লাউয়াছড়া, শ্রীমঙ্গল থেকে: প্রথমে দেখে দুঃখ লাগলো বটে। বনের মায়া এখানে এসে হয়েছে খাঁচার মায়া।
৫-৬ মাসের গর্ভবতী মায়া। আছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া বিটের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে। প্রথম দর্শনে খাঁচার মায়াকে অমানবিকভাবে আটকে রাখা হয়েছে মনে হলেও উদ্দেশ্য কিন্তু মহৎ। উদ্যানের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমানের উদ্যোগে চেষ্টা চলছে বনের সুন্দরতম নিরীহ প্রাণী মায়া হরিণের কৃত্রিম প্রজননের। বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো’র সহযোগিতা ও উৎসাহে চলছে কাজ।
অবকাঠামোর দিকে থেকে পিছিয়ে থাকা এ রেসকিউ সেন্টারে একই খাঁচায় তার সঙ্গী হিসেবে আছে জেমস ও মনা। তবে মনা এখনও ওয়াইল্ড। ঠিকমতো পোষ মানেনি। এছাড়া আছে শফিকুলের সবচেয়ে বেশি আপন রানি। সরকারের স্কেলিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ফর ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন প্রোজেক্টের আওতায় চলছে দেখভাল।
শাবকের অপেক্ষায় থাকা মায়ার প্রতি নেওয়া হচ্ছে বিশেষ যত্ন। কেয়ারটেকার শফিকুলের আদুরে মায়া, ‘জেমস এসো, এদিকে এসো, খাবার আনছি এসো…’ ডাক-আহ্বান শুনে ছুটে আসা ছাড়া উপায় নেই। তবে অনেকটা বন্য খাঁচায় থাকা মনা এগিয়ে এলো না। বাঁশ আর বুনো লতার ফাঁক দিয়ে চোখ গলে টানা তাকিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত অচেনা একজন মানুষ দেখে বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসার সাহস পেলো না।
পুঁইলতা পেয়ে গোগ্রাসে খেলো মায়া আর জেমস। জেমসকে ১৫ মাস বয়সে এক চা বাগানের মালিকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। মায়াকে উদ্ধার করা হয় একটি অবৈধ চিড়িয়াখানা থেকে। রানিকে আনা হয় সাতছড়ি থেকে। আর মাসখানেক আগে কুলাউড়া থেকে উদ্ধার করে আনা মনা সবশেষ সদস্য পরিবারের।
বেহাল অবস্থায় থাকা সেন্টারে এই চারজনই সদস্য। আসাদুজ্জামান নামে একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার আছেন এখানে। জেমসের চোখের পাশে টিউমার টাইপের কিছু একটা হলেও গুরুত্ব নেই সেদিকে। বলেন নাকি, স্বাভাবিকই তো আছে। প্রতিদিন আসার কথা থাকলেও আসেন না। ফোনেও পাওয়া গেলো না তাকে। অথচ তিনি সরকারি এ প্রকল্পের একমাত্র ডাক্তার।
খাঁচার ভেতরে ঢুকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করা গেলো মায়া, জেমস ও রানিকে। আদর মাখতে তারা যে পছন্দ করছে সেটাও স্পষ্ট।
ব্রিডিং প্রসঙ্গে এসইএফ তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়া মায়া হরিণের জন্য বিখ্যাত। সব বনে এটি পাওয়া যায় না। এসব বনে তাদের খেয়ে ফেলার মতো কোনো প্রাণীও নেই। অথচ এদের বংশ কেন বাড়ে না? এমন জিজ্ঞাসার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, চোরা শিকারিরা এদের শিকার করে। এছাড়া আরও একটি কারণ হতে পারে, এখানে প্রচুরসংখ্যক শিয়াল থাকা।
এতোদিনে হরিণ দেখলেও শাবকের দেখা পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ধারণা ছোট বাচ্চাগুলোকে শিয়াল খেয়ে ফেলে। এখানে হাজার হাজার শিয়াল আছে। তা না হলে সংখ্যা না বাড়ার তেমন কোনো কারণ নেই। এবার কৃত্রিমভাবে বংশবিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি আমাদের মতো করে। এরা ১৮ মাসে দু’বার বাচ্চা দেয়। দেখা যাক কী হয়।
তবিবুর রহমান ছাড়াও বিট অফিসার রেজাউল করিম ও কেয়ারটেকার শফিকুলের আন্তরিকতায় বেড়ে উঠছে হরিণগুলো। নিয়মিত প্রিয় খাবার গাজর, ডুমুর, আমলকি, চাম কাঁঠালসহ সব ধরনের সবজি খাওয়ানো হচ্ছে।
উদ্যোগ সফল হবে এটাই প্রত্যাশা সবার। খাঁচার ফাঁক গলে করুণ নয়, উজ্জ্বল সফলতা দেখতে চান সবাই।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
এএ
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
**তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
**রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
**পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
**চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে