পেঁচার দ্বীপ, কক্সবাজার থেকে ফিরে: ভোরের আকাশে কেবল চোখ মেলেছে রোদ্দুর। কাচের জানালা গলে রঙিন পর্দাকে ফাঁকি দিয়ে কপোল ছুঁলো সে।
মারমেইড বিচ রিসোর্টে প্রতিদিন ভোরের আলো ফোটে এমন মায়াবি মধুর পরিবেশে। প্রকৃতিকে আঘাত না করলে, বাধা না দিলে সে শুধু শান্তি, সুখ, ভালোলাগা, ভালোবাসা বিলোয় নিঃশঙ্ক চিত্তে, নির্মলভাবে। মারমেইড তার বড় উদাহরণ। প্রকৃতিকে কীভাবে তার মতো থাকতে দিয়ে বশ করা যায় তা দেখিয়ে দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।
‘প্রকৃতিতে যা আছে তা কখনও তুলে ফেলি না। পাহাড় থেকে বৃষ্টিজলে গড়িয়ে আসা মাটিতে যেসব ফুল, গাছ এখানে জন্মেছে তা হুবহু রেখে দিয়েছি। কোনো অতিথি এলে তাকে আমরা ফুল দিয়ে বরণ করি। ফুলের গার্লেন বলে একে। সব প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে জন্মানো দেশি ফুল। যাকে ফুল দিয়ে বরণ করা হচ্ছে তাকে অসম্মান করা যাবে না। ’
কথাগুলো বলছিলেন মারমেইডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। রিসোর্টের রসুঁইঘর থেকে শুরু করে বেডরুম পর্যন্ত নান্দকিতা পেয়েছে তার অসাধারণ সব ভাবনা-দর্শন।
১৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত এ রিসোর্টের সবকিছুই শুধু প্রশান্তি দেয়। পায়ে চলা প্রতিটি পথ পরিচ্ছন্ন। দু’পাশে স্পাইডার লিলি, অলকানন্দা, কলকে, বেলি, জবা, টগর, কলমি, জবা, আকন্দসহ রয়েছে নির্মল সুন্দর রূপ-রঙের সব বাহারি বুনো ফুল। কোনোটির আনন্দ গন্ধ বিলিয়ে, কোনোটির রূপ সাগরে ডুবিয়ে।
খাবার, খাবারের টেবিল, পা ধোয়া, গোসলের জন্য রাখা পানিতেও মেলো ফুলের পাপড়ির নান্দনিক ছোঁয়া। প্রতিদিন ঘুম ভাঙা থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত বিভিন্নভাবে অতিথিদের সঙ্গ দেয় ফুলগুলি। প্রকৃতির কাছে নিয়ে যায় ইট কংক্রিটের মানুষকে।
প্রকৃতিকে তার মতো করে থাকতে দেওয়ার আরেকটি সুবিধা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মারমেইড বিচ রিসোর্ট ও ইকো রিসোর্ট প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে পাখিদের অভয়ারণ্য। দেশি নানান প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। ভোরের মিষ্টি রোদে, নাস্তার টেবিলে, চলার পথে সঙ্গী হয় চড়ুই, শালিক, ফিঙে, মেটে শালিক, পেঁচা, বুলবুলি, টুনটুনি, দোয়েলরা।
এখানে ঘুরে বেড়ানো পাখিদের অতিথিরা কেউ ব্যাঘাত ঘটায় না। তাই নাস্তার টেবিলের পাশে চলতে থাকে তাদের নিঃসঙ্কোচ ওড়াউড়ি, দাপাদাপি। রিসিপশনের পাশে রসুঁইঘরের কোলঘেঁষে থাকা সবসময় দলিত ডুমুর গাছটিকে কাটা পড়েনি এখানে। তার সুফলও পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে তাই ডুমুর গাছে দেখা মিললো মেটে শালিকের।
কটেজের বারান্দায় বসে যখন চলে তুমুল আড্ডা কিংবা প্রকৃতির গান তখন শ্যামা পাশে এসে জানান দেয় সে খুঁজছে তার সঙ্গীকে। বুলবুলিটি লাগোয়া খই গাছের ফলে বসে ঠুকরে খায় আর আড়মোড় ভাঙে। দোয়েল চলে শিশ দিয়ে।
সাগরসৈকতের কোলঘেঁষে পেঁচার দ্বীপে গড়ে ওঠা নান্দনিক ইন্টেরিয়রে সাজানো এ রিসোর্টে বাতাস বয় সারাদিন। শোনা যায় গাছের পাতার মধুর ধ্বনি। মনে হয় যেন বাঁশি বাজাচ্ছে পাতার দল।
এমন প্রকৃতির সান্নিধ্যই অন্যদের থেকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে কক্সবাজার সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলার মারমেইড বিচ রিসোর্টকে।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: www.mermaidbeachresort.net
** ছেঁড়া দ্বীপকে আবর্জনার ভাগাড় বানাচ্ছেন পর্যটকরা
**বিচ ঘেঁষে বিচ পার্ক, জানেন না পাশের ব্যবসায়ীরা!
**কক্সবাজার সৈকত বদলে দিতে পারে একজন কাদেরের চিন্তা
** নোনা দ্বীপে মিষ্টি পানি
** ড্যান্সিং বাসে কক্সবাজার টু টেকনাফ
** তথ্যহীন পর্যটন তথ্য কেন্দ্র!
** ডাব-তরমুজেই পকেট ফাঁকা সেন্টমার্টিনে
** মরা শামুক হাঁটে ছেঁড়া দ্বীপে!
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
এএ