নীলাচল (বান্দারবন) থেকে: পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের মিতালী!তাই বুঝি কিছুক্ষণ পর পর পেজা তুলার মতো মেঘ উড়ে এসে পাহাড়কে জাপটে ধরছে। অটল অবিচল পাহাড় যেন মেঘের এই দুষ্টুমি উপভোগ করছে।
আর পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের এই লুকোচুরি খেলা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার পযর্টক হাজির হন বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ নীলাচলে। বান্দারবান শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত নীলাচলে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টাই চলে পাহাড়-মেঘের এই লুকোচুরি খেলা।
দুই হাজার ফুট উঁচু নীলাচল পাহাড়ের মন যখনই খারাপ হয়, যখনই সে মুখ ভাড় করে থাকে- তখনই কোথা থেকে উড়ে এসে একদল মেঘ পাহাড়ের শরীরে বুলিয়ে দেয় কোমল পরশ।
কখনো বা খেলার ছলে পাহাড়ের ঢাল থেকে চূড়া পযন্ত এঁকে দেয় রংধনু। দুষ্ট মেঘরাশি কখনো বা তৈরি করে এমন বৃত্তাকার কুণ্ডলি-যার মাঝখান দিয়ে টর্চ লাইটের আলোর মতো ঠিকরে পড়ে সূর্যের কিরণ!
প্রকৃতির এতসব আয়োজনের মধ্যেই সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকালে আমরা হাজির হলাম নীলাচলে। সঙ্গে রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া দু’টি মাইক্রোবাসে ১৫ জন সহকর্মী। বাংলানিউজের ‘বছর জুড়ে দেশ ঘুরে’ উদ্যোগের তৃতীয় দফার পঞ্চম দিনে আমরা তখন নীলাচলে!
রাঙ্গামাটি শহর থেকে আকা-বাঁকা পাহাড়পথ ডিঙ্গিয়ে ২ হাজার ফুট উচুঁ নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর সবারই অপেক্ষা মেঘমালার জন্য। কার্তিক মাসের এই স্নিগ্ধ সকালে সবারই প্রত্যাশা একদল মেঘ এসে আলিঙ্গন করে যাক তাদের। পায়ের তলায় এঁকে দিক স্বপ্নিল চুমু।
কিন্তু এই স্নিগ্ধ সকালে পাহাড় চূড়াই এক ঝাঁক মানুষের উপস্থিতি হয়তো ভালভাবে নেয়নি মেঘবালিকারা। তাই কয়েক কিলোমিটার দূরে নীলচলের সমান উঁচু নাম না জানা আরেকটি পাহাড়েই ঘুরপাক খাচ্ছে তারা। আসি আসি করে আসছে না নীলাচলে!
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া বাংলানিউজের পাহাড় পযর্টনের বান্দরবান অংশকে পূর্ণতা দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় জেলা প্রশাসক দিলিপ কুমার বণিক।
তারই সৌজন্যে পাওয়া নীলাচলের আলিশান কোটেজে ব্যাগ পেট্টা রেখে ছুটলাম তার অফিসে। সুতরাং আমাদের পক্ষে আর মেঘবালিকার জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করা সম্ভব হলো না।
দুপুর ২ টায় ফিরে এসে দেখি, লাজুক মেঘবালিকারা নীলাচল পাহাড়ের চূড়ায় এসে খেলা করছে। কটেজের দরজা-জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখছে আমরা ফিরেছি কি না?
এমন অপরূপ দৃশ্যে দেখে সবাই রোমাঞ্চিত। এরই মধ্যে নীলাচল পাহাড় চূড়ার পযর্টন স্পটে হাজির হয়েছেন কয়েক শ’ পযর্টক। তারা দৌড়াদৌড়ি করে বিভিন্ন লোকেশনে ছবি তুলছেন। কেউবা ছুটছেন মেঘ ছুঁয়ে দেখার জন্য।
কেউ আবার অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন মেঘমালার দিকে।
প্রকৃতি যখন আপন মনে খেলতে শুরু করে, তখন তার খেলনা উপকরণের অভাব হয় না। এই মেঘমালার মধ্যে নীলাচলের আকাশে হঠাৎ দেখা মিলল, রংধনুর। নীলচাল থেকে উত্তর-পূর্ দিকে অর্থাৎ বান্দরবান শহরের প্রাণকেন্দ্রের উপর দিয়ে চলে গেছে এটি।
এরই পাশে বৃত্তাকারে তৈরি হওয়া একটি মেঘের কুণ্ডলির ভেতর দিয়ে ঠিকরে পড়ছে সূর্য কিরণ। দূর থেকে মনে হচ্ছে অন্ধকারের রাজ্যে কে যেন পাঁচ ব্যাটারির একটি টর্স লাইট জ্বালিয়ে রেখেছেন।
** মোহম্মদীয়া হোটেলে জুরাছড়ির পর্যটন বাধা দূর!
**এটি কিন্তু জুরাছড়ি!
** হাজারছড়ায় পযর্টকের অপেক্ষায় আফিদা
** পাহাড়ে নিরুত্তাপ হরতাল
** সময় বশীভূত ইউএস বাংলায়!
** বিজিবির আতুরঘরে
** আলুটিলা রহস্যগুহায় গা ছমছমে অনুভূতি
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
এজেড/এমএ