সুশীলনের টাইগার পয়েন্ট গেস্ট হাউস থেকে: পর্যটন নিয়ে বাংলানিউজের এ আয়োজন এই মুহূর্তে বিশ্বের কোটি-কোটি অনলাইন পাঠক দেখছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে সুশীলনের টাইগার পয়েন্ট গেস্ট হাউসের রাজা প্রতাপাদিত্য কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন তিনি।
ড. অপরূপ চৌধুরী বলেন, এই আলোচনায় অনেক সমস্যা-সম্ভাবনার কথা এসেছে। এখন কিছু কথা বলবো, যেগুলো নীতি-নির্ধারণের বিষয়, সেগুলো ঢাকায় গিয়ে উপস্থাপন করবো।
শুরুতেই বাংলানিউজের বছরব্যাপী আয়োজন নিয়ে কথা বলেন ড. অপরূপ চৌধুরী। তিনি বলেন, পর্যটন নিয়ে আপনারা কাজ শুরু করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার থেকে। এরপর কাজ করেছেন বৃহত্তর সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে। এবার করছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন নিয়ে। এ সুন্দরবন আমাদের শোর্য-বীর্যের প্রতীক। এ স্থানটি বেছে নেওয়ায় আপনাদের ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, ‘আমার আরেকটি অনুষ্ঠান ছিল আজকে। কিন্তু বাংলানিউজের এ আয়োজনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন মনে হচ্ছে আমার সিদ্ধান্ত সঠিক। ’
ড. অপরূপ চৌধুরী পর্যটনের বিষয়ে বলেন, শিল্পনীতিতে পর্যটনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যান্য শিল্পে যেমন প্রডাক্ট আইডেন্টিফিকেশন আছে। পর্যটন বিষয়েও আমাদের প্রডাক্ট আইডেন্টিফিকেশন করা দরকার। ট্যুরিজমের আয় সব নিজেদের। এখানে একশ’ ডলার আয় করলে পুরোটাই থেকে যায় সরকারের।
অপরূপ চৌধুরী বলেন, পর্যটন নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব সরকারের। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ফোর লেন, এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট স্পট হচ্ছে। এ জায়গাগুলো গ্যান্টিং বা হালং বে’র মতো করা হবে। এ খাতে সরকার ব্যবসা করবে না। আমরা সুযোগ-সুবিধা দেবো, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পর্যটনকে এগিয়ে নিতে ১২টি হোটেল পাইপ লাইনে রয়েছে।
তিনি বলেন, আবাসনের ক্ষেত্রে আশা করি অন্যরা এগিয়ে আসবেন। এখানে বেশকিছু হোটেল-মোটেল দরকার। তবে সেগুলো ইকোলজিক্যাল হতে হবে। পরিবেশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে করতে হবে।
অপরূপ চৌধুরী বলেন, রাত্রিকালীন বিনোদন খুবই দরকার পর্যটকদের জন্য। এক্ষেত্রে লোকজ শিল্পকে আইডল করতে হবে। পর্যটকরা যতো বেশি রাত যাপন করবেন, ততোই ডলার আয় হবে।
বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. মোহাম্মদ এনামুল কবীর, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম ফিরোজ, সুশীলনের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা নূরুজ্জামান, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জেলা নাগরিক কমিটি সভাপতি আনিছুর রহিম, শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহি, সিকান্দার আবু জাফর ফাউন্ডেশনের পরিচালক সৈয়দ জুনায়েদ আকবর, সুশীলনের সভাপতি চন্দ্রিকা ব্যানার্জী, প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেডের ম্যানেজার (এডমিন অ্যান্ড স্টেট) মোসলেহ উদ্দীন তুহিন, শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সুন্দরবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভবতোষ মণ্ডল, বরসা রিসোর্ট এর ম্যানেজার আমানউল্লাহ আমান, বরসা ট্যুরিজমের সমন্বয়ক শামীম পারভেজ, সুন্দরবন মালঞ্চ ট্যুর গাইডের সভাপতি ফারুক হোসেন ও নীলডুমুর ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম।
মূল আলোচনা পর্ব শুরুর আগে বাংলানিউজ টিম গত ১০ দিন সুন্দরবন ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের জেলাগুলোর যেসব স্পট ঘুরে রিপোর্ট করেছেন তার একটি প্রেজেন্টশন তুলে ধরেন সিনিয়র আউটপুট এডিটর জাকারিয়া মন্ডল, চিফ অব করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজ। এ পর্বে বাংলানিউজের রিপোর্টার ও ফটো করেসপন্ডেন্টরা প্রত্যেকে রিপোর্ট ও ছবি নিয়ে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
এরপর সঞ্চালনা করে মূল আলোচনা এগিয়ে নেন ল’ এডিটর এরশাদুল আলম প্রিন্স ও লাইফস্টাইল এডিটর শারমীনা ইসলাম।
সরকার ঘোষিত ‘পর্যটন বর্ষ-২০১৬’ এর শুরু থেকে বাংলানিউজের ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’ কর্মসূচি চলছে। কক্সবাজার, বৃহত্তর সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩ জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের পর এবার সুন্দরবনের পর্যটন নিয়ে এ আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে।
এরআগে ১৫ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবনের ৩ জেলা বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা চষে বেড়িয়ে এখানকার পর্যটনের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে নানা প্রতিবেদন করে বাংলানিউজ টিম। প্রতিবেদনগুলোর ওপরই এ বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আয়োজনের সহযোগিতায় রয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, সুশীলন, বরসা রিসোর্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম, এএফসি হেলথ লিমিটেড, ফরটিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউট, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি খুলনা, নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড ও প্রিমিয়ার সিমেন্ট।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এসএম/এইচএ/এসএনএস/টিআই