কটকা (সুন্দরবন) থেকে: সুন্দরবন ভ্রমণের শুরুটা পূর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের হাড়বাড়িয়া দিয়ে। মংলা থেকে লঞ্চে দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গিয়ে পৌঁছি সকাল ১০টায়।
জেটিতে পা রাখতেই সাত আটটি বানর আমাদের স্বাগত জানালো। সামনে এগুতেই হাড়বাড়িয়া বন বিভাগের অফিস। বনরক্ষীসহ দলে আমরা ৮ জন। আমাদের দলনেতা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল।
হাড়বাড়িয়ায় প্রায় ২ কিলোমিটার লম্বা কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে। শুরুতেই সতর্কবাণী ‘বাঘ হতে সাবধান, সতর্কভাবে চলাফেরা করুন। একাকী না ঘুরে দলবদ্ধভাবে ভ্রমণ করুন। ভয়ের শুরু তখন থেকেই।
একটু কেউ সামনে এগিয়ে গেলে কিংবা পিছিয়ে পড়লেই সবাই দাঁড়িয়ে যায়। এক সাথে হয়ে আবার চলতে শুরু করি।
দলের সবাই প্রতি মুহূর্তেই সজাগ। আট জোড়া চোখে জঙ্গলের চারপাশে নিরন্তর দৃষ্টিপাত। সবার স্নায়ু টানটান উত্তেজনা, আর সব ইন্দ্রিয় সজাগ। প্রতি মহূর্তেই ভয় কী জানি কি হয়।
পুরো এলাকা জুড়ে হরিণের অসংখ্য পায়ের ছাপ। হাড়বাড়িয়া ওয়াচ টাওয়ারের কাছে কাদায় বাঘের পায়ের ছাপ আমাদের উত্তেজনা আর ভয় দুটোই বাড়িয়ে দিলো।
হাড়বাড়িয়া থেকে দুবলার চর হয়ে হিরণ পয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, আন্দার মানিক হয়ে করমজল দীর্ঘ জলপথ। পথের দু’ধারে সকল লঞ্চ যাত্রীর অপলক দৃষ্টি। হরিণ, বানর, কুমির আর ডলফিন দেখলেই আনন্দে চিৎকার চেঁচামেচি, ওই যে, ওই যে।
বন্যপ্রাণী দেখার কাজ সহজ করে দেন লঞ্চের চালক ইউনুস ভাই। তার অভিজ্ঞ চোখে সবার আগে বন্যপ্রাণীরা ধরা পড়ে- পরে আমরা দেখি। বাইনোকুলারও কুলায় না তার চোখের কাছে।
হাড়বাড়িয়া, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট, কটকা, কচিখালী, আন্দার মানিকের ভাইজোড়া খাল আর করমজল ভ্রমণ করে শেষ হয় আমাদের সুন্দরবণ ভ্রমণ।
কটকা-কচিখালীতে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আমাদের দলনেতা জাকারিয়া মন্ডল ভাই কটকা থেকে কচিখালী বনের ভেতর দিয়ে ট্রেইল ধরে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমরা সানন্দে সায় দিই।
বনের ভেতর দিয়ে ৩ ঘণ্টার পায়ে হাঁটা পথ। এর দেড় ঘণ্টা বনের ধার ঘেঁষে কটকা-কচিখালীর সমুদ্র সৈকতে। ভয়টা আরও পেয়ে বসলো যখন ঘন বনের ভেতর থেকে হরিণের দল ছোটাছুটি করে মাঠের অপর পাশের বনে ছুটে যাচ্ছে। দলনেতা বললেন, হরিণের দল হয়তো বাঘের সিগন্যাল পেয়েই এমন ছোটাছুটি করছে। সুতরাং আমাদের আরও সাবধানে এগুতে হবে।
সবার স্নায়ু টানটান উত্তেজনা। চারদিকে সতর্ক দৃষ্টি ও ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে আমরা কচ্ছপের গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রতি মূহুর্তে ভয়। ঝোপঝাড় দেখলে আগে তা পরখ করে এগিয়ে যায়। দেড় ঘণ্টা পর আমরা কটকা সমুদ্র সৈকতে পৌঁছি।
সৈকতের বালুতে একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আমাদের কচিখালী যাওয়া রুখে দিলো। সৈকত দিয়ে নিরাপদে হেঁটে আমরা কটকা জেটিতে পৌঁছি।
** লবণ-কেমিক্যাল মুক্ত দুবলার চরের শুঁটকি
** কটকায় এখনও সিডরের ক্ষত
** ঝড়ের চেয়েও বেশি ভয় দস্যুতে
** জেলেদের প্রাণ দুবলার চরের ‘নিউমার্কেট’
** বনরক্ষীদের জীবনই অরক্ষিত
** মংলা হতে পারে সুন্দরবন ভ্রমণের প্রবেশদ্বার (ভিডিও)
** গাইড থেকে ট্যুর অপারেটর
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এমআই/এটি/জিপি