চকরিয়া, বড়ইতলি থেকে: কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে পথ চলতেই চোখ আটকে যাবে যে কারও। রাস্তার দু’পাশেই গোলাপ।
মহাসড়কে চলমান পথ থেকে থামতেই ভেসে আসে গোলাপের সুগন্ধ। এ সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে যায় গোলাপের বাগানে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকোরিয়া উপজেলায় বরইতলী ইউনিয়নে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার দু’ধারে দেখা যায় অসংখ্য গোলাপ বাগান। রাস্তার পূর্ব দিকে শুধু গোলাপ আর গোলাপের সমারোহ।
বরইতলী ও হারবাং গ্রামে রয়েছে দুই শতাধিক গোলাপ বাগান। গোলাপ চাষের কারণে এ দু’টি তাই ‘গোলাপের গ্রাম’ নামে খ্যাত।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কেউ গোলাপ তুলছেন। আবার কেউ গোলাপ বাঁধাই করছেন।
বরইতলী গ্রামে দুই দশকের বেশি সময় ধরে গোলাপ ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত রোজ গার্ডেনের সত্ত্বাধিকারী মঈনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখানকার গোলাপ পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের চাহিদা পূরণ করে। বিশেষ সময়ে রাজধানীসহ অন্য জেলায়ও যায়।
এ গোলাপ ব্যবসায়ী বলেন, গোলাপের নির্দিষ্ট দাম নেই। বিশেষ দিনে এর দাম কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এখানে আগে অনেকে শখের বসে ফুলের বাগান করলেও এখন বেশিরভাগই ফুল চাষকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। বর্তমানে দুই শতাধিক বাগান থেকে প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে।
এ জনপদে গোলাপ চাষের ইতিহাস বলছে, বরইতলীর গোলাপ রসিক ছিলেন বাবু শ্রী নতুন চন্দ্র দে। তিনি জমিদার ছিলেন। ১৮৯০-১৯০০ সালে বরইতলী নিজ বাড়িতেই লাল গোলাপের বাগান তৈরি করেন। নতুন চন্দ্র দে নিজেই কলকাতা ও ঢাকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চারা সংগ্রহ করে বাড়ির আঙ্গিনায় বাগান তৈরি করেছিলেন। নিজেই তার পরিচর্যা করতেন।
বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে আরেক গোলাপপ্রেমী বরইতলী ডেপুটি বাড়ির প্রয়াত মারুফ রব্বান কাদেরী কলকাতা ও ঢাকা থেকে উন্নত, বাহারি রঙের গোলাপ চারা সংগ্রহ করে নিজ বাড়িতে আরেকটি সৌখিন বাগান গড়ে তুলেছিলেন। এরপর শখ থেকে বাণিজ্যিক রূপ পায় গোলাপ চাষ।
বাগান মালিকদের দাবি, বিশেষ দিনগুলোতে এখানকার ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। প্রতি একশো গোলাপ বাগান থেকে চার থেকে পাঁচশো টাকা দামে বিক্রি হয়। তবে বিশেষ দিন ছাড়া বেশিরভাগ দিনই প্রতি একশো গোলাপ ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। এসব গোলাপ বাগান থেকে এ দামে বিক্রি হলেও বাইরের দোকানগুলোতে আট থেকে দশগুণ বেশি দামে বিক্রি হয়।
এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্তরা জানান, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ বিশেষ দিনগুলোতে বরইতলী ও হারবাং এলাকার বাগানের নানা জাতের ফুল সরবরাহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজারে।
গোলাপ ফুলের বাগানে কাজ করা শ্রমিক মো. কফিল জানান, এখানে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে তিনি কাজ করেন। বাগান থেকে ফুল কেটে তা নিয়মমতো বাঁধাই করা তার কাজ।
কাজের জন্য দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বর্তমানে তিনি ৩শ টাকা পান। বছর চারেক আগে পেতেন দেড়শো টাকা। জানা যায়, কফিলের মতো এমন এক হাজার শ্রমিক কাজ করছেন ফুল বাগানে। এদের কেউ দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আবার কেউ মাসিক বেতনভিত্তিক।
জানা যায়, উপজেলার বরইতলী ও হারবাং ইউনিয়নে প্রায় ২শ একর জমিতে গোলাপ ও গ্যাডিওলাস ফুলের চাষ হচ্ছে। প্রথমে অনেকে শখের বসে ফুল চাষ শুরু করেন। এখন দেখা দেখিতে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তীর্ণ জমিতে ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা।
চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবছর বেড়ে চলেছে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন। সেখানে বরইতলী ও হারবাং জনপদে শুরু হওয়া পরিবেশবান্ধব ফুলের চাষ নিঃসন্দেহে কৃষি ব্যবস্থার জন্য নতুন মাইলফলক।
তামাকের বিকল্প হিসেবে ফুল চাষকে আরও জনপ্রিয় করতে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান এখানকার চাষিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৬
এডিএ/জেডএস/এসএনএস
**ধুঁকছে ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক
** রানওয়েতে কুকুর, বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা
** বিশ্বসেরা সার্ফিং ভিলেজ কক্সবাজার
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ