লাউয়াছড়া থেকে: রাত্রি তখন ১০টা। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ফিরছিলাম লাউয়াছড়া বনের বাংলোয়।
বলতে বলতেই রাস্তার পাশ থেকে হলুদরঙা একটি সাপকে দেখা গেলো নড়াচড়া করতে। রাস্তা পার হওয়ার প্রহর গুনছে সে। মোটরবাইক থামিয়ে একটু দূর থেকে লাইট মেরে বিট অফিসার জানালেন, এটা শঙ্খিনী হতে পারে।
মন্থর গতির কারণ জিজ্ঞেস করতে তিনি বললেন, ভয় পাচ্ছে। কোনো শব্দ পেলে এরা এগোয় না।
বনের ভিতর দিয়ে প্রতি মুহূর্তে ছুটে চলে অটোরিকশা, বাস, ট্রাক। এগুলো সংরক্ষিত এ বনের নিশাচর প্রাণীদের যমও। বুধবার (১৩ জুলাই) রাতেও নাকি মারা পড়েছে মোটামুটি বড় আকারের একটি শঙ্খিনী।
লাউয়াছড়া ও জানকিছড়ার বিভাজনকারী সড়কটি প্রাণীদের যে কতো অসুবিধার কারণ তা টের পাওয়া গেলো রাতে। সাপটি কিছুতেই রাস্তা পার হতে চাচ্ছিলো না, পাছে চাকার নিচে পড়তে হয়। রাস্তা পার করে দেওয়ার জন্য কাছে গিয়ে লাঠি দিয়ে পার করার চেষ্টা করা হলো বেশ কিছুক্ষণ। কিন্তু বাগে আনা যাচ্ছিলো না।
এক পা এগোয় তো দু’পা পিছোয়। এক পর্যায়ে মাথা উঁচু করে এগিয়ে এলো আমাদের দিকেই। চাপা পড়ে যেনো মারা না পড়ে এজন্য রেজাউল ভাই সাপটিকে ছেড়েও আসতে পারছিলেন না।
কিছুক্ষণ দু’পক্ষের ঠেলাঠেলির পর লাঠি দিয়ে একরকম জোর করেই রাস্তা পার করানো হলো তাকে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলেই হয়তো বেঁচে গেলো সে।
গিরগিটি, ব্যাঙ, ছোট মেরুদণ্ডী প্রাণীভোজী এ নিশাচর সাপটি ছবি দেখে জানা গেলো, সবুজবোড়া। লাউয়াছড়ার বিষধর সাপগুলোর একটি। এরা নিশাচর। দিনে বের হয় কম। গাছ ও বনের ঝোপঝাড়ে থাকতেই পছন্দ করে।
একেবারে বন্য এ সরীসৃপটি শব্দ, আলো আর কিছু মানুষের গতিশীল বাহন নষ্ট করছে স্বাভাবিকতা। নিজের সাম্রাজ্যেও তাই ভয়ে গুটিয়ে থাকতে হয় তাকে। সংরক্ষিত এ বনের সড়কে সর্বোচ্চ গতি ২০ কিলোমিটার লেখা থাকলেও গতি যেনো এখানে আরও বাড়ে। যার নির্মম শিকার এই সবুজবোড়া সাপটিও হতে পারতো!
লেখা ও ছবি: আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর
**পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
**চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এএ/জেডএস/এসএনএস