শুভলং ঝরনা ঘুরে রাঙ্গামাটি থেকে: ঝকঝকে নীল আকাশ। কর্ণফুলি নদীর পানি আর সবুজ পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অনুভূতি পেতে চাইলে চলে যান রাঙ্গামাটির শুভলং ঝর্ণায়।
বিকেলে সিঁদুর লাল আকাশ আর রাতে পূর্ণিমার চাঁদ পানিতে পড়লে মনে হবে স্বর্গে চলে এসেছি। এসব মনোরম দৃশ্য দেখতে চাইলে আপনাকে রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলায় আসতে হবে।
রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে স্পিড বোট অথবা ট্রলার ভাড়া করে চলে যেতে পারেন শুভলং ঝরনায়। দরদাম করে ১৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে ট্রলার ভাড়া করা যাবে। রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার শিলার পাড়া এলাকায় সবচাইতে বড় ঝরনাটিই হচ্ছে শুভলং ঝরনা।
যদিও অব্যবস্থাপনার কারণে জৌলুশ হারিয়ে ফেলেছে ঝরনাটি। তবে এই ঝর্ণায় যাওয়ার পথের বাংলার রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। বাংলার এই অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়েই হয়তো প্রখ্যাত গীতিকার ও সুরকার প্রতুল মুখোপাধ্যায় গেয়েছেন ‘আমি বাংলার গান গাই, আমি বাংলাতে গান গাই। আমি, আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই। আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতটা দূর। আমি এক বার দেখি, বার বার দেখি, দেখি বাংলার মুখ। ’
শুভলং ঝরনায় যাওয়া পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই মুগ্ধ করবে যে মনে হবে বার বার ফিরে যাই কাপ্তাই লেকে। মাথার উপর ঝক ঝকে নীল আকাশ, নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড়। আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস। কাপ্তাই লেক ধরে শুভলং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে দেখা যাবে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। নদী থেকে মাছ তুলে জ্যান্ত মাছ ডিঙি নৌকায় ফেলছেন জেলেরা। আর পাহাড়ি মেয়েরা কাজ শেষ করে বইঠা টানা নৌকা নিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন কাপ্তাই লেক।
সূর্য যখন হেলে পরতে থাকবে পশ্চিম আকাশের দিকে নীল জল তখন আরও চিক চিক করবে। আর পাহাড় থেকে সবুজ গাছের গা বেঁয়ে মৃদু বাতাস এসে শরীরটাকে শীতল করে দেয়। আর বিকেলে যখন ফিরবেন তখন সিঁদুরে লাল আকাশ আপনাকে চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। রাতের পূর্ণিমার চাঁদ যখন নদীর জলে পড়বে তখন অনুভূতি হবে স্বর্গের সুখ হাতে পাবার মত। এটা চোখে না দেখলে বর্ণনা করা কঠিন।
শুভলং ঝরনা যাওয়ার পথেই পড়বে বরকল উপজেলা। একটি পাহাড়ের উপরে বরকল উপজেলার অবস্থান। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বসবাস সেখানে। বরকল উপজেলায় চূড়ায় উঠলে দেখা যাবে পুরো পাহাড়ের দৃশ্য। নভেম্বর-ডিসেম্বরে এখানকার সৌন্দর্য আরও মুগ্ধ করে তোলে পর্যটকদের।
শুভলং ঝর্ণার কাছাকাছি শিলার পাড় এলাকায় থাকেন নিরঞ্জন চাকমা (জয়)। যিনি শুভলং ঝরনা ইজারাদারও।
নিরঞ্জন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, শুভলং ঝরণা একটু রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে এখান থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব। এই ঝরনায় প্রবেশ মূল্য ১৫ টাকা জনপ্রতি।
কাপ্তাই লেকের ট্রলার চালক মো. ইব্রাহিম জানান, শুভলং ঝরনা ছাড়াও এই পথে আরও বেশকিছু ঝরনা রয়েছে। এগুলোর পরিচিতি নেই বলে লোকমুখে শোনা যায় না।
তার কথা অনুযায়ী বরকল উপজেলা পেরিয়েই দেখা যায় একটি ঝরনা। অনেকেই এটাকে ঝিড়িঝিড়ি ঝরনা বলে থাকেন। তবে শুভলং ঝরনার চাইতে এই ঝরনায় জলপ্রপাত অনেক বেশি।
ঝরনা, পাহাড় দেখে ফেরবার পথেই পাওয়া যাবে পেদা টিং টিং নামের একটি রেস্টুরেন্ট। চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর পরিচালনায় এই পেদা টিং টিং রেস্টুরেন্ট পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত। স্থানীয়রা জানান একবার যে পেদা টিং টিং এর খাবার খেয়েছেন তাকে এখানে আসলেই পেদা টিং টিং এর লোভনীয় খাবার টানবে।
** অব্যবস্থাপনায় জৌলুশ হারাচ্ছে শুভলং ঝর্ণা
** সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সাজেক যাবেন যেভাবে
** এক পাহাড়ে জীবন যাদের
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৬
এসএম/আরআই