শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) ঘুরে: ঢলু বাঁশের লম্বা সরু চোঙ্গায় বিন্নি চাল। সঙ্গে দুধ, চিনি, নারকেল, চালের গুঁড়া।
এক সময় বাড়িতে জামাই এলে এই চুঙ্গা পিঠার সঙ্গে হালকা মসলায় ভাজা মাছ বিরাণ ও নারিকেল ও কুমড়ার মিঠা বা রিসা পরিবেশন না করতে পারলে যেনো লজ্জায় মাথা কাটা যেতো গৃহকর্তার। কুয়াশা মোড়া রাতে রাতভর চলতো চুঙ্গাপুড়া তৈরি। গিট্টু মেপে ছোট ছোট করে কাটা বাঁশের ওপর জ্বলতো খড়ের আগুন।
সব মিলিয়ে এ পিঠা তৈরির আবহটাই তৈরি করে দিতো উৎসবের আবহ। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এই পিঠা বানাতে ঢলু নামে যে বিশেষ প্রজাতির বাঁশ দরকার হয় তা বিলুপ্ত হতে বসায় চুঙ্গাপুড়ারও আকাল চলছে এখন। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন আর পাহাড় উজাড়ের কারণে ঢলু বাঁশ এখন সহজে পাওয়াই মুশকিল। এমনকি, মৌলভীবাজারের বড়লেখার এই পিঠা তৈরির সুনাম থাকলেও ঢলু বাঁশের আকাল এখন সেখানেও।
শীতকালে তবু কালেভদ্রে দেখা মেলে ঢলু বাঁশের। বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে বলে এই বাঁশ আগুনে পোড়ে না মোটেও। ক্রমাগত তৈলাক্ত তরল নি:সরণ করে টিকে ঢাকে সরু বাঁশের সবুজ শরীর। এমনকি কয়েক ঘণ্টা আগুনে পোড়ার পরও সবুজই থাকে ঢলু বাঁশ। কিন্তু আগুনের ভাপে চোঙ্গার ভেতরে ঠিকই তৈরি হয়ে যায় চুঙ্গাপুড়া।
এক সময় পাহাড়ি আদিবাসিদেরই খাবার ছিলো এই চুঙ্গা পিঠা। কালক্রমে তা সমতলের মানুষের উৎসবে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে ওঠে। চাল ভিজিয়ে নরম করে বাঁশের চোঙ্গায় সেঁধিয়ে পিঠা তৈরি করতে শিখে যায় সব জাতি-ধর্মের মানুষ।
দুধের মালাই বা খেজুরের গুঁড় দিয়ে খেতে দারুণ স্বাদ চুঙ্গাপুড়ার। বড় বড় রুই-কাতলা, বোয়াল, চিতল, পাবদা, কই, মাগুর মাছ হালকা মসলায় ভেজে তৈরি মাছের বিরাণে চুঙ্গা পিঠা খেতে তো আরো মজা।
সেদ্ধ হওয়ার পর যে কোনো দিকে টান দিলেই ছিলকা খুব সহজেই উঠে যায় ঢলু বাঁশের। কয়েক ঘণ্টা পোড়ানোর পরও যেনো কাঁচাই থাকে বাঁশটা। আর ভাপে সেদ্ধ হয়ে ভেতরের বিন্নি চাল তখন রূপ নিয়ে নেয় মোটা মোমবাতির।
কিন্তু ঢলু বাঁশের মতো বিন্নি ধানও এখন চাষ হচ্ছে কম। তাই কদাচিৎ পাওয়া গেলেও চড়া দামে কিনতে হয় চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান দুই উপকরণ। সিলেটের এতিহ্যবাহী এই পিঠা তাই হারিয়েই যেতে বসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬
জেডএম/