মিনিট পাঁচেকে সাগরের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উড়লেন পাখির মতো। নেমেও এলেন শুরুর ধাক্কা সামলে দারুণভাবে।
এই ওড়াউড়িকে বলে প্যারাসেইলিং। বিশ্বের প্রায় সব দেশের সমুদ্রসৈকতের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি রাইড। পাহাড়ে যেমন জনপ্রিয় প্যারাগ্লাইডিং তেমন সাগরে প্যারাসেইলিং। তবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে এটি খুব পুরনো নয়। মাত্র বছর চারেক আগে সীমিত পরিসরে এর শুরু।
কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্ট থেকে অটোতে ১০ টাকা ভাড়া দরিয়ানগর। এখানে দুটি গ্রুপ প্যারাসেইলিং করছে নিয়মিত। স্যাটেলাইট ভিশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এখানে এ বিশেষ আকর্ষণীয় রাইডটি পরিচালনা করছে দেশ-বিদেশের দক্ষ সব কর্মী-প্রশিক্ষক নিয়ে।
দরিয়ানগর গিয়ে দেখা গেলো টিকিট কাউন্টারে সুপারভাইজর আব্দুল খালেক বসে আছেন তার কর্মীদের নিয়ে। অপেক্ষা করছেন জোয়ারের পানি আরেকটু বাড়ার। পানি আর বাতাস নিয়েই এর যতো খেলা। মালয়েশিয়ার পেনাং বিচে আট বছর প্যারাসেইলিংয়ের কর্মী হিসেবে কাজ করা খালেকের দাবি, তিনিই প্রথম কক্সবাজারে এটি চালু করেছেন। তবে তিনি মালিক নন।
কাউন্টার থেকে দেওয়া তথ্যমতে, ১২ বছরের নিচে, দুর্বলচিত্তের মানুষ কিংবা হার্টের রোগী ছাড়া সবাই নিশ্চিন্তে প্যারাসেইলিং করতে পারেন। তবে আমাদের বাতাসের যে অবস্থা তাতে যিনি চড়বেন তার ওজন ১২০ কেজির মধ্যে হওয়াই ভালো। বাচ্চারা উঠতে পারবে একজন প্রশিক্ষকের সঙ্গে। তিনটি প্যাকেজ আছে এখানে।
১৫শ টাকার নরমাল রাইডে রয়েছে শুধুই ওড়া। ২ হাজার টাকার সুপার রাইডে উড়তে উড়তে একবার সাগরের মধ্যে পা ভিজিয়ে ফের উপরে ওড়ার সুযোগ। আর ২৫শ টাকার সুপার-ডুপার রাইডে পা ভেজানো হয় দুবার। তবে সব রাইডেই সময় প্রায় একই। প্যারাসেইলিং করার আগে অবশ্যেই উড্ডয়নকারীকে একটি বন্ডে সই করতে হয়। তবে আবহাওয়ার কোনো গোলমাল ছাড়া এতে কোনো ঝুঁকি নেই বলেই জানান অভিজ্ঞ খালেক। বলেন, বাতাস বুঝে আমরা তিন ধরনের প্যারাস্যুট ব্যবহার করি। বাতাস বেশি থাকলে ছোট, কম থাকলে বড় বা মাঝারি। আর কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা দুর্ঘটনার জন্য সবসময় একটি স্পিডবোট, একটি জেট স্কি রেডি তাকে। আর উড্ডয়নকারীকে পরিয়ে দেওয়া হয় লাইফ জ্যাকেট। সাড়ে ৪শ মিটার লম্বা দড়ি স্পিডবোটের সঙ্গে বেঁধে তাতে সাগরতীর থেকে প্যারাস্যুট জুড়ে দেওয়া হয়। উড্ডয়নের সময় উচ্চতা থাকে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ ফুট। লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে প্যারাস্যুটের নির্দিষ্ট স্থানে বেল্ট লাগিয়ে তীরে একটু দৌড়ে উড়িয়ে নেওয়া হয়।
ওয়াসি এখানে এসেছেন ঢাকা থেকে। নিজের ব্যবসা আছে। খুব সাবলীলভাবেই তিনি উড্ডয়ন শেষ করেন। নিচে নেমে বাংলানিউজকে বলেন, খুব ভালো লেগেছে। ভয় পাইনি একটুও। তবে আমার স্ত্রী একটু ভয় পেয়েছে। এতে ভয়ের কিছু নেই। শুধু নামার সময় কোন বেল্টটা ধরে টানতে হবে, আর ওড়ার সময় কোনটা ধরে থাকতে হবে সেটা ভালো করে জেনে উড়লেই হয়। পেনাংয়ে কাজ করা মালেক বলেন, এখানে বিদেশি কম, দেশি লোকই বেশি। আমরা ভিডিও কিংবা ছবির ব্যবস্থা শুরু করলেও মানুষ বেশি টাকা দিয়ে প্যারাসেইলিং করতে চায় না। এদিকে আমাদের খরচও অনেক বেশি হয়। মালয়েশিয়ায় যারা এটি করে তাদের প্রায় সবাই বিদেশি। অথচ আমাদের এতো সুন্দর, বড় বিচে লোক কত কম দেখেন।
মূলত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পিক সিজন। এসময় দিনে গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন প্যারাসেইলিং করেন। এপ্রিলের পর নভেম্বর পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ থাকে।
সাগরের উপরের আকাশে উড়তে চাইলে তাই কক্সবাজার এসে মিস করবেন না প্যারাসেইলিং করতে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৭, ২০১৭
এএ