ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

অব্যবস্থাপনায় ম্লান শৈলপ্রপাতের সৌন্দর্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
অব্যবস্থাপনায় ম্লান শৈলপ্রপাতের সৌন্দর্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শৈলপ্রপাত ঘুরে: পানি প্রবাহের পুরোটা জুড়েই শ্যাওলা জমে আছে। বুঝে ওঠার উপায় নেই এটি খুবই পিচ্ছিল, কিন্তু পা দিলেই অবস্থা বেগতিক! পাথুরে পথে একেবারে গিয়ে খাদে পড়তে হয়।

শ্যাওলা জমা ধারালো পাথরে হাত-পা কেটে একা্কার অবস্থা!

১৮ অক্টোবর (রোববার) পর্যটন সমৃদ্ধ পার্বত্য জেলা বান্দরবান শহরের অদূরে অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট শৈলপ্রপাত ঘুরে এবং পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেলো।

বান্দরবান-থানচি-রুমা সড়কের পাশেই এ জলপ্রপাত। শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে। রুমা কিংবা থানচি রুটে বাস অথবা চান্দের গাড়িতে করে যাওয়ার সময় যে কারও নজর কাড়ে এ ঝরনাটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব সৃষ্টি এটি।


কল-কলিয়ে উপর থেকে সর্বদা নেমে আসছে স্বচ্ছ পানি। হিমশীতল পানি গড়িয়ে পড়ার শব্দে ওই এলাকায় এক মোহনীয় ছন্দের ব্যঞ্জনা চলে সব সময়ই। আর এতে মুগ্ধ হন দেশি-বিদেশি পর্যটক।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘নজরদারি’ ও ‘অব্যবস্থাপনা’র অভাবে প্রাকৃতিক এ শৈলপপাতের প্রতি অনেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজন ও পর‌্যটকদের।  

শৈলপ্রপাত এলাকা জুড়ে পানি, পানীয়ের বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে। এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি রূপ হারাচ্ছে দেশের একমাত্র এ প্রাকৃতিক শৈলপ্রপাত।

স্থানীয় বাসিন্দা ম্রোং ম্রো মারমা জানালেন, সারাবছরই শৈলপ্রপাতের জলধারা বহমান থাকে। ফলে বছরজুড়েই পর্যটক আসেন এখানে। তবে নিচে নামতে গেলেই পিচ্ছিল পাথরে পড়ে আহত হন অনেকে। অনেকের হাত-পা ভেঙে রক্তাক্ত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

ম্রো মারমার সঙ্গে আলাপচারিতার সময় তার পাশে দাঁড়ানো জয় মারমাও এ বিষয়ে ক্ষোভ করলেন। বললেন, শুধু একটু নজরদারি করলেই এখানকার পর্যটন আরও উন্নয়ন হবে। দুর্ঘটনার ভয়ে অনেকে নিচে নামেন না। নামলেও ভয়ে ভয়ে থাকেন।

‘অথচ রেলিং কিংবা রশির ব্যবস্থা করা হলে স্বাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়াতে পারেন পর্যকটকরা। এক্ষেত্রে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিৎ। কেননা এ অব্যবস্থাপনা চলতে থাকলে মার খাবে দেশীয় পর্যটন শিল্প। ’

পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় শ্বশুরবাড়ি এসেছেন প্রহল্লাল সরদার। অবসরোত্তর ছুটির পুরোটাই বাংলাদেশে থাকবেন তিনি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর আসার পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্পট ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তিনি।
এবার এসেছেন বান্দরবানে, এখানকার প্রত্যেকটি পর্যটন স্পটে যাবেন তিনি। শৈলপ্রপাতের কথা শুনে প্রথমে এ এখানেই সস্ত্রীক এলেন প্রহল্লাল।

তার ভাষায়, প্রাকৃতিক এ পাথুরে ঝরনার কথা অনেক শুনেছি। এবার দেখতে এলাম। কিন্তু এসে যে অভিজ্ঞতা হলো তা খুবই তিক্ত। নিচে নামতে ভয় পাচ্ছি, পিচ্ছিলে পড়ে কখন হাত-পা ভাঙে । তাছাড়া ময়লা আবর্জনা যেভাবে ফেলানো হচ্ছে, তা দেখে মনে হচ্ছে এটি কোনো ভাগাড়।

এছাড়া পর্যটকদের যানবাহন রাখার জন্যে শৈলপ্রপাতের পাশে কোনো পার্কিং প্লেসও রাখা হয়নি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও সময় নিয়ে এর আশপাশের পর্যটন স্পটে ঘুরতে পারেন না পর্যটকরা।

‘এক্ষেত্রে পর্যটকদের কথা চিন্তা করে এখানে একটি পার্কিং প্লেসও স্থাপনের কথা’ বলেছেন চট্টগ্রাম থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে আসা মো. রবিউল ইসলাম।

এদিকে এ শৈলপ্রপাতের স্বচ্ছ ও ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করতে পারার কারণে এর পাশে জনবসতি গড়ে ওঠেছে বলে কথা প্রচলিত রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।   

স্থানীয় প্রবীণ উ ক্লৈ মারমা জানান, স্থানীয়রা এ ঝরনার পানি পান করা থেকে শুরু করে গৃহস্থলীর সব কাজও সারেন। ময়লা আবর্জনা ফেললে তা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

জানা যায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত আকর্ষনীয় এ পর্যটন স্পটটি ১৯৯১ সালের ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এটিই জেলার প্রথম ঘোষিত পর্যটন স্পট।

একই সঙ্গে ব্যবস্থা করা হয় শৈলপ্রপাতের (ঝরনা) দুই পাশের পাহাড়ে পর্যটকদের বসারও। তবে অব্যবস্থাপনার কারণে সেগুলো পরিত্যক্ত হয়ে আছে। স্পটে সংশ্লিষ্ট কর্ত‍ৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

শৈলপ্রপাতের উৎপত্তি প্রসঙ্গে স্থানীয়দের দাবি, এর উৎপত্তি বগা লেকে। সারাবছরই পানি ঝরে। তবে বর্ষাকালে বেশি থাকে।

এদিকে এ স্পটকে কেন্দ্র করে রাস্তার পাশেই গড়ে ওঠেছে বাজার। যেখানে স্থানীয় মারমা ও বম সম্প্রদায়ের নারীদের হাতে বুনা উলের মাফলার, সুয়েটার ও শালসহ নানা হস্তশিল্প সামগ্রী পাওয়া যায়।

পাহাড়ে উৎপাদিত কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য খাদ্য শস্য ও নানা ফলমূলের পসরা সাজিয়ে বসেন স্থানীয়রা। বমদের উৎপাদিত মৌসুমী ফলমূল এখানে সবসময় পাওয়া যায়। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের পরিচালনায় শৈলপ্রপাতে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্থাপনা। যদিও তা অব্যবস্থাপনায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

আরও পড়ুন-

** থানচির পর্যটন তরুণদেরই আকৃষ্ট করে
** 'ঝুলছে' থানচির ঝুলন্ত সেতু
** থানচিতে সম্প্রীতির মেলবন্দন 
** পাহাড় সঙ্গমে মৎস্যে ভরপুর রূপসী কাট্টলী
** খাবারের দামটাই যা বেশি তূর্ণা নিশিথায়
** পাহাড় থেকে বাজারে নেমে গেছে ‘ভাগের মা’ সড়কটি
** ফলদ-বনজে বিমুগ্ধ ফ্রুটস ভ্যালি
** আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথে
** সুন্দর ঝরনার দুঃখ

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৬
এমএ/এমআইএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ