ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

অতিথি আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২২ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৭
অতিথি আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইল পরিবেশন-আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইল, ছবি: আসিফ আজিজ

কক্সবাজার থেকে: কলার মোচার লালচে খোলায় ফিশ ফ্রাই। আবার চিকেন ফ্রাই পরিবেশন করা হয়েছে শুকনো নারিকেলের ছিবড়া-মালাসহ অর্ধেক অংশকে বাটির মতো বানিয়ে তাতে কলাপাতা মুড়ে। টেবিলের ওপর যে বাতিটি জ্বলছে সেটিও অভিনব। কলাগাছের ভেতরের সাদাটে বাকল গোল করে মুড়িয়ে তার ভেতর বসানো হয়েছে জ্বলন্ত মোমবাতি। ভেতরে মোহনীয় আলো।

চারপাশ আলোকিত করছে, কিন্তু কোনোভাবেই চোখের জন্য সে আলো বিড়ম্বনার নয়। বরং ভিন্ন রকম ভালোলাগার আবেশে জুড়িয়ে যায় প্রাণ।

রিসোর্টে ঢোকার পর আপ্যায়নেও ভীষণ মুগ্ধতা। বুনোলতার মালায় জবাফুল গেঁথে সে মালা পরিয়ে দেওয়া হলো অতিথিদের গলায়। রিসেপশনে বসার পর দেওয়া হলো গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা ডাব। পাইপে মুখ লাগাতে যাবেন, সেখানেও চমক!পরিবেশন-আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইলবিশ্বজুড়ে যখন প্লাস্টিকের পাইপের (স্ট্র) আধিপত্য, সেখানে মারমেইডে দেওয়া হচ্ছে চিকন বাঁশের পাইপ। কেউ হয়তো ডাব খাওয়ার পর পাইপটি সযত্নে ব্যাগে পুরছেন পরিবেশবান্ধব মারমেইডকে স্মৃতিতে রাখতে।

এতোসব আয়োজনের উদ্দেশ্য কৃত্রিম ও অস্বাস্থ্যকর সব কিছু পরিহার করা। একইসঙ্গে ভিন্ন রকম ভালোলাগা উপহার দেওয়া ট্যুরিস্টদের। আর এটাই কক্সবাজারের অভিজাত মারমেইড বিচ রিসোর্টের স্টাইল।

সবুজ গাছ-গাছালিতে মোড়ানো বাগানের ভেতর দিয়ে হাঁটছেন, সেখানেও মুগ্ধতা। যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই ভিন্নরকমের উপস্থাপনা। রঙিন কাচের বোতলের নিচের অংশ ভেঙে তার ভেতর দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব। আর মুখের ভেতর দিয়ে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক লাইন। এভাবে বিভিন্ন রঙের বোতল সাজিয়ে বানানো হয়েছে ঝাড়বাতি।

পরিবেশন-আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইলআবার কাচের ভাঙা বোতল উল্টো করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছে। ঠিক যেভাবে অর্ধেক ইট মাটিতে পুঁতে সাজিয়ে তোলা হয় ফুলের বাগান। কিংবা ছোট্ট ফুলের গাছের গোড়া নিরাপদ রাখতে যেভাবে ইট মাটিতে গেঁথে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়, সেভাবে এখানে কাজটি করা হয়েছে কাচের পুরনো শিশি উল্টো করে মাটিতে গেঁথে।

টাওয়েল দিয়ে তৈরি করা টব কিংবা ডাস্টবিনই বা কম কিসে। ছিঁড়ে যাওয়া টাওয়েল দিয়ে টব তৈরি হতে পারে, এখানে না এলে তো জানাই হতো না পর্যটক জিসানের। নান্দনিক পরিবেশনের অন্যতম অনুষঙ্গ, ছবি: আসিফ আজিজ অনেকে যখন পুরনো টাওয়েল ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন, মারমেইড তখন সেই টাওয়েল দিয়ে বিশেষ কায়দায় টব বানিয়ে ব্যবহার করছে। অবিশ্বাস্য, কিন্তু মারমেইডে যে এটাই বাস্তবতা। প্রথমে ঢেউটিন দিয়ে ফ্রেম তৈরি করা হচ্ছে। তারপর টাওয়েলটিতে সিমেন্ট-বালি ও কেমিক্যাল মাখিয়ে রোদে শুকানো হয়েছে। আর সিমেন্ট-বালির মিশ্রণে হয়ে উঠেছে মজবুত টব। আবার কোথাও ময়লা ফেলার বিন হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে।

অন্যরা যখন কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে বেসিন কিনে আনছেন, মারমেইড তখন নারিকেল গাছের গুঁড়ির ওপর ভাঙা কড়াই বসিয়ে তা দিয়ে বানিয়ে ফেলেছে বেসিন। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নষ্ট ও ব্যবহার অযোগ্য পরিত্যক্ত জিনিসপত্র রিসাইকেল করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। পরিবেশন-আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইলটিনের পুরনো বালতি ব্যবহার করা হয়েছে রাস্তা আলোকিত করার জন্য। পুরনো বালতিটাকে প্রথমে ছিদ্র করা হয়েছে। তারপর সেটি ঝোলানো হয়েছে উল্টো করে। তার ভেতর দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাল্ব। দুই ফুট উঁচু করে লাগানো এসব বালতির আলো-আঁধারের খেলায় নতুন পরিবেশ দেখা যায় মারমেইডে।

বিশ্বের অন্যতম সেরা এ রিসোর্টটি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উপস্থাপনা নিয়ে হাজির হচ্ছে ট্যুরিস্টদের সামনে। কেউ হয়তো একবছর আগে ঘুরে গেছেন মারমেইড। ফের এলে বদলে যাওয়া মারমেইড দেখে বাড়বে কেবল মুগ্ধতার পারদ। এটা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নয়, নেদারল্যান্ডের এক পর্যটকই এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। ওই নারী পর্যটক মোট ২০ বার ঘুরে গেছেন মারমেইড। আতিথেয়তায় প্রতিবারই নতুন নতুন সংযোজন দেখে এমন মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ট্রিপ অ্যাডভায়সর’র ভিউতে।

মারমেইড শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নয়, সতেজ-টাটকা খাবার পরিবেশনের ক্ষেত্রেও অদ্বিতীয় ও অনন্য। নিজেদের বাগানে অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে (জৈব সার ব্যবহার) ফলানো সবজি ও সতেজ ফল পরিবেশন করা হয় এই রিসোর্টের খাবার টেবিলে।

পরিবেশন-আপ্যায়নের মারমেইড স্টাইলপুরো জায়গার নাম পেঁচার দ্বীপ, সামনে গর্জন তোলা অসীম সমুদ্র। রয়েছে নিরিবিলি, শুদ্ধ ও স্নিগ্ধ পরিবেশে অবকাশ যাপনের চমৎকার সব আয়োজন। সবাইকে ছাড়িয়ে অন্যরকম এক উচ্চতায় পৌঁছে গেছে দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি। সেবা-কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেকগুলো সম্মাননা এখন প্রতিষ্ঠানটির ঝুলিতে। সম্প্রতি এক জরিপে এশিয়ার সেরা রিসোর্টের তালিকায়ও স্থান করে নিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের তীরে গড়ে ওঠা মারমেইড।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০১৭/আপডেট ১৩২৮ ঘণ্টা
এসআই/এএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ