সিরাজগঞ্জ: এক ‘ডলারের’ মূল্য ধরা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ দাম উঠেছে বলে জানিয়েছেন এর মালিক।
এ কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশের মুহূর্তেই যখন জানবেন ডলার মূলত একটি ষাঁড়ের নাম। তখন বিস্ময় কেটে ষাঁড়টি নিয়ে কৌতূহল বাড়বে।
কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে আরাভ অ্যাগ্রো ফার্মে পালন করা হচ্ছে ‘ডলার’ নামে ষাঁড়টি।
মার্কিন মুলকের ব্রাঙ্কাস জাতের এই ষাঁড় সম্প্রতি পশু প্রদর্শনীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ষাঁড়ের মর্যাদা লাভ করেছে। প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের ডলারের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে ৯ জন শ্রমিক।
শনিবার (২৪ জুন) সিরাজগঞ্জ সয়দাবাদ ইউনিয়নের গাছাবাড়ি এলাকায় আরাভ অ্যাগ্রো ফার্মে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন ধরনের ষাঁড় ছাড়াও ছাগল, দুম্বা, মহিষ, গাড়ল পালন করা হচ্ছে।
খামারে প্রায় আড়াইটি ষাঁড় রয়েছে। এরমধ্যে ‘ডলার’ সবচেয়ে বড়। এই ষাঁড়টির উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে ৯ ফুট এবং প্রস্থ প্রায় পৌনে ৩ ফুট।
খামারের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ডলারকে সবুজ ঘাস ছাড়াও খামারে প্রস্তুত করা দানাদার খাবার ও সাইলেজ খাওয়ানো হয়। একজন শ্রমিক নিয়মিত এর দেখাশোনা করেন। এছাড়াও তিনবেলা খাবার খাওয়ানো, গোসল করানো, ঘুম পাড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকেন খামারের আরও ৯ জন শ্রমিক। বিশালাকৃতির এই ষাঁড়টি দেখতে প্রতিদিন খামারে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভিড় করছেন।
মোক্তার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ডলার সারাদেশে একটি আলোচিত গরু। এটি দেখতে ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। দেখে খুব ভালো লাগলো। এতবড় গরু আমি আগে দেখিনি।
স্কুলছাত্র আহসান হাবিব, নুরনবী ও আলিম উদ্দিন বলেন, ডলার আমাদের সিরাজগঞ্জের গর্ব। তাই আমরা ওকে দেখতে এসেছি।
৯ জন শ্রমিক ডলারকে গোসল করানো থেকে শুরু করে তিনবেলা খাবার খাওয়ানোর কাজ করে থাকেন। খামারের অন্যান্য ষাঁড়ের পাশাপাশি ডলারে প্রতি আলাদা যত্ন নেন তারা।
ডলারকে পালনের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক মহরম আলী, আব্দুল খালেক ও জোসনা শেখ বলেন, সকাল সাড়ে ৫টায় গোসল করাই, তারপর সাইলেজ ও দানাদার খাবার দেই। খাবার শেষে আবারও ঘুমায়। সাড়ে ১২টার দিকে আবারও গোসল করাই। তারপর সবুজ ঘাস খাওয়াই। এরপর আবারও ঘুমাতে যায় এটি। বিকেলে ফের সাইলেজ ও দানাদার খাবার খাওয়ানোর পর ঘুমাতে যায়।
আরাভ অ্যাগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের খামারে আড়াইশোটি ষাঁড় রয়েছে। এর মধ্যে ১২০টি ষাঁড় এ বছর ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭০টি ষাঁড় বিক্রি করা হয়েছে। ডলার সারাদেশের আলোচিত একটি ষাঁড়। বাংলাদেশ পশু প্রদর্শনী মেলায় এ ষাঁড়টি দেশের দ্বিতীয় ও সিরাজগঞ্জের সর্ববৃহৎ ষাঁড়ের স্থান লাভ করেছে। এ ছাড়াও বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে মহিষ, তুরস্কের দুম্বা, পাকিস্তানি তোতাবেরি ছাগল, দেশি ছাগল ও গাড়ল।
তিনি বলেন, ৯ মাস আগে নাটোর থেকে ডলারকে কিনে আনা হয়। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার খাবার খাওয়ানো হচ্ছে একে। প্রায় ১৩০০ কেজি ওজনের এ ষাঁড়টির দাম চাওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত গ্রাহকেরা ২০ লাখ টাকা দাম বলেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারে গিয়ে ডলারের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় টিকা প্রদানসহ যাবতীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আরাভ অ্যাগ্রো ছাড়াও জেলার বিভিন্ন খামারেই নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
তিনি বলেন, এ বছর সিরাজগঞ্জে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯৬টি গবাদিপশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি, মহিষ ১ হাজার ৪০৫টি, ছাগল ১ লাখ ৫৫ হাজার ও ভেড়া ৬১ হাজার ১৩৩টি। জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬০ হাজার। বাকি ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৯৬টি পশু সারা দেশে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এসএএইচ