ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

হাটছালা এখন যেন ‘উচ্ছের গ্রাম’

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
হাটছালা এখন যেন ‘উচ্ছের গ্রাম’

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫০ হেক্টর জমিতে উচ্ছের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামেই উচ্ছের আবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে।

 

এতে বদলে গেছে গোটা গ্রামের চিত্র। হাটছালা এখন যেন ‘উচ্ছের গ্রাম’। সেই সঙ্গে সচ্ছলতা ফিরেছে হাটছালা গ্রামের শতাধিক পরিবারের।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় জানায়, হাটছালা গ্রাম থেকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ মণ উচ্ছে বাজারজাত করা হচ্ছে। তাদের দেখাদেখি পাশের কাশিমাড়ি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ও শংকরকাটিসহ কয়েকটি গ্রামেও বেড়েছে উচ্ছের আবাদ।

ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, উচ্ছেয় ভরে উঠেছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। চাষিরা জমি থেকে উচ্ছে তুলছেন।  

হাটছালা গ্রামের কৃষক বিশ্বজিৎ গায়েন জানান, তিন বিঘা জমিতে উচ্ছে চাষ করেছেন তিনি। এখন প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি উচ্ছে বিক্রি করছেন।

কৃষক পতিরাম মণ্ডল বলেন, উচ্ছে চাষ আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আগে এমনও দিন গেছে, ছয় সদস্যের সংসার চালানোসহ সন্তানদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারতাম না। কিন্তু এখন আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। আমাদের গ্রামের শতাধিক পরিবার এখন বেশ সচ্ছল।

অনুপ কুমার মণ্ডল বলেন, আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে উচ্ছের আবাদ রয়েছে। শুরুতে ব্যাপারিরা প্রতি কেজি উচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনেছেন। বর্তমানে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন ব্যাপারিরা গাড়ি ভরে উচ্ছে কিনে নিয়ে যান। ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন পাইকাররা।

কৃষক রাজু মণ্ডল জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে হাটছালা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে উচ্ছে বেচাকেনার হাট বসে। বাইরের ব্যাপারিরা এখান থেকেই পাইকারি দরে উচ্ছে কিনে নিয়ে যান। যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় যায় হাটছালা গ্রামের উচ্ছে।

উচ্ছে ক্ষেতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন সুচিত্রা রানি। তিনি বলেন, ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ কেজি উচ্ছে তোলা যায়। এজন্য আমরা দিনে ১০০ টাকা মজুরি পাই। প্রতিদিন ক্ষেতের একেকটি অংশ থেকে উচ্ছে তোলা হয়। সেই হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত থেকে প্রতিদিনই উচ্ছে তোলা যায়।

তিনি আরও জানান, উচ্ছের বীজ বপন থেকে শুরু করে পরিচর্যা, তোলা ও বাজারজাত করতে নারীদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর ধরে উচ্ছে কেনা-বেচা করছি। আমরা খুচরা কিনে দূরদূরান্তের ব্যাপারিদের কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করি।  

সাতক্ষীরা শহর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী জানান, তিনি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মণ উচ্ছে কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান।

শ্যামনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা বলেন, উচ্ছে কাঁচা তরকারি হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। পাশাপাশি এর ওষুধি গুণও রয়েছে। উচ্ছেতে ডায়াবেটিস ও বসন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। উচ্ছে চাষে বেশি লাভ এবং মাটি ও পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ভুরুলিয়া ইউনিয়নের হাটছালা গ্রামের কৃষকেরা উচ্ছে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। উচ্ছে চাষের আওতা দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।