রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে: পাশাপাশি চারটি স্তম্ভের প্রথমটিতে রা ১, দ্বিতীয়টিতে ম ৭, তৃতীয়টিতে গ ৯, চতুর্থটিতে ড় ৫। এগুলো এক সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে দাঁড়ায়-রামগড় ১৭৯৫।
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে সীমান্ত উপজেলা রামগড়ের প্রাণকেন্দ্র এটি। ফেনী নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা এ চারটি স্তম্ভে অঙ্কিত বর্ণ ও সংখ্যাগুলোর মধ্যে এক প্রসিদ্ধ ইতিহাস লুকানো রয়েছে।
পরিব্রাজক (ট্রাভেলার) অথবা পযর্টক (ট্যুরিস্ট) যেই আসুন না কেন, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে এই স্তম্ভ চারটির টান উপেক্ষা করতে পারবেন না। এখানে একবারের জন্য হলেও ঢুঁ মারতে হবে!
বিশেষ করে যেসব পরিব্রাজক-পর্যটক ইতিহাস সংশ্লিষ্ট থাকতে চান, তাদের জন্য খাগড়াছড়ির এই সীমান্ত উপজেলা রামগড়ে আসা অবশ্য কর্তব্য।
কেননা পাহাড়ে হেলান দিয়ে ইতিহাসের বাতিঘর হয়ে জেগে থাকা ফেনী নদীর পরম আত্মীয় রামগড় হচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবি’র (বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআর) আতুরঘর।
আজ থেকে ২শ’ ২১ বছর আগে অর্থাৎ ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন এখানেই ‘রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন’র জন্ম হয়। সীমান্ত সমস্যা বৃদ্ধির ফলে ৪ শ’ ৪৮ জন সৈন্য নিয়ে গঠিত এ বাহিনী পার্বতব্য অঞ্চলে দীর্ঘকাল অভিযান চালায়। সমরশক্তি হিসেবে এ বাহিনীর ছিল ৬ পাউন্ড ওজনের ৪টি কামান ও দুটি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল।
রামগড় বিজিবি স্তম্ভের শ্বেত পাথরে খোদায় করা দৃষ্টিনন্দন এফিটাপ খুব সহজেই আপনাকে টেনে নেবে ইতিহাসের এক অনন্য আকরের দিকে। আপনার অনুসন্ধিৎসু মন ওই এফিটাপ থেকে জানতে পারবে ১৮৬১ সালে রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়নের নিয়মিত ও অনিয়মিত পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে গঠন করা হয় ফ্রন্টিয়ার গার্ডস।
এ বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা তখন ছিল ১৪ শ’ ৫৮ জন এবং সদরদফতর ছিল চট্টগ্রামে। এ বাহিনীর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত ছিল কামরুদ, বোয়ালপাড়া, লক্ষ্মীপুর, সিলেট ও ত্রিপুরা সীমান্ত পর্যন্ত।
এরপর ১৮৭৯ সালে বাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানি। সেসময় বাহিনীর সদস্যরা ঢাকার পিলখানায় ঘাঁটি স্থাপন করে। এখন যা বিজিবির হেডকোয়ার্টার।
১৮৯১ সালে ফ্রন্টিয়ার গার্ডস বাহিনীর নতুন কামকরণ করা হয় বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ। এর ব্যাটালিয়নকে তখন ঢাকা, খুলনা, ভাগলপুর ও গাংগাটক- এই চারটি কোম্পানিতে ভাগ করে একজন ইরোপী সুবেদারের হাতে ন্যাস্ত করা হয়।
কলের বিবর্তনে বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশের পুনরায় নামকরণ করা হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস। তখন একে ১৬টি প্লাটুনে ভাগ করা হয়। প্লাটুনগলো সীমান্ত রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত হয়।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এ বাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, সংক্ষেপে ইপিআর। কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল, কিছু বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানের এক হাজার প্রাক্তন সৈন্য এ বাহিনীতে যোগ দেন।
পরবর্তীতে আরও তিন হাজার বাঙালি সৈন্য নিয়োগ দিয়ে এ বাহিনীকে পুনর্গঠন করা হয়। অতঃপর বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ ইপিআর’র নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)।
সুতরাং ইতিহাসের বিশাল ভাণ্ডার বুকে ধারণ করে ফেনী নদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা রামগড় বিডিআর স্তম্ভে এলে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী আজকের বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। এ কথা হলফ করেই বলা যায়, রামগড়ে এলে শুধু চিত্তের বিনেদন-ই হবে না, ইতিহাসের আকর থেকে মূল্যবান মণি-মুক্তও সংগ্রহ করা যাবে।
তাই সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়িতে আসার পরিকল্পনা থাকলে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের তালিকায় রামগড়কেও রাখতে পারেন। কোনো ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই সড়ক পথে অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারবেন রামগড়ে। অথবা ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি বা চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আসার পথে রামগড় দেখে আসতে পারেন।
***আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি
** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৬
এজেড/আইএ