কেওক্রাডং (বান্দরবান) থেকে ফিরে: দেশের অন্যতম শীর্ষ পাহাড় চূড়ায় পা বাড়ানোর পথে কোনো প্রতিবন্ধকতাই বাধা হতে পারে না, সেখানে রাস্তা যতই বন্ধুর হোক। তবে ‘স্বপ্ন জয়ের’ পর ঘটনা বিশেষে ফেরাটা ‘দুঃস্বপ্ন’ হয়ে ধরা দেয়।
দুর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় আরোহনের ‘স্বপ্নে’ কোনো না কোনো ট্রেকার প্রতিমাসেই এ পথে পা বাড়ান। কিন্তু বর্ষাকালে কেওক্রাডং যাওয়ার পথটি হয়ে ওঠে গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রধান অন্তরায়। আর আকাশ ছোঁয়ার নেশায় এ পথে উঁচু রাস্তাগুলো কোথাও কোথাও পর্যটকদের ঠেলে দেয়‘মৃত্যুঝুঁকিতে’।
কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় আরোহণে বিভোর হয়ে গত ১৯ অক্টোবর (বুধবার) দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছিলাম গাইডসহ দলের ৬ জন। ‘জয়ের নেশায়’ সব কষ্টই তখন সম্ভব হয়ে ওঠে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যখন স্বপ্নের কেওক্রাডংয়ের চূড়ার হাতছানি, ঠিক তখনই কানে এলো দুঃসংবাদ। ওই দুঃসংবাদ মনের আকাশে কালো মেঘ জমিয়ে খানিক সময় কেওক্রাডংকে আড়াল করে রাখলো।
একদল পর্যটক নিয়ে উল্টে গেছে একটি চাঁদের গাড়ি। এতে অভিযাত্রা সহচর (গাইড) গুরুতর আহত হয়েছেন। গাড়ির নিচ থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় গাড়িতে থাকা পর্যটকদের অনেকেই শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পান। ফলে বন্ধ হয়ে যায় চাঁদের গাড়ি চলাচল।
বাসা থেকে অফিস পর্যন্ত আসা-যাওয়া এ ‘ট্রেকারদের’ কাছে ফেরাটা তখন দুঃসাধ্য হয়ে উঠলো। উপায় নেই, যেতেই হবে এ চিন্তা থেকে ২০ অক্টোবর মাত্রই উদয় হওয়া সূয্যিমামাকে মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সবাই। যাওয়ার পথে যে পথটা অ্যাডভেঞ্চারাস মনে হয়েছিলো, আগের দিনের দুর্ঘটনা ফেরার পথটায় আতঙ্ক নামিয়ে দিয়েছে।
সড়কের বড়শিপাড়া থেকে ১১ মাইল পুরোটাই ভাঙা ও গর্তে ভরা। কোথাও কোথাও সড়ক পাহাড় বেয়ে এতোই উপরে উঠেছে যে, সামনে তা আদৌ কোনো সড়কে মিশবে কি-না তাই নিয়ে শঙ্কায় পড়তে হয়। কোথাওবা গাড়ির চাকা এমন গর্তে লুকায়, সেখান থেকে আদৌ বেরিয়ে আসবে কিনা সেই ভয়ে গা ছমছম করে।
রাস্তার অধিকাংশ স্থানে কাঁচা মাটিতে সৃষ্ট কাদায় সড়কের সঠিক অস্তিত্ব আবিষ্কারও কঠিন। সেসব স্থানে ‘অভিজ্ঞতায়’ ঠাওর করে বীরবেশে গাড়ি হাঁকিয়ে যান চালকরা। একটু ভুলে কত শত ফুট নিচে পড়তে হবে সেই চিন্তা হয়তো মাথায় আসে না তাদের। তবে এমনটা ভেবে আমাদের মনে যে ভয় ঢুকলো না তা কিন্তু নয়!
তবে কেওক্রাডংয়ের চূড়া থেকে ট্রেকিং করে নেমে বড়শিপাড়া থেকে দুঃস্বপ্নের সড়কে চাঁদের গাড়িতে চড়ে ফেরার পথে কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়নি আমাদের। পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে ঝুঁকি, গিরির খাঁজে খাঁজে ভীতি জাগলেও শেষতক স্বপ্নের চূড়া বাওয়ার অ্যাডভেঞ্চার সুখস্মৃতি হয়েই রইলো।
আরও পড়ুন
**দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম ‘পাসিংপাড়া’
** লাইসিয়াম বমের হাতে একদিনে শীতের চাদর
** বগালেকে রাতে অ্যাডভেঞ্চারাস ট্রেকিং
** শিক্ষক থেকে পর্যটনের অগ্রদূত একজন সিয়াম দিদি
** পাহাড়িদের পছন্দ ‘হাঙর শুটকি’
** ঠোঁট লাল করা পাহাড়ি ‘ছোট পান’
** ব্রিজের সঙ্গে পর্যটন ডুবেছে কাপ্তাই লেকে
** ‘রিছাংবান্ধব’ নন পর্যটকরা!
** রিছাং রোমাঞ্চ!
** মেঘের ভেলায় ভেসে মেঘ-পাহাড়ের দেশে
** ঝালেই পাহাড়িদের পছন্দ ‘সুমরিচ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
জেডএস/এমজেএফ/জেডএম