শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) থেকে: দ্রুত বদলে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের দৃশ্যপট। ইংরেজদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে বর্তমানের শ্রীমঙ্গল সবই আবু সিদ্দিক মো. মুসার নখদর্পে।
খুব দ্রুতগতিতে বল করতে পারতেন বলে তাকে ভীষণ রকম সমীহ করতেন ইংরেজরা। জীবনে অনেক টুর্নামেন্ট খেলেছেন মুসা। খেলোয়াড়ি জীবনের পরে খেলোয়াড় তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তবে খুব বেশি দূর এগুতে পারেননি নানা রকম প্রতিকূলতার কারণে।
স্মৃতি হাতড়ে মুসা বলেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন (নব্বইয়ে) তখন তুঙ্গে। সেই সময়ে ভিক্টোরিয়া কলেজের মাঠে চলছিলো ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। রাস্তায় আন্দোলন ছেড়ে সবাই মাঠে খেলা দেখতে জমা হতো। তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা তাদের দারস্থ হয়েছিলেন, যেন কয়েক দিনের জন্য হলেও টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখা হয়। তা না হলে মিছিল-মিটিং করার জন্য কর্মী-সমর্থক পাওয়া যাচ্ছে না।
সেই সোনালি দিনগুলো শুধুই স্মৃতি। শ্রীমঙ্গল এখন খেলাধুলায় অনেক পিছিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই খেলোয়াড়।
তিনি বলেন, কয়েক বছরে দ্রুত বদলেছে শ্রীমঙ্গল। ২০১০ সালেও টি-বোর্ডের একটি রিসোর্ট, আর কয়েকটি ছোট-ছোট হোটেল ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। আর এখন পাঁচ তারকা হোটেল থেকে শুরু করে বিলাসবহুল রিসোর্ট ও ভালো মানের হোটেলসহ কী নেই এখানে?
তার হত ধরেই ব্যক্তি মালিকানাধীন রিসোর্টের যাত্রা শুরু হয় শ্রীমঙ্গলে। আর এই রিসোর্ট নির্মাণের বিষয়টিও খানিকটা কাকতলীয়। তারা বন্ধুরা মিলে (এসএসসি ব্যাচ-১৯৭০ সাল) পুর্নমিলনী করার উদ্যোগ নেন। তখন হলরুম পাওয়া যাচ্ছিলো না। ওই সময় (২০০৯ সাল) তার এক বন্ধুর প্রস্তাবে রিসোর্ট নির্মাণ শুরু করেন।
শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে (হবিগঞ্জ রোডে) নির্মাণ করেন রেইন ফরেস্ট। তখন অনেকেই তাকে ভয় দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন বিনিয়োগ পুরাই জলে যাবে, ভাড়া নেওয়ার লোক পাওয়া যাবে না। কিন্তু তাদের শঙ্কা মোটেই সত্যি হয়নি। অনেক ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে রেইন ফরেস্ট। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকেই রিসোর্ট নির্মাণ করেছেন। আবার হোটেলও বেড়েছে অনেক। আর পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পর্যটক বেড়েছে কয়েকগুণ।
রেইন ফরেস্টের পাশেই মুসা ও তার ভাইয়েরা মিলে নির্মাণ করেছেন টি-হ্যাভেন রিসোর্ট। সুবিশাল পার্কিংসহ চারতলা তলা এই ভবনটিতে রয়েছে বিশাল সাইজের হলরুম। একশ’ জনের রাউন্ড টেবিল বৈঠকের সিটিং ক্যাপাসিটি রয়েছে এখানে। অনেক নামি-দামি কোম্পানি আসছে এখানে এজিএম করতে। লক্ষ্য চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল মনোমুগ্ধ পরিবেশ উপভোগের সঙ্গে এজিএমও সেরে নেওয়া।
আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন এই এ ধরনের একটি হলরুমের ভাড়া অন্য কোথাও এক থেকে দেড় লাখ টাকা। সেখানে সম্পূর্ণ শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত হলরুমটির ভাড়া নেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। অন্যদের চেয়ে এতো কম নেওয়ার কারণ সম্পর্কে মুসা বলেন, ‘ব্যবসা মানে মানুষের পকেট কাটা নয়। আমরা মনে করি এর মাধ্যমে সেবাও করা যায়। ’
বদলে যাওয়া শ্রীমঙ্গল ভালোই লাগে। তবে আফসোসও রয়েছে তার। ব্রিটিশ আমলে শ্রীমঙ্গলে কাঠের বল দিয়ে ক্রিকেটের চর্চা হতো। সেই শ্রীমঙ্গল থেকে জাতীয় দলে তেমন কোনো খেলোয়াড় নেই, এটা মানতে পারেননা তিনি।
উপজেলা শহর হলেও বাংলাদেশের অন্য দশটি উপজেলার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলকে মেলালে ভুল করবেন। এটা কিন্তু অন্যান্য উপজেলা সদরের চেয়ে এক্কেবারেই অন্য ধাঁচের বলেও মন্তব্য করেন রিসোর্ট মালিক আবু সিদ্দিক মো. মুসা।
শ্রীমঙ্গল হচ্ছে সেই উপজেলা, যেটি প্রথম পৌরসভার অন্তভুক্ত হয়। তাও আবার ব্রিটিশ আমালে। আসাম মিউনিসিপ্যাল এ্যাক্ট ’র আওতায় ১৯৩৫ সালের ১ অক্টোবর শ্রীমঙ্গল পৌরসভার গঠিত হয়। তখন এর আয়তন ছিল মাত্র ২ দশমিক ৫৮ বর্গকিলোমিটার। ২০০২ সালে এটি প্রথম শ্রেণি পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।
উত্তরে শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন, দক্ষিণে আশিদ্রোন ইউনিয়ন, পূর্বে কালীঘাট ইউনিয়ন ও শ্রীমঙ্গল ইউনিয়নের অবস্থান। চা বাগানে আচ্ছাদিত শ্রীমঙ্গল পৌরসভা। পৌর এলাকার কাছেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, চা শিল্পের একাধিক কারখানা এখানে আছে। পাহাড় ঘেরার কারণে এই এলাকায় অতিবৃষ্টি, প্রচণ্ড শীত ও উষ্ণতা উভয় পরিলক্ষিত হয়।
এখানকার লোকজন খুবই শান্তি প্রিয়। মুসলিম ও হিন্দুর সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। রয়েছে তাদের মধ্যে নিবিড় ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ‘ধর্ম যার-যার উৎসব সবার’ এই কথার পরিপূর্ণ প্রতিফলনই দেখা যায় শ্রীমঙ্গলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এসআই/টিআই
আরও পড়ুন...
***ভোরের স্নিগ্ধ লাউয়াছড়া-১
**লাউয়াছড়ার বুক চিরে ট্রেন ভেঙে দিয়ে যায় নির্জনতা
**হ-য-ব-র-ল বগিতে ভোগান্তির পারাবত!