ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

তিন ঘণ্টা নৌ বিহার ৭০ টাকায়!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
তিন ঘণ্টা নৌ বিহার ৭০ টাকায়! ছবি: ডিএইচ বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জুরাছড়ি (রাঙামাটি) থেকে: নৌকা ঘাটে বিশাল বিশাল পাহাড় আপনাকে স্বাগত জানাবে। এরপর মনে হবে ঠিক যেনো মানববন্ধনের মতো সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে সবুজে আচ্ছাদিত পাহাড়গুলো।



যেদিকে তাকাবেন চোখ ফেরানো কঠিন। পাহাড়ে তাকালে দেখবেন তার মনলোভা জঙ্গলি রূপ। শাল-সেগুনের ফাঁকে জবা ফুল উঁকি দিচ্ছে, কোথাও আবার গভীর অরণ্যে জঙ্গলি ফুলের গন্ধে মনমাতোয়ারা হয়ে উঠবে।

উপর দিকে তাকালে যতদূর চোখ যাবে, মনে হবে যেনো পাহাড়গুলো কেউ থরে থরে সাজিয়ে রেখেছে। যেনো মোঘল আমলের কোনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ।



কোথাও গম্বুজের মতো। আবার কোথাও মনে হবে শিল্পী নিপুন হাতে কংক্রিটে আল্পনা এঁকেছেন।

শুধু কি পাহাড়ের রূপ! এখানে এলে আপনি দোটানায় পড়ে যাবেন। কোথায় বাদ দিয়ে কোথায় দৃষ্টি দেবেন। আপসোস হবে, যদি মাছির মতো সবদিকে দেখ‍া যেতো! তাহলে সাধ মিটতো।

উপরে যখন পাহাড়ের রূপ দেখছেন তখন হয়তো কোথাও লেকের সর্পিল বাঁক পেরিয়ে যাবেন। আর মনে হবে জীবনের সবচেয়ে বড় আহাম্মকিটা করলাম। আহা এমন একটি স্বর্গীয় দৃশ্য কেউ কি হাতছাড়া করে ছবি না তুলে। কিন্তু না, এ রকম অসংখ্য মনোরম বাঁক আপনাকে মুগ্ধ করবে।



বাঁকগুলো প্রণালী পাড়ি দেওয়ার অনুভূতির সঞ্চার করবে। খনিকের জন্য আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন অন্য এক জগতে। কল্পনায় আসতে পারে আপনি ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক বসফরাস প্রণালী ডিঙ্গিয়ে কৃষ্ণ সাগরে পাড়ি জমাচ্ছেন।

শুভলং পেরিয়ে কর্ণফুলী নদী বামে বাঁক নিয়েছে বরকলের দিকে। আর ডানে ঘুরে জুরাছড়ি নদী চলে গেছে জরাছড়ি উপজেলায়। যার নামেই জুরাছড়ি উপজেলা নামকরণ করা হয়েছে।

দুই নদীর মিলন স্থলে ওয়াই জংশংকে দূর থেকে মনে হবে লেক শেষ। এখন বুঝি শুধুই পাহাড়। কিন্তু তা নয়! ডান-বামে বাঁক নিলেই নয়নাভিরাম দৃশ্য। অনেক দূর পর‌্যন্ত বিস্তৃত নদীটির মধ্যে অসংখ্য আইল্যান্ড। এই পথে জুরাছড়ির দিকে গেলে হাতের ডানে পড়বে ভিজাক্যাচিং।



তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে অসংখ্য উঁচু উঁচু পাহাড়। স্বচ্ছ পানির সেই লেক ধরেই যেতে হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত উপজেলা জুরাছড়ি।

মূল ভূ-খণ্ড থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন এই উপজেলায় সড়ক পথে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জেলা শহর থেকে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম নৌকা-লঞ্চ। এই নৌ-পথটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হ্রদ কাপ্তাইকে (৪২৫০ বর্গ কিলোমিটার) এফোঁড়-ওফোঁড় করেছে।

‘নয়নাভিরাম’ বা ‘ভূ-স্বর্গ’ যে উপমাই ব্যবহার করেন- যথার্থ হবে। এখানে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলে নৌকাগুলো।  মাঝে মাঝে ছোট ছোট টিলা, টিলার গায়ে গাছের ফাঁক গলে দু’চারট‍া বাড়িও নজরে আসবে।  নেই কোনো শব্দ দ‍ূষণ। মাঝে মাঝে দু’একটা লঞ্চ চলে, তবে সে শব্দে আপনার চিন্তায় ছেদ পড়বে না।

রাঙামাটি সদরের রিজার্ভ বাজার থেকে নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে যাওয়া যায়। আবার গণপরিবহনও অনেক রয়েছে। যেগুলো সময় ধরে জুরাছড়ি যাতায়াত করে। ৭০ টাকায় টিকিট কেটে উঠে পড়লেই দেখতে পাবেন কাপ্তাই লেকের স্বর্গীয় রূপ। বাংলানিউজ টিমও সামিল হয়েছিলো ওই যাত্রায়। সকালে রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে ছেড়ে যায় লঞ্চ।

প্রায় তিন ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে জুরাছড়ি। সেখানে প্রায় ঘণ্টা তিনেক ঘুরে বিকেলের মধ্যে রাঙামাটি সদরে ফিরতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ