন? আমি কি রুমে গিয়ে প্রয়োজন সেরে ফের এখানে আসবো? এই অবস্থা হলে কি ট্যুরিস্টরা এখানে আসবেন!’ এক নাগাড়ে বলেন এই পর্যটক।
সু্মাইয়া জাহান বলেন, ট্যুরিস্টরা সাধারণত বিচে দীর্ঘক্ষণ সময় কাটাতে চান। অনেকে কিটকটে শুয়ে জোয়ার ভাটা উপভোগ করতে চান। এখানে কি সেটা সম্ভব? আপনাকে যদি টয়লেটে যেতে হয়, তাহলে ফিরে যেতে হবে হোটেলে। যানজট ঠেলে রুমে গিয়ে কেউ কি আর ফিরে আসতে চাইবেন? তার কাছে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে।
‘জরুরি প্রয়োজনে’ নারীদের পাশাপাশি প্রায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হয় পুরুষদেরও। অনেক পুরুষ শর্ট পোশাক পরে বিচে যান। প্রয়োজন পড়লে কাছে থাকা মসজিদের দিকে ছুটে যান তারা, কিন্তু সেই শর্ট পোশাক পরে মসজিদে প্রবেশেও বিব্রত হতে হয় তাদের। আবার গা ভেজা থাকলেও মসজিদে প্রবেশ করতে ভয় পান, কেউ কিছু বলবে বলে।
কলাতলীর তুলনায় সুইমিং জোন লাবনী বিচ কিছুটা ভালো মনে হয় পর্যটকদের কাছে। এখানে পর্যটন কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদের পৃথক দু’টি টয়লেট রয়েছে।
বিচের প্রবেশপ্রথে হাতের ডানে পড়বে পর্যটন কর্পোরেশনের টয়লেট। এখানে তিনটি গোসলখানা ও পাঁচটি শৌচাগার রয়েছে। এরমধ্যে গোসলখানায় নেওয়া হয় বিশ টাকা করে। আর শৌচাগার ব্যবহার ভেদে নেওয়া হয় দশ ও পাঁচ টাকা করে। এখানকার লকারে মালামাল রাখতে দিতে হয় ঘণ্টায় বিশ টাকা।
পর্যটন কর্পোরেশনের টয়লেটটি অনেক পুরনো। প্লাস্টার খসে যাচ্ছে। ঠিকাদার নিজ উদ্যোগে সম্প্রতি রং করেছেন। ব্যবস্থাপনা মোটামুটি সন্তোষজনক। ঠিকাদার রতন বাবু নিজেই গেটে দাঁড়িয়ে মাসুল আদায় করছিলেন। আর একজন সহকারী একটু পরপর পরিষ্কার করে দিচ্ছিলেন টয়লেটটি। বিচ থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে ওঠার মুখে জেলা পরিষদের টয়লেট। এই টয়লেটটি কিছুটা বড়। ১৯টি শৌচাগার ও চারটি গোসলখানা রয়েছে এখানে। মোটামুটি পরিষ্কার এই টয়লেটে অবশ্য কোনো অর্থ খরচের তালিকা টানানো নেই। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার তার ইচ্ছামতো মাসুল আদায় করেন।
টয়লেটটি ইজারা নিয়েছেন জুয়েল নামের একজন ঠিকাদার। অর্থ আদায়ের তালিকা না থাকা প্রসঙ্গে ম্যানেজার নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মূল্য বেশি নেই না। যা রেট তাই নেওয়া হয়।
আরেকটি টয়লেট রয়েছে বিনোদন জোন সুগন্ধা বিচে। যেটি কক্সবাজার পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন। সব মিলিয়ে পুরো সৈকতের তিনটি স্থাপনায় মাত্র বাইশটি টয়লেট রয়েছে।
পর্যটকের সংখ্যার তুলনায় এটাকে অপ্রতুল মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, কক্সবাজারে কোনো কোনো দিন পর্যটকের আগমন দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। তাদের জন্য এই টয়লেট মোটেই যথেষ্ট নয়। শীতকালে তো সবসময়েই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পর্যটকদের। এমন অব্যবস্থাপনার কারণেই বিশাল সম্ভাবনার কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটক টানতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, প্রয়োজন বিবেচনা করে আরও বেশিসংখ্যক প্রসাধনকক্ষ বানানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
এসআই/এইচএ/
** সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-২)
**সেন্টমার্টিন দেখতে কেমন (পর্ব-১)
** কুকুর যখন ‘টুনা’ শিকারি
** ‘পর্যটন মৌসুম শব্দটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে’
** তৈরি হচ্ছে ‘বিচ ডাটাবেজ’
** সেন্টমার্টিনে সৈকত জুড়ে কাঁকড়ার আল্পনা
** সেন্টমার্টিনে বাজার সদাইয়ের সংগ্রাম (ভিডিওসহ)
** সৈকতের আল্পনাশিল্পীদের করুণ মৃত্যুগাথা
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ