ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

কৈখালীর পাঁচ গাঙের মুখে সূর্যের হাতছানি

আবু তালহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
কৈখালীর পাঁচ গাঙের মুখে সূর্যের হাতছানি কৈখালীর পাঁচ গাঙের মুখে সূর্যের হাতছানি/ছবি-ডিএইচ বাদল

কৈখালী (শ্যামনগর) সাতক্ষীরা: ভ্রমণের পথ দুর্গম হলেই বা ক্ষতি কী! সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুর মোড়ে নামলে সাশ্রয়ী খরচে মিলবে সবচেয়ে আরামদায়ক বাহন মোটরসাইকেল।

এর জনপ্রিয়তা দেখলেই আস্থা পাবেন, কৈখালী পৌঁছাতে খুব বেশি ভুগতে হবে না। একই গন্তব্যে যেতে এক মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া ওঠেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চারজন!

এখান থেকে মোটরসাইকেল রিজার্ভ না করে, ভেঙে ভেঙে যাওয়াই ভালো।

দু’জন যাত্রী পেলেই বংশীপুর থেকে ভেটখালী ব্রিজের উদ্দেশে ছেড়ে যায় সিরিয়ালের বাইকগুলো। জনপ্রতি ভাড়া নেবে মাত্র কুড়ি টাকা। সামান্য পথে প্রায় ২৫টা মোটরসাইকেল চলায় অপেক্ষা করতে হয় না। সেখান থেকে ফের মোটরসাইকেল ভাড়া নিতে হবে, খরচ ওই কুড়ি টাকা। পায়েঠেলা ও মোটরচালিত ভ্যান, হেলিকপ্টারও (স্থানীয় ভাষায়) চলে এখানে।

বংশীপুর থেকে রওয়ানা দেওয়ার পরে ধূপখালী এবং ভেটখালী দু’টি ব্রিজ পার হয়ে কৈখালী পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় এক ঘণ্টা। পৃথিবীতে ঘটা করে দেখার বিষয় যা কিছু রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো সূর্যাস্ত। কৈখালীর পাঁচ গাঙের মুখে সূর্যের হাতছানি তাই কৈখালীতে যেতে হয় ঘটা করেই। পিচঢালা পথ ধরে প্রায় আধা ঘণ্টা চলার পরে শুরু হবে মাটির রাস্তা। সেটাও কিছু দূর যাওয়ার পরে ক্রমশ সরু হয়ে এসেছে। তবে কৈখালী পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার সব কষ্ট কোথায় যেনো মিলিয়ে যাবে। স্থানীয়রা বলেন- ‘পাঁচ গাঙের মুখ’। কারণ, এখানে এসে এক হয়েছে চার নদীর পাঁচ মোহনা। পশ্চিমে কালিন্দী, দক্ষিণে মামুনদি, উত্তরে মাদার, পূর্বে মীরগাঙ আর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ দিয়ে ভারতে ঢুকেছে কালিন্দী নদীর একটি শাখা।

কৈখালীতে বন বিভাগের অফিস পার হয়ে ডান দিকে মোড় নিয়েছে নদীর পাড় ধরে মোটরসাইকেল চলার কাঁচা পথ। যতদূর চোখ যায় নদীর পাড়। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বয়ে যাওয়া নদীর ওপারে প্রতিবেশী দেশ ভারত। ওদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমে সুন্দরবনের বুড়ি গোয়ালিনী রেঞ্জ।

জোয়ার-ভাটায় মাটি ক্ষয়রোধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে কালিন্দি নদীর পাড়ে ফেলা ব্লকের ওপর এখানকার স্থানীয় জেলেরা সকাল-সন্ধ্যা মাছ শুঁটকি করে। ফলে সবসময় পরিষ্কার থাকে ব্লকগুলো। এর ওপর বসেই আপনি উপভোগ করতে পারেন সূর্যাস্তের এক অতুলনীয় দৃশ্য। রক্তিম সূর্য এখানে গাছের ফাঁক গলে নদীতে গিয়ে ডোবে। কৈখালীর পাঁচ গাঙের মুখে সূর্যের হাতছানিচাইলে নদীর পাড় ধরে খালি পায়ে হেঁটে চলে যেতে পারেন বহুদূর, তবে ফিরতে হবে এ পথেই। কিছুটা সামনে এগুলেই মিলবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের চৌকি, ফলে নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিন্তে পরিবার নিয়ে ঘুরে দেখতে পারেন কৈখালী। বিকেল হলেই এখানে সময় কাটানো আর আড্ডা জমাতে আসেন সবাই।

গোধূলিতে সূর্য ঢলে পড়তেই জেলেরা চলে যান মাঝ নদীতে পেতে রাখা জালে আটকা পড়া মাছ তুলে আনতে। সবুজ রঙা জলে মিষ্টি রোদ পড়ে ছোট ছোট ঢেউয়ের সঙ্গে ভেঙে যায় আয়নার মতো। সেই চিকচিকে আলো ঢেউয়ে চেপে উঠে এসে দোল খায় কূলে। শীতকালই কৈখালীতে সূর্যাস্ত দেখার উপযুক্ত সময়।

আরও পড়ুন...

** বিপদজনক, দৃষ্টিনন্দন সৈকত কটকা-কচিখালী
** মুহূর্তেই বন্ধু হয়ে ওঠে কটকার হরিণ-বাঁদর
** বিপদের কাণ্ডারী বদর কবুতর
** দুবলার চরে নাম সংকীর্তন-ভাবগীতে খণ্ডকালীন জীবন
** বাঘের পায়ের ছাপ সন্ধানে ওয়াকওয়ে ধরে দেড় কিলোমিটার
** মংলা পোর্টে এক রাত

** বিস্মৃতির অতলে বরিশালের উপকথা​
**‘ জোনাকি’ ভরা বুড়িগঙ্গা

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
এটি/এমজেএফ/জেডএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ