প্রান্তিক লেক (বান্দরবান) ঘুরে: শুরুতেই তাল, তমাল অরণ্য এবং শাল-পিয়ালের বন। কয়েক কদম এগুতেই মহুয়া বন।
ফুলের সৌরভ নিয়ে লেকের পানির ধারে নামতেই হিজল গাছ চোখে পড়বে। পুরো লেক সম্পর্কে ধারণা নিতে ওয়াচ ভিউ (টাওয়ার) থেকে লেকের মনোরম পরিবেশ অবলকন করা যাবে।
বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রেখে কবিতা, সাহিত্য এবং গানের কথাগুলো বাগানের মাধ্যমে প্রান্তিকে রুপায়ন করা হচ্ছে। এখানে বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শ্রীকান্ত, লালনের কবিতা, গান সাহিত্যের আলোকে বাগান সাজানো হচ্ছে। প্রান্তিকে এসব কবির স্মৃতি ধারণ করে যেন সবাইকে একত্রিত করেছে বান্দরবানের প্রান্তিক লেক।
চার দেওয়ালের বন্দিশালা ছেড়ে নির্মল বিশুদ্ধ হাওয়া নিতে চাইলে আসতে হবে বান্দরবানের প্রান্তিক লেকে। কোন রকম ইট, পাথরের ছোয়া ছাড়াই প্রাকৃতিক স্থাপত্য শৈলীতে লেকটি শ্রীবৃদ্ধি করছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসন।
বান্দরবান শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে প্রান্তিক লেকের অবস্থান। প্রায় ৬৮ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত প্রান্তিক লেক ঘুরলে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ সেই গানের কথা মনে পড়বে, ‘তাল-তমালের বনেতে আগুন লাগে মনেতে। বন্ধু আমার বুনো হাওয়া সুখ হইলো না প্রাণেতে।
প্রান্তিক লেকের পানি আর পাহাড়ের সৌন্দর্য বিমহিত করবে পর্যটকদের। বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রান্তিক লেকে সাজানো হয়েছে প্রায় ২০টি বাগান।
প্রায় ৬৮ একর বিস্তৃত এই লেকের ২৫ থেকে ৩০ একর জুড়ে রয়েছে লেকের পানি। বৈঠা নৌকা বেয়ে লেকের পানিতে ঘুরলে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমিষেই।
বান্দরবান জেলার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বাংলানিউজকে জানান,‘কোন রকম ইট পাথর ছাড়াই ন্যাচারাল আর্কিটেকচারের মাধ্যমে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক স্থাপত্য শৈলীর মাধ্যমে এ শ্রীবৃদ্ধির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামি দুই বছরের মধ্যে সব কাজ শেষ হলে প্রান্তিক লেক সবার কাছে আকর্ষনীয় হয়ে উঠবে। ’
বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের হলুদিয়া নামক স্থানে প্রান্তিক লেকের অবস্থান। সু-সুজ্জিত এই লেকে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে পড়বে শাল, পিয়ালের বাগান। বিলুপ্ত প্রায় বিরল প্রজাতির সব গাছের সমাহার থাকবে প্রান্তিক লেকে। কবি, সাহিত্যিকদের কথা ও গানের ছন্দে প্রান্তিক লেক সাজানো হচ্ছে।
হাতের বামে দেখা যাবে তাল-তমাল অরণ্য। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তাল, তমালের গানের কথা মনে রেখে লেকের পাড়ে তাল-তমাল গাছ লাগানো হয়েছে।
এছাড়া বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহুয়া বনের ছোয়া পড়েছে প্রান্তিক লেকে। প্রধান গেট দিয়ে ঢুকেসামনে কিছুদুর এগুলো হাতের বাম পাশে পাহাড়ে ঢালে দেখা মিলবে মহুয়া বন। এর উল্টো দিকেই শিমুল-পলাশের বাগান। মহুয়া বন থেকে পূর্ণিমা চাঁদের আলো উপভোগ করতে পারবেন।
মহুয়া বনের পর সমতল জায়গাতে দেখা মিলবে পুষ্প উদ্যান। এখানে শিউলী, হাসনা হেনা, কামিনী, জারুল ফুলক্লান্তি মনে প্রশান্তি ফেরাবে।
লেকের পাড় দিয়ে যেতে যেতে হিজল বন চোখে পড়বে। সোজা রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়বে শাল-পিয়ালের বাগান। লেক পাড়ে রয়েছে রঙ্গিন উদ্যান, ফলজ উদ্যান।
এছাড়া লেকের বাম পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে থাকবে আগর বাগান। লেকের চারদিকে নারিকেল গাছ লাগানো হবে। লেকের পানিতে নৌকা চালাতে চালাতে চোখে পড়বে নারিকেল গাছের বাগান।
লেকে আগত পর্যটকদের জন্য ছোট আকারের একটি রেস্ট হাউজ করা হয়েছে। রয়েছে ৫টি ওয়াশ রুম। এই লেকে একটি পিকনিক স্পট করা হবে। পিকনিক স্পটের পাশে বকুল, চম্পা, চামেলী, কামিনী হাছনা হেনা, বেলি ফুলের ঘ্রাণ নেওয়া যাবে। এরপাশের অংশটুকুর বুনো পরিবেশ দিতে একটি বেতের বাগান করা হয়েছে।
লেকের বাম পাশ দিয়ে হাটতে হাটতে চোখ ধাঁধাঁবে আগর বাগান। পাহাড়ের ভেতর অবস্থিত লেকের জঙ্গলে ঢাক জাম, পিতরাজ, চাপালিশ, লোহাকাঠ, গর্জন গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
কৃষ্ণচূড়া, সোনালু আর জারুল ফুল মন ভরিয়ে দেবে পর্যটকদের। লেকের পানিতে নি:শব্দে বৈঠা দিয়ে নৌকা চালিয়েযেতে যেতে চোখে পড়বে শাপলা, শালুকসহ বিভিন্ন জলজ ফুলের দৃশ্য। বৈঠার আঘাতে পানির ছপাৎ ছপাৎ শব্দে মনহারিয়ে যাবে প্রকৃতির মাঝে। সম্পূর্ণ বুনো পরিবেশে লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বান্দরবান জেলারপ্রান্তিক লেকের বিকল্প নেই।
** অব্যবস্থাপনায় জৌলুশ হারাচ্ছে শুভলং ঝর্ণা
** সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সাজেক যাবেন যেভাবে
** এক পাহাড়ে জীবন যাদের
** শুভলং ঝরনার পথে যেতে যেতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অনুভূতি
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এসএম /এমআই