পেছনে সরষে ক্ষেতের অবারিত হলুদে জমে থাকা শিশির কণায় নরম রোদের ঝিলিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই নরম রোদের তেজ যতো বাড়বে, ততো তাড়াতাড়ি শুকোবে বড়াগুলো।
সকালের রাঁধাবাড়া শেষ করে তাই যৌথ পরিবারের সব নারী খোলা রোদে আসন পেতেছে বড়া বানানোর মচ্ছবে। দুপুরের সাংসারিক কাজে ঢুকে পড়ার আগে যতোটা পারা যায় এগিয়ে রাখতে চায় কাজটা। এরই মধ্যে পেতে রাখা চাদরের অর্ধেকেরও বেশী দখলে নিয়েছে সাদা সাদা বড়ার সারি।
এমন ডালের বড়া নিয়ে কালজয়ী এক কবিতা লিখেছেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। যদিও তার জন্ম বরিশালের বাবুগঞ্জে। কিন্তু সাতক্ষীরায় এই দেবহাটার গোড়ায় এসে তাকেই স্মরণ করিয়ে দিলো সাদা বড়া আর সাধাদিধে মানুষগুলো। এখানে বড়া বানাতে ব্যস্ত অন্তত অর্ধডজন মা।
আবু জাফরের কবিতায় এমনই একজন মা বড়া বানিয়ে ছেলের অপেক্ষা করছিলেন মুক্তিযুদ্ধকালে। কিন্তু তার মুক্তিযোদ্ধা খোকা শহীদ হওয়ায় সেই বড়া আর রান্নার সুযোগ হয়নি মায়ের। পাড়া হয়নি কুমড়ো ফুল, সজনে ডাটা। কবিতার ভাষায়-
কুমড়ো ফুলে ফুলে
নুয়ে পড়েছে লতাটা,
সজনে ডাটায়
ভরে গেছে গাছটা.
আর, আমি ডালের বড়ি
শুকিয়ে রেখেছি-
খোকা, তুই কবে আসবি!
কবে ছুটি!
কিন্তু খোকা আসে না। আসে শহীদ খোকার বুক পকেট থেকে পাওয়া রক্তেভেজা ছেঁড়া চিঠি। তারপর শকুনের দল টানে খোকার লাশ।
কুমড়ো বড়া নিয়ে এমন ট্রাজিক কবিতা বুঝি লেখা হয়নি আর কখনোই। এই দেবহাটার গোড়ায় পৌষের রোদে বসে বড়া বানাতে ব্যস্ত গ্রাম্য নারীর দল তো আর আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র সেই কালজয়ী কবিতার কথা জানে না। জানার কথাও নয়।
তবে বড়া বানানোর কৌশল বেশ ভালোই রপ্ত করেছে ওরা। অকপটে জানায়, এ বড়াগুলোতে কুমড়ো ফুল নেই। মসুর ডালের সঙ্গে আছে সাদা কচুর মিশ্রণ। এগুলোর রঙ তাই কুমড়ো বড়ার মতো ঘোলাটে নয়, পুরোই সাদা।
তাদের অভ্যস্ত হাতে বাড়তে থাকে বড়ার সংখ্যা। আকাশ বেয়ে সূর্যটা যেনো মাথার উপরে চলে আসছে। তাতানো রোদে দ্রুত শুকোতে থাকবে বড়াগুলো। তারপর কোনো এক সময় খাবারের পাতে উঠবে মাছ, শুটকি বা সবজির সঙ্গে। অথবা ভর্তা করা হবে ভেজে গুঁড়ো করে। আবহমান বাংলায় এই লোকজ খাবারের বেজায় কদর।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭
জেডএম/