বললেন এখানকার মানুষজন খুবই আন্তরিক। তাদের আচরণে আমি মুগ্ধ।
তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাটে কিছু কাজ করে যেতে চান। যাতে তার সময়টুকু মাইলফলক হয়ে থাকে। ডিসি হিসেবে এটাই তার প্রথম পোস্টিং। আর সেই প্রথম পোস্টিং কাজ দিয়ে স্মরণীয় করে রাখতে চান তিনি।
প্রশ্ন ছিল বাগেরহাটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কি? জবাবে বলেন, এখানে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করাটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলো হচ্ছে খুলনা-মংলা রেল লাইন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও খানজাহান আলী এয়ারপোর্ট।
এরই মধ্যে রেললাইনের জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এয়ারপোর্টের জমিও অধিগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সবসময়ই চ্যালেঞ্জ থাকে। এখানে জেলা প্রশাসকের এককভাবে কিছুই করার থাকে না। কিন্তু ব্যর্থতার দায়ভার এককভাবে মাথায় নিতে হয়।
বাগেরহাট এখন কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও অল্পদিনের মধ্যেই এর চেহারা বদলে যাবে বলে মনে করে জেলা প্রশাসক। তার মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা যেতে হবে বাগেরহাট ঘুরে। ঢাকা থেকে বাগেরহাট যেতে তখন সময় লাগবে মাত্র চারঘণ্টা।
কোথাও উন্নয়ন করতে হলে প্রথম সামনে আসে জমির বিষয়টি। সে দিক থেকেও বাগেরহাট খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব তুলনামূলক কম। পার্বত্য এলাকার পরেই এই জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কম। যে কারণে এখানে শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
তিনি বলেন, পর্যটনের দিক থেকেও বাগেরহাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ইউনেস্কোর হেরিটেজের তালিকায় বাংলাদেশের তিনটি স্থান ঠাঁই পেয়েছে। তারমধ্যে দু’টিই বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত। একটি হচ্ছে সুন্দরবন অপরটি ষাটগম্বুজ মসজিদ। সে দিক থেকেও বাগেরহাটের সম্ভাবনা অনেক উজ্বল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে পর্যটনে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটনের বিকাশের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানান তিনি। চিত্রা নদীতে মিনি সুন্দরবন, যার নামে মোড়েলগঞ্জের নামকরণ করা হয় সেই লর্ড মোড়েল’র বসতভিটাকে পর্যটন স্পর্ট হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ষাটগম্বুজ মসজিদকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তপন কুমার বিশ্বাস।
সম্ভাবনাময় এই জেলার প্রশাসনে দৈন্য জ্বল জ্বল করছে। দুই এডিসিসহ অফিসার পর্যায়ে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি পদ ফাঁকা। অন্য লেভেলে প্রায় সত্তর শতাংশ পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। অনেকে বদলির অর্ডার নিয়ে বসে আছে ছাড়তে চান বাগেরহাট। কিন্তু ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না শুধু লোকবল সংকটের কারণে।
প্রশাসনের লোকবলের যেমন সংকট, তেমনই আবাসনের রয়েছে চরম সংকট। তিনটি প্রশাসনিক ভবনের মধ্যে একটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে। আরেকটির অবস্থাও করুণ। একটি মাত্র ভবন রয়েছে ব্যবহার উপযোগী।
এখানে ভবন তৈরি করলেও বেশিদিন টেকসই হয় না লবণাক্ততার জন্য। ভবন তৈরির অল্পদিনের মধ্যেই ড্যামেজ হয় যায়। এই অঞ্চলের অবকাঠামোর জন্য ভিন্ন টেকনোলজি ব্যবহার করা জরুরি। সম্প্রতি পাবলিক ওয়ার্ক ডিভিশন বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছে বলে দাবি করেন বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক।
অনেক রাস্তার অবস্থাও করুন। বাগেরহাট থেকে মংলা যাওয়ার রাস্তার অনেক অংশের ছাল-বাকল উঠে গেছে। শিগগিরই সংস্কার করা না গেলে বর্ষা মৌসুমে যানবাহন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেন তপন কুমার বিশ্বাস।
** চিত্রায় প্লেনের ছোঁয়া
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
এসআই/এসআইএ/এএ