কাট্টলী বিল ঘুরে: দুই দিকে সুউচ্চ পাহাড়-শ্রেণী। মাঝে মাঝে পাহাড়ি দ্বীপ।
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ কৃত্রিম লেক কাপ্তাইয়ের সবচেয়ে বড় বিল এটি। অবস্থান রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদম, বগাচতর ও লংগদু ইউনিয়ন জুড়ে।
দুই পাশের পাহাড়ের মাঝে বিলের বিস্তৃত জলরাশির মাঝখানে ছোট্ট পাহাড়ি দ্বীপগুলোতে গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি। বিলে বিপুল মৎস্য সম্পদ আহরণকে কেন্দ্র করেই এসব বসতি।
যদের বেশির ভাগরই পেশা মাছ শিকার। গড়ে ওঠেছে বাজারও। সেখানে জেলেদের নৌকা মেরামতের সরঞ্জাম আর শুটকিপল্লীও রয়েছে। বিলের পানির উপর বাঁশের মাছ তৈরি করে সেখানে শুকানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতি মাছের শুটকি।
সমুদ্রপৃষ্ট থেকে উচুতে অবস্থিত কাট্টলী বিল এই সময়টায় পানিতে টইটুম্বুর। দ্বীপগুলোতে গড়ে ওঠা যে দু’একটি পরিবার রয়েছে তাদের ঘরও ডুবু-ডুবু ভাব।
জাতীয় তথ্য কোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা আছে, জলবিদ্যুতের জন্যে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার পর ১৯৬২ সালে বিশাল জলাধারের সৃষ্টি হয়। নতুন করে ডুবে যায় আরও কিছু অঞ্চল।
চলতি মৌসুমের এখনও বিলে বাড়তি পানি রয়েছে বলে জানালেন লংগদুগামী লঞ্চের সুপরভাইজার নূরুল হক।
জানালেন, মূল লেকের আয়তন প্রায় ১ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি। লেক জুড়ে তিনমাস ছাড়া সারাবছরই এখানে মাছ ধরে জেলেরা।
আমাদের যাত্রা রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে শুরু হয়েছে হেমন্তের প্রথমদিন, সকাল সাড়ে ৭টায়। পানিপথে বিলটিতে যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টার বেশি। পথিমধ্যে শুভলং, বরুণছড়াসহ আরও দু’তিনটি ঘাটে ভিড়ে লঞ্চ।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলার পর লঞ্চটি পড়লো কাট্টলী বিলে। আরও কিছুক্ষণ যাওয়ার পর কাট্টলী বাজার। এরমধ্যে চোখে পড়লো জেলেদের মাছ শিকার, বাঁশের ভেলার ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিত্রও। দুই পাশের পাহাড়ের নীলচে দৃশ্য যেনো যে কাউকে ক্লান্তি আর অবসাদ ভুলিয়ে দেবে!
লংগদু ঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর পৌনে ১২টা বেজে গেলো। ততক্ষণে সূয্যি মামা মধ্য গগনে। খাড়া সূর্যের আলো স্বচ্ছ জলে যেনো এক মোহনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে।
লংগদু বেশ পুরানো বাজার। এর ঠিক পাশেই মায়ানী নদী, এখানেই মিশেছে কর্ণফুলীর উপনদী কাছালংয়ের সঙ্গে। এরপাশে মায়ানী বাজার, যেখানে সকাল-বিকেল তাজা সবজি নিয়ে হাজির হন পাহাড়িরা।
শীতে এই বিলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় অতিথি পাখির আগমন! পাখিদের ওড়াউড়ি দেখতে ওই সময়টায় আগমন ঘটে অনেক পর্যটকেরও।
কাট্টলী বিলে রয়েছে প্রচুর মাছ। এরমধ্যে কাচকি, চাপিলা, কাতলা, রুই, পাবদা, তেলাপিয়া, সরপুটি, বাঘা আইড়সহ কমপক্ষে ৫০ প্রজাতির মাছ।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বি এফডিসি)লংগদু উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আকবর হোসেন জানালেন, গত অর্থবছর কাপ্তাই লেকে মাছ ধরা বাবদ ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। যার ৪০ শতাংশ এসেছে কাট্টলী বিল থেকে।
‘এখানে যে কেউ মাছ ধরতে পারেন। মাছ ধরার পর সরকার নির্ধারিত একটা ট্যাক্স দিতে হয়। তবে মে, জুন ও জুলাইয়ে প্রজণন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। ’
তখন জেলেদের সহায়তা করা হয় বলে জানালেন তিনি। তিনি এও জানান, ওই সময় রুই, কাতলা, মৃগেল মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়।
যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি বিভিন্ন পরিবহনের বাস চলাচল করে। আর রাঙামাটি থেকে সকালে মারিশ্যা এবং লংগদুর পথে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে করে যাওয়া যায় কাট্টলী বিলে।
নেওয়া যায় রিজার্ভ বোট, সেক্ষেত্রে ভাড়া একটু বেশি পড়বে।
কাট্টলী বিলে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বিকেলেই ফিরে আসতে হবে রাঙ্গামাটি।
**খাবারের দামটাই যা বেশি তূর্ণা নিশিথায়
**পাহাড় থেকে বাজারে নেমে গেছে ‘ভাগের মা’ সড়কটি
**ফলদ-বনজে বিমুগ্ধ ফ্রুটস ভ্যালি
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এমএ/এসআর