‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ বাংলায় সাংবাদিকতাচর্চার অন্যতম ভিত্তি। যার স্লোগান ছিল ‘গুণালোকপ্রদা দোষ প্রদোষধ্বান্ত-চন্দ্রিকা/রাজতে পত্রিকা নাম গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’।
কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের বাড়িটি দেখছিলাম। ইটের পরে ইট দিয়ে দরজা-জানালা ভরানোর চেষ্টা। শেওলা জমেছে। জীর্ণশীর্ণ টিনের চালা। বিবর্ণ পলেস্তারা। ইত্যাদি দেখে মনটা হু হু করে ওঠে। পরক্ষণে গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। দুই বাংলার সাংবাদিকদের অভিন্ন এ তীর্থস্থানটি অবিকৃত দেখার সৌভাগ্য কতজনের হয়!
কাঙাল হরিনাথের পঞ্চম প্রজন্ম দেবাশীষ মজুমদার আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান দুর্লভ সব স্মৃতিচিহ্ন। দেখালেন ভিটির পাশেই কাঙাল হরিনাথের নামে উপজেলা প্রশাসনের গড়া একটি স্মৃতি পাঠাগারও।
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম। মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই কাঙাল হরিনাথের পদচারণায় ধন্য কুষ্টিয়ায় পর্যটকদের নতুন গন্তব্য হতে পারে ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’র কারখানাটি। হ্যাঁ, কুমারখালী। এমনটি মনে করেন স্থানীয়রা।
তাদের মতে, কুমারখালীতে ১৮৫৫ সালে কাঙাল হরিনাথ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভার্নাকুলার স্কুল। তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্যই। শুরুতে তিনি ‘প্রভাকর’ পত্রিকায় লিখতেন। ১৮৬৩ সালে তিনি ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ মাসিক হিসেবে প্রকাশ করেন। পরে পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক করা হয়। সাপ্তাহিক কাগজটির দাম ছিল ১ পয়সা। ১৮৭৩ সালে নিজগ্রামেই ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’র ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। যা আজও অমলিন।
শুধু সাংবাদিক বা শিক্ষক হিসেবে নয়, কাঙাল হরিনাথ ছিলেন ফকির লালনের অনুরাগী। যখন তিনি সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেন তখন ‘কাঙাল ফকির চাঁদের দল’ নামে পরিচিত ছিল। ‘হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হ’ল’ গানটি তার অসামান্য কীর্তি। তার লেখা বেশ কিছু বইও রয়েছে।
স্থানীয় একজন সাংবাদিক বাংলানিউজকে বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত পর্যটন কেন্দ্র। এ তালিকায় আকর্ষণীয়ভাবে যুক্ত হতে পারত কাঙাল হরিনাথের ভিটিটি। এমন গৌরবের স্থান, তীর্থ ভূমি দুই বাংলায় আর কয়টি আছে? দরকার শুধু উদ্যোগের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭
টিসি