খাগড়াছড়ি থেকে: আমাদের বিদ্যুৎ নিয়ে ভাবার লোক নেই। যাদের ভাবার কথা তাদের তো আর সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, মশার যন্ত্রণায় দরজা জানালা খুলতে পারি না। দিনে রাতে মাত্র পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে। অনেক কষ্টে বেঁচে আছি আমরা। সারাদিন ডিউটি করে বাসায় ফিরে ঘুমাতে পারি না।
তার কথায় সুর ধরেন পাশেই দাঁড়িয়ে অমূল্যধন ত্রিপুরাও। কলেজ ছাত্র অমূল্যধন ত্রিপুরা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে হয়তো মানুষ এক ধরনের জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা বিদ্যুৎ পেয়েই যন্ত্রণায় আছি।
তিনি বলেন, রাতে খুব বেশি হলে দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবারের (১৩ অক্টোবর) উদাহরণ দিয়ে বলেন, এদিন বিকেলে চলে যায় বিদ্যুৎ আসে রাত ৯টার দিকে। মাত্র ঘণ্টা খানেক সময় বিদ্যুৎ থেকেই চলে যায়। আসে সেই ১২ টার পর। এ দফাতেও মাত্র পৌনে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই।
তারপর আবার শুরু হয় লোড শেডিং। শেষ রাতের দিকে একবার এসে মিনিট তিরিশেক সময় ছিল। দিনের বেলাতো কথাই নেই। কখন আসে আর কখন যায় তার কোনই ঠিক ঠিকানা নেই। এই অবস্থা খোদ জেলা সদরের। যখন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে তখনও ভোল্ট ঠিকমতো পাওয়া যায় না।
আবাসিক হোটেল গুলোতে বেশিরভাগেই কোন জেনারেটর নেই। আইপিএস অথবা সোলার দিয়ে শুরু লাইট জ্বালানো হয়। আবার কোন কোন হোটেলে তাও নেই। সেগুলো চলে মোববাতি দিয়ে। যে কারণে পর্যটকরা এখানে এলে বেশিদিন থাকতে চায় না। যতদ্রুত সম্ভব পালানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অথচ এই জেলাতে হাজাছড়া ঝরনা, তৈদু ঝরনা, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, আলু টিলার গুহাসহ অনেক কিছু দেখার রয়েছে। যা ঘুরে দেখতে হলে দশ-পনের দিনেও সম্ভব নয়।
খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকে। এই সঞ্চালন লাইনটির দুরত্ব ১০৬ কিলোমিটার। এরপর রয়েছে আর ১০১ কিলোমিটার যা দিঘীনালা হয়ে মহালছড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত।
৩৩ কিলোভোল্ট (কেভি) এই লাইনটিতে লোড দিলে ১৫ কেভি পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা পাওয়া যাচ্ছে। বলে (২০ আগস্ট) জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ণ বোর্ডের খাগড়াছড়ি ডিভিশনের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আলাউদ্দিন সোহাগ।
তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, স্বাভাবিক ভাবে ৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত সঞ্চালন করার কথা। কিন্তু চাহিদার কারণে পনের মেগাওয়ার্ট পন্যন্ত লোড দেওয়া হয়। যে কারণে ত্রিশ বছরের পুরনো এই লাইনটি যখন তখন ট্রিপ করছে।
পুরনো তার পরিবর্তন করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন নতুন তার লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। লাইন নির্মাণ শেষ হলে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জণ করবে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চলছে এই কাজ। দফায় দফায় শুধু সময় বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদার ও বিপিডিবির লোকজনের গাফিলতির কারণে সম্ভব হচ্ছে না।
এই অঞ্চলে ঠিক কি পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেই তথ্য নেই খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হাতে। সে কারণে লাইন নির্মাণ হলেই লোডশেডিং মুক্ত হবে এ কথা বলতে পারছে না পিডিবি।
একটি সুত্র দাবি করেছে, প্রায় ৩০ মেগাওয়াটের মতো চাহিদা রয়েছে। সে কারণে লাইন নির্মাণ শেষ হলেও এক তৃতীয়াংশ লোডশেডিং থেকেই যাবে। তবে তখন লো-ভোল্টে কারণে ভুগতে হবে না গ্রাহকদের।
সুখের খবর আছে আরও দেরিতে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত হাইভোল্ট গ্রিড স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালে।
এই প্রকল্প শেষ হলে একদিকে যেমন গ্রাহকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। অন্যদিকে সিসটেম লসের গ্যাড়াকল থেকে মুক্তি পাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত সিসটেম লস হচ্ছে লাইনটিতে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়ি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবু জাফরু বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এখানকার সমস্যা জানতে হলে হাটহাজারীতে যেতে হবে। আমাকে প্রশ্ন করে জানতে পারবেন না।
** ঝরনা নিজেই এসে মিশে গেলো শরীরে
** খাগড়াছড়িকে পাহাড়ের সঙ্গে মেলালে ভুল হবে
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এসআই/