বান্দরবান থেকে ফিরে: প্লেটে সবুজ কলাপাতা। তার উপর টিলার মতো সাজানো ভাত।
নাগরিক পরিবেশ এড়িয়ে এমন নৈসর্গিক পরিবেশে নান্দনিক সজ্জায় পাহাড়ি ঐতিহ্য বজায় রেখে খাবার পরিবেশন করা হয় হলিডে ইন রিসোর্টে।
বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রের অপরপাশের পাহাড়ে এক একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে হলিডে ইন রিসোর্ট। নিরিবিলি পরিবেশে কাঠের সব নান্দনিক কটেজে থাকার পাশাপাশি এখানের রেস্টুরেন্টে মিলবে পাহাড়িসহ বিভিন্ন পদের স্বাদী খাবার। ইকো ট্যুরিজমকে প্রমোট করা এ রেস্টুরেন্টটির স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন।
জাকির ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টটির দায়িত্ব নেন ২০০৮ সালে। পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছ থেকে জায়গা লিজ নিয়ে চালাচ্ছেন তিনি।
এখানকার খাবার, পরিবেশনায় ভিন্ন মাত্রা নজর কাড়বে যেকোনো পর্যটকের। খাবার পরিবেশনে কলাপাতার ব্যবহার নিয়মিত। এ নিয়ে দারুণ এক অভিজ্ঞতা রয়েছে জাকিরের। ছোটবেলায় অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। একসময় বাড়ির গরু নিয়ে পাহাড়ে যেতেন ঘাস খাওয়াতে। সেখানে খেতে হতো কলাপাতায়। অন্যরাও কলাপাতা ব্যবহার করতো। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এখনও খাবার খাওয়ার জন্য কলাপাতা ব্যবহার করা হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে খাবার পরিবেশনে কলাপাতা ব্যবহার করেন তিনি।
শুধু কলাপাতা নয়, মেন্যুতেও রয়েছে পাহাড়ি খাবারের স্বাদ-গন্ধ। সেটা টের পাওয়া গেলো খাবার টেবিলে বসে। একে একে এলো আদাফুলের ভর্তা, হলুদ ফুলের ভর্তা, থানকুনি পাতা, আধাসিদ্ধ সবজি, পাহাড়িদের পালা দেশি মুরগি। এছাড়া আলু ভর্তা, মোচা ভর্তা, চাপিলা, লইট্যা ফ্রাই তো ছিলোই। ভর্তা, ফ্রাই, সবজি, ভাত সবকিছু রান্নার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা রাঁধুনি। একেকজন একেক খাবারে পারদর্শী। তাই খাবারে পাওয়া যায় প্রকৃত স্বাদ।
জাকির বলেন, পাহাড়ের ট্র্যাডিশনাল খাবারগুলো প্রমোট করার চেষ্টা করছি আমরা। এখানে যখন কোনো বিদেশি আসেন তখন আমরা তাদের মতো করে খাবার তৈরি করার চেষ্টা করি। মানুষ বুঝে তাদের পছন্দমতো খাবার তৈরি হয় এখানে। যে যেমনটি পছন্দ করেন। এখানকার সব জিনিস কেনা হয় স্থানীয় বাজার থেকে। তাছাড়া খাবারগুলোর খাদ্যগুণ বিবেচনা করা হয়। বাঁশ কোড়ল, থানকুনি পাতা, হলুদ ফুল পাতা, আমপাতা ভর্তা, গন্ধভাদালি পাতা ভর্তা, কুমড়ো ফুল সবই একেকটি ওষুধ, শুধু খাবার নয়।
বয়দের যদি কেউ টিপস দিতে চান তাহলে দিতে হবে কাউন্টারে রাখা নির্দিষ্ট একটি বক্সে। কারণ এখানে যারা কাজ করেন তারা সবাই কষ্ট করেন। তাই টিপস পেলে সেটা সবার প্রাপ্য। এমনটি মনে করেন জাকির। রেস্টুরেন্টের বাইরে বেশ কয়েকটি কটেজ রয়েছে তার। পুরো এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুল, ফলের গাছ।
বিভিন্ন ধরনের জবা, দোলনচাঁপা, পদ্ম, বাগানবিলাস, টগর, নীলপুনিয়া, কলাবতী, থাই আদা ফুল, পলাশসহ নানান পাহাড়ি বুনো ফুলের গাছ রয়েছে এখানে। সেগুলো দিয়েই রুম, রেস্টুরেন্ট ডেকোরেশন করা হয় প্রতিদিন।
রেস্টুরেন্টটিতে বাহারি সব পদের খাবারের দামও হাতের নাগালে। একসময় পেপার বিক্রি, মোটর ম্যাকানিকের কাজ গর্বের সঙ্গে করেই আজ এ পর্যায়ে এসেছেন ব্যবসায়ী জাকির। স্থানীয় পরিবেশে বেড়ে ওঠা এ সংগ্রামী ব্যক্তি প্রশাসনের সহায়তা পেলে দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে চান।
আরও পড়ুন:
**পাহাড়ি শিশুর খেলায় প্রাণ যায় মায়াবি পাখির
** পৃথিবীর সেরা পানি আমাদের পাহাড়ে!
** ৩ ঘণ্টার ট্রেইলে ঘেমে-নেয়ে কেওক্রাডংয়ের স্বর্গচূড়ায়
** রাস্তা হলে দেশি পর্যটকই জায়গা পাবে না বগালেকে
** পাহাড়ের ময়না যাচ্ছে পর্যটকের খাঁচায়
** হরেক পদের খাবারে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’র শুভেচ্ছা
** পাহাড়চূড়ায় চোখের সামনে রংধনুর ’পর রংধনু (ভিডিওসহ)
** ইউরোপ-আমেরিকাকেও পায়ে ঠেলবে রাঙামাটির লংগদু
** ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন
** রাঙামাটিতে বোটভাড়া নিয়ে ঠকবেন না যদি…
** বিকেলটা কাটুক হেরিটেজ পার্কে
** দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির দেশে
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
** বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন
** পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব
** নীলাচলে ভোরের আলোয় মেঘের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
এএ/জেডএস