কেওক্রাডং থেকে: বগালেক থেকে কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশে যখন রওয়ানা হই তখন তপ্ত রোদ। সবার ঘাম ঝরছিল বৃষ্টির মতো।
তিন ঘণ্টার ট্রেইলে পানি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যে পরিমাণ ঘাম ঝরছিল তাতে পানিশূন্যতা রোধ সবচেয়ে বড় কঠিন বিষয় ছিলোা। সঙ্গে স্যালাইন থাকলেও পানি শেষ হলো ৫শ ফুট উঠতেই। এখন উপায় কী! এগিয়ে এলো অভিজ্ঞ গাইড সাদেক। বললো ঝিরি আছে না! কোনো চিন্তা নেই, চলেন।
১৬শ ফুটে গিয়ে দেখা মিললো অপরূপা চিংড়ি ঝরনা। জানেও যে পানি এলো কিছুটা। খাওয়া না যাক শরীর তো ভেজানো যাবে। চিংড়ির রূপ দেখে শীতল পানিতে শরীর ডুবিয়ে রওয়ানা হলাম। তেষ্টা না মিটলেও কষ্ট লাঘব হলো কিছুটা। তবে ঝরনার পানি খেতে দোষ নেই।
একটু এগিয়ে দেখা পেলাম একটি ঝিরির। কোনো কিছু না ভেবেই তাই বোতল ভরে উদরপূর্তি করা। একটু পিছিয়ে থাকা সাদেক এসে বললো এখানকার পানি না। এটাতে তো পচা লতা আছে। সামনেরটায় চলেন। ততক্ষণে সবাই পান করে বোতলও ভর্তি শেষ। সাদেক বললেও আমাদের কিন্তু খারাপ লাগেনি।
পরের ঝিরিতে যখন পৌঁছালো তখন অল্টিমিটারে ২ হাজার ফুট। ঘেমে নেয়ে একশেষ। এখান থেকে উঠে গেছে ২শ ফুটের একটি খাড়াই। কেওক্রাডং যেতে তখনও ১২শ ফুট বাকি। পাথুরে ঝিরি এখানেই। প্রকৃতি যেন মানুষের সব প্রয়োজন বোঝে। পথিকের তৃষ্ণা মেটাতেই যেন এখান দিয়ে বয়ে চলেছে সে।
চড়াই উতরাই পেরিয়ে যেই আসুক ক্লান্ত পথিককে দুদণ্ড শান্তি দেবে এই ঝিরি। আমাদের হলো সেটাই। বোতল ভরে এক নিশ্বাসে পানিপান করে তৃষ্ণা মেটালো সবাই! আহ্ এতো শান্তি! সেই মুহূর্তে ওটাই ছিলো যেন পৃথিবীর সেরা পানি।
সত্য হলো সাদেকের কথা। তবে তার সতর্ক বাণী, বুঝে শুনে খান ঝিরির পানি। বাংলানিউজ টিমের সবার বক্তব্য, পৃথিবীর কোথায় কেমন পানি আছে জানি না, তবে এই মুহূর্তে এটাই পৃথিবীর সেরা পানি। সেরা কিস্টাল ক্লিয়ার মিষ্টি পানি। জীবনদায়ী পানি।
বোতলে ভরার সঙ্গে সঙ্গেই বাইরে দিয়ে জমে গেলো শীতল ঘাম। যেন ফ্রিজ থেকে বের করা হলো মাত্র। সহনীয় মাত্রার ঠাণ্ডা। পাহাড়ি প্রাকৃতিক উৎসের এ পানির স্বাদ যেন পৃথিবী সেরা ওই মুহূর্তে। কেন যে মানুষ মিনারেল ওয়টারেরর বোতল কেনে! পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে পানি নিয়ে না ঘাবড়িয়ে বুঝে চললেই হয়।
পানি জীবনদায়ী এটা সবাই জানি। এদিনের অভিযানে সমস্ত কষ্ট উবিয়ে দেওয়ার জন্য ওটাই ছিলো যথেষ্ট। ওটাই আমাদের টনিকের মতো টেনে নিয়ে গেলো ৩২শ ফুটের কেওক্রাডংয়ে।
** রাস্তা হলে দেশি পর্যটকই জায়গা পাবে না বগালেকে
** পাহাড়ের ময়না যাচ্ছে পর্যটকের খাঁচায়
** হরেক পদের খাবারে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’র শুভেচ্ছা
** পাহাড়চূড়ায় চোখের সামনে রংধনুর ’পর রংধনু (ভিডিওসহ)
** ইউরোপ-আমেরিকাকেও পায়ে ঠেলবে রাঙামাটির লংগদু
** ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন
** রাঙামাটিতে বোটভাড়া নিয়ে ঠকবেন না যদি…
** বিকেলটা কাটুক হেরিটেজ পার্কে
** দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির দেশে
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
** বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন
** পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব
** নীলাচলে ভোরের আলোয় মেঘের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
এএ/এইচএ